ভয়ের জয়

Spread the love

সাইদুল ইসলাম, লন্ডনঃ  

বলা হয়ে থাকে, একনায়কতান্ত্রিক শাসকদের এক হাতে থাকে উপহার, আরেক হাতে লাঠি। যদি আপনি শাসকদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হন, তাহলে আপনার জন্য থাকবে উপহার। আর যদি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন, তাহলে জুটবে শাস্তি। তাঁরা জনগণকে নিজেদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করতে বাধ্য করে। শাস্তির খড়গ মাথার ওপর ঝুলন্ত অবস্থায় থাকায় মানুষ নিজেও অনুগামী হয়, অন্যকেও হতে প্রভাবিত করে। শাসকেরাই ঠিক করে দেয়—মানুষ কোনটিকে সঠিক ভাববে, আর কোনটিকে ভুল। এটা হয়তো সাধারণ জনগণের বেলায় মেনে নেয়া যেতে পারে। তাই বলে যারা কলম ধরেন, সেই জাতির বিবেক খ্যাত সাংবাদিক, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম সরকারের ভয়ে কাবু হয়ে একই ভূমিকা পালন করবে? এটা ভাবা যায়?  

আমরা জানি কলম নিতান্তই একটি জড় পদার্থ। কিন্তু  এটিই বিশ্বের সকল পথের সকল মতের মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় অস্ত্র। পারমানবিক থেকে শুরু করে এযাবৎকালে যত অস্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে তার সব’কটি  নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে, রয়েছে বিতর্ক এবং এ সকল অস্ত্র যথেষ্ট ব্যায় সাপেক্ষও। বর্তমান পৃথিবীতে যত দামী অস্ত্র আবিষ্কৃত হোক না কেন, সকল অস্ত্রকে মোকাবেলায় পাঁচ টাকার একটি কলম ই যথেষ্ট। 

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই কলম যারা ধরেন তারা ভয় পেয়ে গেছেন। সরকারের একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় তারা কাবু। সরকারের কঠিন  সিদ্ধান্তে কিংবা ব্যাক্তিস্বার্থ চরিতার্থে তারা ক্ষমতার সামনে  নতজানু। সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ্য বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মত করে জনগনের নয়, সরকারের আস্থাভাজন হতে সেল্ফ সেন্সরশিপ গলে পরেছেন। তারা লিখতে বসলে চিন্তা করেন কোন শব্দ বা অক্ষর ক্ষমতাওয়ালাদের বিপক্ষে যাবে আর কোন শব্দ ক্ষমতাসীনদের আহ্লাদিত করবে। লিখার পরেও হীনমন্যতায় ভোগেন আমার লেখা কি সরকারকে বিব্রত করবে?  কিংবা ব্যাক্তিগত চাওয়া পাওয়ার হিসেবে এই লেখা বাধা হয়ে দাঁড়াবে? সঠিক ও সত্যকে পেছনে ফেলে  তারা অনুগ্রহ লাভের আশায় কিংবা সমূহ বিপদ এড়িয়ে চলার তাগিদে কলম চালান।  একই ভাবে ভয়ের কথা বলে পরিচিত অপরিচিতদের নিরুৎসাহিত করে সত্য লেখা ও বলা থেকে বিরত রাখেন। যে দু’একজন সত্য বলার বা লেখার চেষ্টা করেন, তখন তাঁর রাজনৈতিক দর্শন বা উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে এসে তাকে হেনস্তা করার পাশাপাশি মূল সত্যকে ছাইচাপা দেন। কেউবা আবার খুঁড়া যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এসব সাংবাদিকের কাজ নয়। আবার দ্রুব সত্যকেগুলোকে অস্বীকার করার সুযোগ না থাকায় ইনিয়ে বিনিয়ে তবে, হ্যাঁ, কিন্তু এ জাতীয় শব্দের আশ্রয় নিয়ে বিষয়টিকে হালকা করার চেষ্টা করেন। ইতিহাসের মহাপুরুষদের সাহস-সংগ্রামের কথা লিখতে গিয়ে এই তারাই দিস্তার পর দিস্তা কাগজ খরচ করলেও সাহসী মহাপুরুষদের থেকে নূন্যতম সাহস সঞ্চয় তাদের কপালে জুটে না। কালো কালি দিয়ে সাদা কাগজে নির্ভীক শব্দ লিখতে পারে বটে তবে তারা মোটেও নির্ভীক নয়। আজকের সমাজে এরা ভীরু, কাপুরুষ, নামে পরিচিতি পেয়েছে। একসময়কার পাকিস্তানের পা চাটা গোলামের মত এরা আজ ক্ষমতার গোলাম। তবে এতে তাদের কিছুই যায় আসে না। দিন শেষে মিন্টো রোডে মন্ত্রী পাড়ার কোন উপ কিংবা প্রতিমন্ত্রীর সাথে দাঁত খিলিয়ে সেলফি তুলে ভূলে যায় তারা জাতির বিবেক । বরং আত্নসম্মানের বিনিময়ে গনভবনে সংবাদ সম্মেলনে যাওয়ার পাস ভাগিয়ে নিতে পারলেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে ক্ষমতার পাশে দাড়িয়ে তোলা একখানা ছবি  ফেসবুকে সাঁটতে পারাই যেন তাদের কাছে মহাকাশ জয়।   


Spread the love

Leave a Reply