মন্তব্য প্রতিবেদন:উনারা সাংঘাতিক (সাংবাদিক) !
বিশেষ প্রতিনিধি:
দু’টি চেয়ারে বসে আছেন দু’জন। উনারা ‘সাংঘাতিক’( সাংবাদিক) । উনাদের পাশে আরো প্রায় ১০টি চেয়ার খালি। একটি টিভির পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান । সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্দ টেবিল। উনারা পরিচিত মুখ। মিডিয়ার সাথে সংশ্লিষ্টতার সূত্রে উনাদের সাথে (সামান্য) পরিচয়। উনাদের পাশে খালি চেয়ারে বসতেই একজন বলে উঠলেন-“ এখানে বসবেন না। সাংবাদিকরা বসবেন।’’ প্রসঙ্গক্রমে বলতে হচ্ছে, বর্তমানে আমি বিলেতের একটি প্রিন্ট ও একটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত আছি প্রায় ত্রিশ বছর ধরে। যাক, ঐ সময় আমার সাথে ছিলেন কমিউনিটির একজন অত্যন্ত পরিচিত মুখ; যিনি একটি অনলাইন পত্রিকারও ডাইরেক্টর। অবশ্য উনাদের বারণ না মেনে আমরা খালি চেয়ারে বসে পড়লাম এবং উনাদের বললাম,“সাংবাদিকরা এলে না হয় উঠে যাবো।’’ পরে জানলাম এখানে কেবল একজন সাংবাদিক বসেছিলেন,যিনি ( ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার) আমারই কলিগ। তিনি পাশের একটি টেবিল থেকে ইশারা দিয়ে বললেন, বসুন আপনারা। যদিও ঘন্টা দেড়েক বসলাম, কিন্তু কোন সাংবাদিক (!) এসব চেয়ারে বসার জন্য পা মাড়াননি।
শুরু করেছিলাম ‘সাংঘাতিক’ (সাংবাদিক) বিষয়ে । যে দু’জন সাংঘাতিকের কথা আলোকপাত করছি, তাদের একজন একটি টিভির ‘হেড অব নিউজ’। যদিও উনার টিভিতে কোন নিউজ প্রচার হয়না। অপরজন অন্য টিভির একটি প্রোগ্রামের সঞ্চালক। অর্থাৎ দু’জনের পক্ষে কোন সংবাদমাধ্যমে নিউজ কাভারেজ করার মতো যোগ্যতা বর্তমানে নেই। যে কারণে উনারা সাংবাদিক নন,‘সাংঘাতিক’! তবু উনারা সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন দখল করে বসেছিেেলন। আর অন্যদের বসতে দিচ্ছিলেন বাঁধা ।
প্রায়ই অভিযোগ শোনা যায়, বিলেতে উনাদের মতো ‘সাংঘাতিক’(সাংবাদিক)দের ব্যাপক ছড়াছড়ি। যে কোন প্রেস কনফারেন্সে কিংবা পার্টিতে উনারা আগেভাগে সিট দখল করে বসে থাকেন । বিশেষ করে রেস্টুরেন্টগুলোতে প্রেস কনফারেন্স হলে এসব কথিত সাংবাদিকের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। দেখা যায়, উদ্যোক্তারা নির্দিষ্ট অংকের ফি জমা দেন প্রেসক্লাবে, আবার সাংবাদিক ও ‘সাংঘাতিক’দের উদোরপূর্তির ব্যবস্থাও করেন। তদুপরি কোন রিপোর্টারকে এক্সট্রা মানি দিয়ে নিউজ লিখিয়ে মিডিয়াগুলোতে পাঠানোরও ব্যবস্থা করেন। যদিও নিউজের জন্য বাড়তি অর্থ খরচ করার কথা নয়। এটা বোধকরি বিলেতের (বাংলা) মিডিয়ার জন্য প্রযোজ্য। আমার সুদীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে এমন কর্মকান্ড আগে কখনো দেখিনি।
বিলেত তথা লন্ডনের প্রেস কনফারেন্সগুলোতে অধিকাংশরাই থাকেন ‘সাংঘাতিক’! তারা সামনের কাতারে বসে কনফারেন্সের উদ্যোক্তাদের উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে প্রায়ই ঝামেলায় ফেলে দেন। প্রশ্ন করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের প্রশ্ন অনেকাংশে সাংবাদিকতার নীতিমালায় পড়ে না। কিংবা তারা এমন সব বক্তব্য উপস্থাপন করেন যা উদ্যোক্তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়। এ নিয়ে মাঝেমধ্যে নানা বচসার সৃষ্টি হয়। অপ্রীতিকর কিংবা অনাকাংখিত পরিস্থিতিরও উদ্ভব ঘটে থাকে। এ নিয়ে যেমন ক্ষিপ্ত হন প্রেস কনফারেন্সের উদ্যোক্তারা; তেমনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রকৃত সাংবাদিকরা। যে কারণে প্রকৃত অনেক সংবাদকর্মী প্রেস কনফারেন্সে যোগ দিতে ইদানিং তেমন উৎসাহী হন না।
প্রেস কনফারেন্স ছাড়াও ছোট বড় প্রায় সব প্রোগ্রামে এসব সাংঘাতিকের সরব উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। তাদের উপদ্রবের কারণে প্রকৃত সাংবাদিকরা না পারেন বসতে, না পারেন লিখতে, না পারেন পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে।এসব সাংঘাতিকের অবাধ বিচরণ সর্বত্র। এদের সাথে আবার উপদ্রব ঘটে দলীয় সাংবাদিকের। এসব সাংঘাতিক এবং দলীয় সাংবাদিকদের পদভারে মুখর থাকে দলীয় সভা-সমাবেশ এবং বাংলাদেশ হাই কমিশনের আঙ্গিনা। বেশিরভাগ দলীয় সভা-সমাবেশ এবং হাই কমিশনের যে কোন প্রোগাম কিংবা দেশ থেকে মন্ত্রী-মিনিস্টাররা এলে মুখচেনা এসব সাংঘাতিক এবং সাংবাদিকরা হাজির হন বীরদর্পে। এক্ষেত্রে তাদের দোষ নেই তেমন। যেহেতু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদের নামে নিমন্ত্রণপত্র পাঠান সগৌরবে। অথচ প্রকৃত অনেক সাংবাদিককে দাওয়াত দেয়া হয় না এসব রাষ্ট্রীয় কিংবা দলীয় অনুষ্ঠানে। দাওয়াত লিস্টে তাদের নাম পর্যন্ত থাকে না।
দু’কলম লেখার ক্ষমতা,যোগ্যতা,পারদর্শিতা-কোনটাই নেই এসব কথিত সাংবাদিক তথা সাংঘাতিকদের। যেহেতু বেশিরভাগই সংবাদকর্মী নন; তবে তারা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় নানা পদে কর্মরত এটা সত্য। অবশ্য তাদের পদ পদবীকে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই। কিন্তু তারা যখন সংবাদকর্মী সাজেন কিংবা সাংবাদিকদের আসন অলংকৃত করে যাচ্ছেতাই কর্মকান্ড করেন এবং মিডিয়ার মানকে ভ‚লুণ্ঠিত করেন তখন কেবলই আফসোস করতে হয়। এছাড়া কিই-বা করার আছে! পরিশেষে শুধু একথা বলা যায়- এটা রাজার দেশ, এখানে সবাই রাজা ,আর যেমন খুশি তেমন সাজা!