ভূমিকম্প কি , কেন হয়, সিলেট কেন ঝুকিপূর্ণ এবং এ থেকে নিজেকে রক্ষার করণীয় কি ?
বিশেষ প্রতিবেদনঃ
ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এই রূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে।
কম্পন-তরঙ্গ থেকে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তা ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই তরঙ্গ ভূ-গর্ভের কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে উৎপন্ন হয় এবং উৎসস্থল থেকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেণ্ড থেকে এক/দু-মিনিট স্থায়ী হয়। মাঝে মাঝে কম্পন এত দুর্বল হয় যে, তা অনুভব করা যায় না। কিন্তু শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে।
সাধারণ জ্ঞানে ভূমিকম্প শব্দটি দ্বারা যে কোন প্রকার ভূকম্পন জনিত ঘটনাকে বোঝায় – সেটা প্রাকৃতিক অথবা মনুষ্য সৃষ্ট যাই হোক না কেন। বেশিরভাগ ভূমিকম্পের কারণ হল ভূগর্ভে ফাটল ও স্তরচ্যুতি হওয়া কিন্তু সেটা অন্যান্য কারণ যেমন অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিধস, খনিতে বিষ্ফোরণ বা ভূগর্ভস্থ নিউক্লিয়ার গবেষণায় ঘটানো আণবিক পরীক্ষা থেকেও হতে পারে। ভূমিকম্পের প্রাথমিক ফাটলকে বলে ফোকাস বা হাইপোসেন্টার। এপিসেন্টার হল হাইপোসেন্টার বরাবর মাটির উপরিস্থ জায়গা।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল কোথায় ?
পৃথিবীর অভ্যন্তরে যেখান থেকে ভূকম্প-তরঙ্গ উৎপন্ন হয়, তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলে। এই কেন্দ্র থেকে কম্পন ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গের মাধ্যমে সব দিকে ছড়িয়ে পড়ে। শিলার পীড়ন-ক্ষমতা সহ্যসীমার বাহিরে চলে গেলে শিলায় ফাটল ধরে ও শক্তির মুক্তি ঘটে। তাই প্রায়শই ভূমিকম্পের কেন্দ্র চ্যুতিরেখা অংশে অবস্থান করে। সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৬ কিমি.-র মধ্যে এই কেন্দ্র অবস্থান করে। তবে ৭০০ কিমি. গভীরে গুরুমণ্ডল (Mantle) থেকেও ভূ-কম্পন উত্থিত হতে পারে।
ভূমিকম্প কি কি কারণে হয় ?
ভূপৃষ্ঠজনিতঃ
আমাদের ভূ -পৃষ্ঠ অনেকগুলো প্লেট-এর সমন্বয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলো একটি আরেকটির থেকে আলাদা থাকে ফল্ট বা ফাটল দ্বারা। এই প্লেটগুলোর নিচেই থাকে ভূ-অভ্যন্তরের সকল গলিত পদার্থ। কোনও প্রাকৃতিক কারণে এই গলিত পদার্থগুলোর স্থানচ্যুতি ঘটলে প্লেটগুলোরও কিছুটা স্থানচ্যুতি ঘটে। এ কারণে একটি প্লেটের কোনও অংশ অপর প্লেটের তলায় ঢুকে যায়, যার ফলে ভূমিতে কম্পন সৃষ্টি হয়। আর এই কম্পনই ভূমিকম্প রূপে আমাদের নিকট আবির্ভূত হয়।
আগ্নেয়গিরিজনিতঃ
কখনো কখনো আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ও গলিত লাভা উৎক্ষিপ্ত হবার কারণে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে।
শিলাচ্যুতিজনিতঃ
কখনো কখনো পাহাড় কিংবা উচু স্থান থেকে বৃহৎ পরিসরে শিলাচ্যুতিজনিত কারণে ভূমিকম্প হতে পারে।
ভূপাতঃ
কোনো কারণে পাহাড়-পর্বত হতে বৃহৎ শিলাখণ্ড ভূত্বকের ওপর ধসে পড়ে ভূমিকম্প হয়। সাধারণত ভাঁজ পর্বতের নিকট অধিক ভূমিকম্প হয়।
তাপ বিকিরণঃ
ভূত্বক তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হয়ে পড়লে ফাটল ও ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে ভূমিকম্প হয়।
ভূগর্ভস্থ বাষ্পঃ
নানা কারণে ভূগর্ভে বাষ্পের সৃষ্টি হয়। এই বাষ্প ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে তা ভূত্বকের নিম্নভাগ ধাক্কা দেয়; ফলে প্রচণ্ড ভূকম্পন অনুভূত হয়। এবং ভূমিকম্প হয়।
হিমবাহের প্রভাবেঃ
কখনো কখনো প্রকাণ্ড হিমবাহ পর্বতগাত্র হতে হঠাৎ নিচে পতিত হয়। এতে ভূকম্প কেঁপে ওঠে এবং ভূমিকম্প হয়।
বাংলাদেশে কেন ভূমিকপের ঝুঁকি বেশি?
বাংলাদেশের ভূমিকম্প বলতে আসলে বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকার ভূমিকম্পকে বোঝায়। কারণ বাংলাদেশ আসলে ভারত ও মায়ানমারের ভূঅভ্যন্তরের দুটি ভূচ্যুতির (faultline) প্রভাবে আন্দোলিত হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং বার্মার (মায়ানমারের) টেকটনিক প্লেটের মধ্যে অবস্থান করছে। ভারতীয় এবং ইউরেশীয় প্লেট দুটি (১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে) দীর্ঘদিন যাবৎ হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে আছে, অপেক্ষা করছে বড় ধরনের নড়াচড়ার, অর্থাৎ বড় ধরনের ভূ-কম্পনের। বাংলাদেশে ৮টি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায় রয়েছে, যথা: বগুড়া চ্যুতি এলাকা, রাজশাহীর তানোর চ্যুতি এলাকা, ত্রিপুরা চ্যুতি এলাকা, সীতাকুণ্ড টেকনাফ চ্যুতি এলাকা, হালুয়াঘাট চ্যুতির ডাওকী চ্যুতি এলাকা, ডুবরি চ্যুতি এলাকা, চট্টগ্রাম চ্যুতি এলাকা, সিলেটের শাহজীবাজার চ্যুতি এলাকা (আংশিক-ডাওকি চ্যুতি) এবং রাঙামাটির বরকলে রাঙামাটি চ্যুতি এলাকা।
প্রাকৃতিকভাবেই কার্বন চক্রের প্রভাবে ভূমিকম্প হয়ে থাকে, বাংলাদেশেও তার ব্যত্য়য় হয় না। এদেশের ভিতরে ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বিগত প্রায় ২৫০ বছরের ভূমিকম্পের নথিভুক্ত তালিকা পাওয়া যায়। এ তালিকা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে ১০০’রও বেশি ভূমিকম্প; তন্মধ্যে ৬৫টিরও বেশি ঘটেছে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের পরে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিগত ৩০ বছরে (পরিপ্রেক্ষিত ২০০৪) ভূমিকম্প সংঘটনের মাত্রা বেড়েছে।
গতকাল থেকে সিলেটে ঘন ঘন স্বল্প মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে। মতবিরোধ থাকলেও অনেক ভূতাত্ত্বিক ছোট ছোট ভূমিকম্প সংঘটন বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে উল্লেখ করেন। অতীতের এসব রেকর্ডকে প্রাধান্য দিয়ে গবেষকরা জানিয়েছেন যে কোনও সময় বাংলাদেশে রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে।
সিলেট কেন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলেট একদিকে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ‘ডাউকি ফল্ট’ থেকে মাত্র ২শ’ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অন্যদিকে ‘শাহবাজপুর ফল্ট’ও কাছাকাছি। যে কারণে সিলেটের জন্য ভূমিকম্পের ঝুঁকি খুব বেশি। ফলে এখানে ৬ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হবে আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণে এ আশঙ্কা আরো বাড়ছে।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল বিভাগের অধ্যাপক জহির বিন আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন যা হওয়ার তা হচ্ছে না। আর সিলেটের আশপাশে ভূমিকম্প উৎপত্তির ফল্ট থাকায় এ অঞ্চলটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এর আগে ২৫ মে ৫ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। যার উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৩৬৬ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অর্থাৎ সিলেটের পূর্বে। ১৪ এপ্রিলের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের ডাউকি ফল্টের পার্শ্ববর্তী জৈন্তাপুর এলাকায়। এছাড়া ২৭ জানুয়ারি ৪ দশমিক ১ ও পরদিন ৪ দশমিক ৯ মাত্রায় ভূকম্পন অনূভত হয়।
ভূমিকম্প উদ্বেগের না হলেও এর আগেরগুলো অশনি সংকেত ছিল বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমেদ চৌধুরী। তিনি জানান, গত ২৫ মে’র ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ২৭৯ কিলোমিটার পূর্বে। যা সিলেটে থেকে প্রায় ৩শ’ কিলোমিটারের বেশি দক্ষিণ-পূর্বে। এটি সিলেটের জন্য তেমন ঝুঁকিপূর্ণ না।
আবহাওয়াবিদ সাঈদ বলেন, এ অঞ্চলে সাধারণত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ও মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে ভূকম্পন হয়ে থাকে। তবে ১৯১৮ সালে উৎপত্তিস্থল হিসেবে সিলেট অঞ্চলে ভূকম্পন অনুভূত হয়েছিল। রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল সিলেটের গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার মধ্যবর্তী স্থান থেকে মৃদু ভূকম্পনের উৎপত্তি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ডাউকি ফল্ট হচ্ছে বাংলদেশের উত্তর-পূর্ব কোণের সিলেট অঞ্চলে। কিন্তু এ ফল্টের অবস্থান সিলেটের গোয়াইনঘাট থেকে ২৪ কিলোমিটার ছাড়িয়ে ভারতের অভ্যন্তরে। তবে সিলেটের অভ্যন্তরে ৩ দশমিক ৫ বা ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ভয়াবহ অবস্থা হবে।
করণীয় কি ?
ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগ থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষার প্রয়োজনে সম্ভাব্য ভূমিকম্প মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে নিচের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
১. জনসচেতনতা বৃদ্ধি
২. ভূমিকম্প মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি
৩. ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্গঠন কর্মসূচি ইত্যাদি
১. ভূমিকম্পে দালানকোঠার নিচে পড়ে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। সম্ভাব্য ভূমিকম্পের প্রস্তুতি ও ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি একান্ত প্রয়োজন। ভূমিকম্পে জনসাধারণের করণীয় সম্পর্কে যেমন: ভূমিকম্পের আগে, ভূমিকম্পের সময় ও পরে কী করা উচিত, সে বিষয়ে অবহিত করা। তা ছাড়া ভূমিকম্প কী, কেন হয় ও এর প্রভাব; পরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ না করলে, প্রয়োজনীয় বিল্ডিং কোড মেনে না চললে কী ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, সে বিষয়ে সচেতন করা। নিচে ভূমিকম্পের আগে, পরে ও ভূ-কম্পনের সময় সাধারণের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ভূমিকম্পের আগে কি করা উচিত?
(ক) বিদ্যুৎ ও গ্যাসলাইন বন্ধ করার নিয়মকানুন পরিবারের সবার জেনে রাখা।
(খ) ঘরের ওপরের তাকে ভারী জিনিসপত্র না রাখা, পরিবারের সব সদস্যের জন্য হেলমেট
রাখা।
(গ) পরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণের জন্য বিল্ডিং কোড মেনে চলা। ভবনের উচ্চতা ও লোডের
হিসাব অনুযায়ী শক্ত ভিত দেওয়া, রেইন ফোর্সড কংক্রিট ব্যবহার, পাশের বাড়ি থেকে
নিরাপদ দূরত্বে বাড়ি নির্মাণ, গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন নিরাপদভাবে স্থাপন করা। গর্ত ও নরম
মাটিতে ভবন নির্মাণ না করা।
ভূমিকম্প চলাকালে কি করবেন ?
(ক) নিজেকে ধীরস্থির ও শান্ত রাখা, বাড়ির বাইরে থাকলে ঘরে প্রবেশ না করা।
(খ) একতলা দালান হলে দৌড়ে বাইরে চলে যাওয়া। তা ছাড়া বহুতল দালানের ভেতরে
থাকলে টেবিল বা খাটের নিচে চলে যাওয়া ও কাচের জিনিসের কাছ থেকে দূরে থাকা।
লিফট ব্যবহার না করা।
(গ) উঁচু দালানের জানালা বা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নামার চেষ্টা না করা। ভূমি ধসে পড়ার
সম্ভাবনা আছে এমন উঁচু ভূমি থেকে দূরে থাকা।
(ঘ) ভূমিকম্পের সময় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা।
ভূমিকম্পের পরে কি করবেন ?
(ক) ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে ধীরস্থির ও শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে বের হওয়া।
(খ) রেডিও টেলিভিশন থেকে জরুরি নির্দেশাবলি শোনা এবং তা মেনে চলা।
(গ) বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন লাইনে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না, পরীক্ষা করে নেওয়া ও প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(ঘ) সরকারি সংস্থাগুলোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করা।
(ঙ) উদ্ধারকাজে নিজেকে নিয়োজিত করা। অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। যোগাযোগব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগিতা করা।
২। ভূমিকম্প বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের পূর্বপ্রস্তুতি থাকা আবশ্যক। সে জন্য সম্ভাব্য ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়ে সঠিকভাবে নিজেকে সেবায় মনোনিবেশ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ সব প্রতিষ্ঠানের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। বর্তমান কাঠামোতে ভূমিকম্পবিষয়ক সার্বিক প্রস্তুতি অত্যন্ত নগণ্য বিধায় পূর্বপ্রস্তুতির উন্নয়ন একান্ত আবশ্যক।
৩। ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ কর্মসূচি নিশ্চিতকরণ। উদ্ধার কর্মসূচির অভাবে অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে থাকে। পূর্বপ্রস্তুতি, দক্ষ প্রশিক্ষণ, উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী নেটওয়ার্ক উদ্ধার কর্মকাণ্ডের মূল চাবি। তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ/ওষুধ, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা। উল্লেখ্য, ভূমিকম্পের দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন ফায়ার ব্রিগেড, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিমানবাহিনী, রেড ক্রিসেন্ট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি চমৎকার সম্পর্ক থাকা জরুরি।
বাংলাদেশ প্লেট বাউন্ডারির অন্তর্ভুক্ত না হয়েও দুর্বল অবকাঠামো, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, প্রয়োজনীয় বিল্ডিং কোড মেনে না চলার কারণে এবং যত্রতত্র ভবন ও স্থাপনা নির্মাণের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের একটি অন্যতম ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। যেহেতু ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, একে থামিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সেহেতু ভূমিকম্প পূর্বপ্রস্তুতি ও ক্ষয়ক্ষতি রোধে ভূমিকম্প-পরবর্তী শক্তিশালী এবং কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই এই দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি থাকা জরুরী ।