মস্কোতে ড্রোন হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করলো রাশিয়া
ডেস্ক রিপোর্টঃ রাশিয়া অভিযোগ করেছে যে ইউক্রেন আজ ভোরে মস্কোতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। গত বছর ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া যুদ্ধ শুরু করার পর এই প্রথম মস্কোতে একাধিক ড্রোন দিয়ে এরকম হামলা চালানো হলো।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, অন্তত আটটি ড্রোন দিয়ে কিয়েভ একটি ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ চালিয়েছে। এতে কিছু ভবনের সামান্য ক্ষতি হয়েছে।
মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেছেন, হামলায় কেউ গুরুতর আহত হয়নি।
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের একজন কর্মকর্তা মিখাইলো পোডোলিয়াক বলেছেন, এই হামলায় কিয়েভ সরাসরি জড়িত ছিল না। তবে এরকম ঘটনা যে ঘটেছে তাতে ইউক্রেন খুশি এবং এমন হামলা আরও বাড়বে বলে তারা ধারণা করছেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, আটটি ড্রোনকেই মাঝপথে থামাতে পাল্টা হামলা চালানো হয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, “এর মধ্যে তিনটি ড্রোনকে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাঝপথে আটকানো হয়, এর ফলে এগুলো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়। অপর পাঁচটি ড্রোন পান্টসির-এস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়।”
এর আগে রুশ গণমাধ্যমের রিপোর্টে বলায় হয়েছিল, হামলায় ৩০টির মতো ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ বলছে, গুলি করে ধ্বংস করার পর এগুলো বিভিন্ন ভবনের ওপর গিয়ে পড়েছিল।
মি. সোবিয়ানিন বলেছেন, মস্কোর কিছু মানুষকে তাদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছিল। পরে অবশ্য তারা বাড়িতে ফিরে যেতে পেরেছেন। দুজন মানুষকে চিকিৎসা দিতে হয়েছে।
মস্কো থেকে বিবিসির রাশিয়া সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গ জানান, তিনি স্থানীয় সময় ভোর ৬টা ২৪ মিনিটে উত্তর-পশ্চিম মস্কোতে একটি বিস্ফোরণ শুনতে পান। বিস্ফোরণের শব্দে তার জানালার কাঁচ কাঁপছিল। এরপর ৬টা ৫৮ মিনিটে আরেকটি বিস্ফোরণ শোনা যায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ধরণের কথাবার্তা চলছে, তাতে বোঝা যায় মস্কোর আরও বহু মানুষ এধরণের বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন, বলছেন তিনি।
মস্কোতে এই ড্রোন হামলা হলো গতরাতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ড্রোন হামলার পর। ঐ হামলায় অন্তত একজন মারা গেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে অন্তত ২০টি ড্রোন হামলা ঠেকানো হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত ড্রোনের টুকরো পড়ার পর কিছু ভবনে আগুনে ধরে গিয়েছিল।
ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান জেনারেল কিরলো বুডানভ মস্কোর এই ড্রোন হামলার দ্রুত জবাব দেয়া হবে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিস ইন্সটিটিউটের ড. জ্যাক ওয়াল্টিং বিবিসিকে বলেন, ইউক্রেন এর আগেও রাশিয়ার ভেতরে এয়ারফিল্ডে হামলা করেছে। তবে রাজধানীতে এমন হামলা এই প্রথম।
তবে এর আগে গত মে মাসের শুরুতে ক্রেমলিনে একটি কথিত ড্রোন হামলার খবর পাওয়া গিয়েছিল।
তখন অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ক্রেমলিনের ওপর ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গিয়েছিল। দ্বিতীয় একটি ভিডিওতে ক্রেমলিন কমপ্লেক্সের সেনেট ভবনের ওপর ছোট একটি বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা যায়। তবে এসব ভিডিও যাচাই করা যায়নি।
রুশ কর্তৃপক্ষ তখন দাবি করেছিল যে কিয়েভের নির্দেশে ক্রেমলিনে এই হামলা হয়। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই হামলায় তার দেশের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্রাংক গার্ডনার বলেন, মস্কোর বহু মানুষের জন্য ইউক্রেনের যুদ্ধ ‘বহু দূরের একটি ঘটনা, যেটি তারা মাঝে-মধ্যে টেলিভিশনের পর্দায় দেখেন। কিন্তু প্রতিবেশী দেশে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ পাল্টা ধাক্কা এবার রাশিয়াতে লাগতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ইউক্রেন এবং পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর ওপর এই ড্রোন হামলাকে ‘নিজেদের ঔষধের স্বাদ মস্কো এবার নিজেই পেল’ বলে ভাববে।
যদিও এই হামলায় কেউ মারা যায়নি এবং খুব সামান্যই ক্ষতি হয়েছে, তারপরও এটা যে ঘটতে পারলো, তা এক বিরাট ব্যাপার।
ফ্রাংক গার্ডনার বলেন, মস্কোতে এই ড্রোন হামলার পর নেটো জোট কিছুটা স্নায়ু-চাপে ভুগবে, কারণ এর ফলে যুদ্ধ আরও তীব্রতর হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।
নেটো জোট ইউক্রেনকে যেসব শক্তিশালী এবং দূরপাল্লার অস্ত্রশস্ত্র দিচ্ছে, তাতে এরকম শর্ত দেয়া আছে যে এগুলি দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালানো যাবে না।
ফ্রাংক গার্ডনার বলেন, মস্কোর ওপর কোন ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় যদি গুরুতর ক্ষতি হয়, সেটি ইউক্রেন যুদ্ধকে আরও বিপদজনক সীমানায় নিয়ে যেতে পারে।