মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশে সেনা মোতায়েন, চৌঠা এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি, অফিস বন্ধ
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সকল সরকারি অফিস চৌঠা এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ এই সময়ে সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
কাঁচাবাজার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও হাসপাতালসহ জরুরি সেবা বিভাগগুলো এই ঘোষণার আওতায় থাকবে না।
সেই সঙ্গে মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। তারা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করবেন।
একটি সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
২৯শে মার্চ থেকে দোসরা এপ্রিল পর্যন্ত সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। তার সামনে পেছনে ২৬শে মার্চের ছুটি ও নিয়মিত ছুটি মিলে চৌঠা এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি হচ্ছে।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে
সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
প্রথম
২৬শে মার্চের সরকারি ছুটির সঙ্গে ২৭ ও ২৮ সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে। তার সঙ্গে মিলিয়ে ২৯শে মার্চ থেকে দোসরা এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে চৌঠা এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকছে।
তবে কাঁচাবাজার, হাসপাতাল, ঔষধের দোকানসহ জরুরি সেবার ক্ষেত্রে এগুলো প্রযোজ্য হবে না।
জনসাধারণকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, তারা যেন এই সময় খাদ্যদ্রব্য, ঔষধ ক্রয়, সৎকারের মতো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনভাবেই বাড়ির বাইরে বের না হন।
দ্বিতীয়
এই সময়ের মধ্যে যদি কোন অফিস-আদালতের কার্যক্রম করার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে তাদের সেটি অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে যারা প্রয়োজন মনে করবে, শুধুমাত্র তারাই অফিস খোলা রাখবে।
তৃতীয়
গণপরিবহন চলাচল সীমিত থাকবে। জনসাধারণকে যতটা সম্ভব গণপরিবহন পরিহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
যারা জরুরি প্রয়োজনে গণপরিবহন ব্যবহার করবেন, তাদের অবশ্যই করোনাভাইরাস মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেই গণপরিবহন ব্যবহার করতে হবে।
গাড়িচালক ও সহকারীদের অবশ্যই গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
চতুর্থ
জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় এই ছুটিকালীন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিতভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশনা দেবে।
পঞ্চম
২৪শে মার্চ মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোয় সশস্ত্র বাহিনী জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য নিয়োজিত থাকবে। জেলা ম্যাজিস্টেটসহ তাদের নিজ নিজ এলাকার সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডারদের কাছে চাহিদাপত্র দিয়ে সহায়তা গ্রহণ করবেন। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করবে সেনাবাহিনী।
ষষ্ঠ
করোনাভাইরাসের কারণে কোন নিম্ন আয়ের ব্যক্তি যদি স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম হন, তাহলে সরকারি ঘরে ফেরা কর্মসূচীর মাধ্যমে তারা নিজ নিজ গ্রামে গিয়ে বসবাস করতে পারবেন। এজন্য জেলা প্রশাসকরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সপ্তম
ভাসানচরে একলক্ষ লোকের আবাসন ও জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সময়ে দরিদ্র আয়ের কোন ব্যক্তি সেখানে গিয়ে এসব সুবিধা নিতে পারবেন।
অষ্টম
করোনাভাইরাস বিষয়ে নেয়া পদক্ষেপের কারণে যদি দরিদ্র মানুষের আয় রোজগারের সমস্যার সমাধান করার জন্য জেলা প্রশাসকদের খাদ্য ও আর্থিক সাহায্য দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তারা সমন্বয় করে নেবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনকে নির্দেশনা দিয়েছেন যেন তারা ৫০০ চিকিৎসকের একটি তালিকা প্রস্তুত রাখেন। যাতে তাদের করোনাভাইরাস রোধে বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা যায়।
তিনি বলেন, সবরকমের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাগম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, জ্বর, সর্দি কাশি যাদের রয়েছে, তারা যেন মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামাজ পড়েন।
সোমবার থেকে বাংলাদেশে সকল দোকান, বিপণি বিতান ২৫শে মার্চ থেকে বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এর আগে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত সকল স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে দেয়া হয়।
উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করে দেয়া হয়।
পহেলা এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা।