ভোটারদের প্রতি ‘খালেদার বার্তা’
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃভোটের আগের দিন কারাগার থেকে দলের নেতাকর্মী, ধানের শীষের সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের উদ্দেশে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন- ‘আগামীকাল (আজ রোববার) আপনাদের সুযোগ আসবে স্বৈরশাসকদের হাত থেকে মুক্তিলাভের, দেশকে মুক্ত করার। সকল হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দলে দলে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আপনাদের এক একটি ভোট নিশ্চিত করতে পারে জনগণের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।
শনিবার বিকাল থেকেই পালাক্রমে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবেন। ফজরের নামাজ পড়েই ভোটের লাইনে দাঁড়ানোর জন্য আপনাদের আমি অনুরোধ করছি। ভোট দিয়ে ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে থাকবেন। আপনারা শুধু সাধারণ ভোটারই নন ভোটারদের অতন্দ্র প্রহরী।’ গতকাল সকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে কারাবন্দি চেয়ারপারসনের বার্তাটি পড়ে শোনান।
বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের পোলিং এজেন্টদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেছেন- ‘ভোট শুরুর আগে ব্যালট বাক্স পরীক্ষা করবেন। ফলাফল না নিয়ে আপনারা ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করবেন না।
আপনারা ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করবেন। ভোটগ্রহণ শেষে ভোট গণনা করে কে কত ভোট পেলো তা নিশ্চিত না হয়ে সাদা কাগজে কেউ সই করবেন না। কোনো অবস্থাতেই প্রিজাইডিং অফিসারের সই ছাড়া সই করবেন না। ফলাফল নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যাবেন।’ রিজভী বলেন, রাত পোহালেই নির্বাচন। অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি বরখেলাপ করে জনগণের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে বিশ্বাসঘাতকতা করে ক্ষমতাসীনরা জবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। আর এ জন্য তাদের সামনের বাধাগুলো সরিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি। প্রথমে তারা সবচেয়ে বড় বাধা মনে করেছে ‘গণতন্ত্রের মা’ খালেদা জিয়াকে। অন্যায়ভাবে তাকে বন্দি করা হয়েছে। বন্দি করে এখন নানাভাবে জুলুম করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা তখনই বলেছিলাম- নির্দোষ খালেদা জিয়াকে কারান্তরীণ করা ছিল একতরফা নির্বাচনের পূর্বাভাস। তার বিপুল জনপ্রিয়তাকেই ভয় পেয়েছে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী। সে জন্যই নির্বাচনী মাঠে মোকাবিলা করার সাহস না পেয়ে তাকে বন্দি করা হয়েছে। বন্দি করার পর তিনি জনগণের কাছে ‘গণতন্ত্রের মা’ হিসেবে সমাদৃত হচ্ছেন। আর এতেই সরকার আরো হিংস্র হয়ে উঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর চালাচ্ছে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতা। ভোটারদের প্রতি আহ্বান করে রিজভী বলেন, ধানের শীষের নেতাকর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের বলতে চাই- সকল প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জনগণ অগণতান্ত্রিক শক্তি দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধ করা শুরু করেছে।
জনগণের শক্তির কাছে দুর্বৃত্তরা পরাজিত হবেই- এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। তিনি বলেন, ভোটার ও ধানের নেতাকর্মী-সমর্থকদের আহ্বান জানাবো- আগামীকাল (আজ) আলো আসবেই। ধানের শীষের প্রতীক স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রতীক, নিপীড়িত মানুষের প্রতীক, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতীক, আবেগ ও প্রত্যাশার প্রতীক, উন্নয়ন-শান্তি-উন্নয়ন, অগ্রগতির প্রতীক, দুঃশাসন থেকে মুক্তির প্রতীক। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, ‘এদেশ কাড়তে যেই আসুক, আমরা সাহসে বেঁধেছি বুক, আমরা নইকো ভীরুর জাত, দেবো নাকো হতে দেশ বেহাত।’ রিজভী আহমেদ আরো বলেন, কণ্ঠস্বর কাটপিস করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
বাংলা ইনসাইডারসহ কিছু কিছু ওয়েব পেজ ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সেখানে আমরা মন্তব্য তুলে দিচ্ছে যে দলের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে, মহাসচিব এই করেছেন। এই সমস্ত কথা শুধু মিথ্যাই নয়, সম্পূর্ণভাবে বিভ্রান্তি তৈরির জন্যই ক্ষমতাসীনরা এসব করছে। রিজভী বলেন, আজকে আগেও বলেছি, আবারো বলছি যে, আমাদের ওপর যে অত্যাচার-নিপীড়ন-নিষ্ঠুরতা এর মধ্যে আমাদের দিনযাপন করতে হচ্ছে। আমি বলেছি, দুঃখ দিনের বন্ধন এটা অত্যন্ত দৃঢ় হয়।
আমাদের মধ্যে ঐক্য সবচাইতে দৃঢ়। কারণ আমরা উৎপীড়নের মধ্যে, নিষ্ঠুরতার মধ্যে দিনযাপন করছি। সুতরাং এসব চিহ্নিত পোর্টাল ও ফেসবুকে যেসব লেখা আসবে তার ব্যাপারে আপনারা সাবধান থাকবেন, সতর্ক থাকবেন। সারা দেশে শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃতদের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, শুক্রবার একদিনেই বিভিন্ন জেলায় বানোয়াট মামলা দায়ের হয়েছে ৫৯টি এবং গ্রেপ্তার হয়েছে ১ হাজার ১৭৭ জন। রিজভী বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে শুধু বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার আহাজারি নয়; ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরু, হুমায়ুন কবির পারভেজদের সন্তান-ভাইবোন-বাপ-মায়ের গুমরে ওঠা কান্নাই নয়- অবৈধ শাসকগোষ্ঠী গোটা দেশটাকেই অনাচার-অবিচার-লুণ্ঠনের অভয়ারণ্য করে তুলেছে।
রক্তাক্ত হামলায় সারা দেশকে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছে। আগের রাতে ব্যালটে নৌকা মার্কায় সিল মেরে রাখার পরিকল্পনাসহ নানামুখী নীলনকশা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চলছে। তবুও ভোটার, ধানের শীষের সমর্থকদের দলের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাবো- আগামীকাল (রোববার) আলো আসবেই। তাই ধানের শীষের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের বলতে চাই- সব প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, সহ-স্বাস্থ্য সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক উপস্থিত ছিলেন।