মন্ত্রীদের সাথে বৈঠকের পর নাহিদকে ‘আটক’ করা হয়

Spread the love

শুক্রবার মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন প্রতিনিধির সাথে সরকারের তিনজন মন্ত্রীর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেই বৈঠক নিয়ে নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধের কথা জানা যাচ্ছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সাথে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দেখা করে কোটা সংক্রান্ত আলোচনা শুরুর পূর্বশর্ত হিসেবে আট দফা দাবি উত্থাপন করেন দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সহ-সমন্বয়ক তানভীর আহমেদ।

এদের মধ্যে সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে আন্দোলনের শুরু থেকেই সামনের সারিতে থেকে দাবি তুলে ধরতে দেখা গেছে।

কিন্তু, আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল অভিযোগ করেছেন, এখন যেসকল সিদ্ধান্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে প্রচার করা হচ্ছে, তার কোনোটাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিদ্ধান্ত বা দাবি-দাওয়া বা উদ্যোগ নয়।

মি. সোহেল বলেন, “তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটা পোর্শনও (অংশ) না। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথেই নাই। তারা যদি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে প্রচার করেন, তবে তারা মিথ্যাচার করছেন।”

“যদি কেউ এটা করে থাকে, তবে তিনি বা তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এটা করছেন,” বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

অপর একজন সমন্বয়ক আবদুল কাদের এক খুদে বার্তায় দাবি করেছেন, “কয়েকজন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ককে দিয়ে জোরপূর্বক গণমাধ্যমে ভুল সংবাদ প্রচারের চেষ্টা করা হচ্ছে।”

প্রস্তাবিত আট দফা দাবির বদলে ভিন্ন দাবি সম্বলিত নয় দফার কথা বলছেন তিনি।

‘আন্দোলনবিরোধী কোনও দাবি করা হয়নি’

অন্যদিকে, বৈঠকে অংশ নেয়া সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে আনুমানিক ১২-১৩ জন সম্মিলিতিভাবে কথা বলে আট দফা দাবি লিখেছেন।

মি. আব্দুল্লাহ বলেন, “এখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনবিরোধী কোনও দাবি করা হয়নি। আর এগুলো নিয়ে আমাদের মাঝে আগেও আলোচনা হয়েছে।”

“যদি কেউ বলে যে তার সাথে আলাপ হয়নি…বিচ্ছিন্নভাবে বলেছে। আসলে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি,” বলেন তিনি।

কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি ও সাংগঠনিক প্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপরই নির্ভর করতেন। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের সেই যোগাযোগও থমকে গেছে।

সরকারের দুই মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

বৈঠকের ঘণ্টা দুয়েক পরে মি.ইসলামকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে বলে অভিযোগ করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলছেন, “আট দফা দাবি প্রস্তুতের সময় সমন্বয়কদের মাঝে নাহিদ ইসলামও ছিলেন। গতকাল (শুক্রবার) রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নাহিদ ইসলাম তাদের সাথে ফোনে যুক্ত ছিলেন। ”

নাহিদ কেন বৈঠকে যাননি? এমন প্রশ্নে মি. আব্দুল্লাহ বলেন, “আমাদের সবার নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল, তবে তার বেশি ছিল। তাই, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে যুক্ত করা যায়নি।”

বৈঠকে যোগ দেয়া অপর সমন্বয়ক সারজিস আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমাদের সমন্বয়ক প্যানেল অনেক বড়। দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু দ্বিমত মানেই বিভেদ নয়।”

“আট দফা ঠিক করতে আমাদের পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লেগেছে। পুরো প্রক্রিয়ায় আরো কয়েকজনের সঙ্গে নাহিদও আমাদের সাথে ফোন কলে যুক্ত ছিল,” বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

এ সময় নাহিদের সাথে তারা এবং তার পরিবারের কেউ যোগাযোগ করতে পারছেন না জানিয়ে তার খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

“নাহিদকে আটক করা হলে আমাদেরও আটক করতে হবে,” যোগ করেন মি. আলম।

আট দফা ঘোষণার পরও আলোচনায় নয় দফা

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা বা সিদ্ধান্ত আসেনি।

শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাদের আট দফা দাবি মানলেই কেবল কোটা সংস্কারের এক দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করতে সম্মত হবেন তারা।

তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, গত কয়েকদিনে হত্যার ঘটনায় দায়ীদের বিচার, উসকানির জন্য ছাত্রলীগ এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময়ে নিষ্ক্রিয় থাকা উপাচার্য ও প্রক্টরদের পদত্যাগ।

এছাড়া, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের সকল মামলা প্রত্যাহার এবং জড়িতদের ভবিষ্যতে হয়রানি না করার নিশ্চয়তাও চাওয়া হয়েছে তাদের উত্থাপিত দাবিতে।

বৈঠকের পর গণমাধ্যমের সাথে কথোপকথনে যৌক্তিক সমাধানের আশাবাদ জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

অন্যদিকে, শুক্রবার নয় দফার একটি দাবিনামা নিয়ে আলোচনা হলেও সেটির ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছিলেন অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

যদিও শনিবার ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফে নয় দফা দাবির কথা ছাপা হয়। এই নয় দফায় ছাত্রহত্যার দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর মন্ত্রিপরিষদ এবং দল থেকে পদত্যাগের দাবি করেছেন তারা।

যেসব স্থানে ছাত্র নিহতের ঘটনা ঘটেছে সেখানকার দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তাদের অপসারণও দাবি করছেন তারা। পাশিপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টরের পদত্যাগ, নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হল খুলে দেয়া এবং হয়রানি না করার দাবি তুলেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই অংশটি।


Spread the love

Leave a Reply