মারধর-অর্থ আদায়, ৪ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তির দণ্ড
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃবাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার ব্রিটিশ নাগরিককে কারাদণ্ড দিয়েছে সে দেশের আদালত। তারা পূর্বপরিচিত ব্যক্তিদের ফোন করে ডাকিয়ে নিয়ে যেত। তারপর তাদেরকে আটকে রেখে, মারধর করে এবং হত্যার হুমকি দিয়ে অর্থ আদায় করত। ফাঁদে ফেলার জন্য তারা চাকরির প্রলোভন দেখাত। দণ্ডপ্রাপ্তদের কয়েকজন একই রকম একাধিক অপরাধের দায়ে সাজা পেয়েছে।
সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদ কদরিস (৫২)। আটকে রাখা, শারীরিক নিপীড়ন চালানো ও অর্থ আদায়ের মতো অভিযোগে তার মোট ১৬ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। প্রজ্ঞাময় চৌধুরী (৩২) নামের আরেক অভিযুক্তকেও ১৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন অপরাধের জন্য ঘোষিত বিভিন্ন মেয়াদের সাজা একই সঙ্গে কার্যকর হবে। তাদের সহযোগী শাহ আবদালকে (৪৫) ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সহযোগী মোহাম্মদ স্বজনকে শুধু ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে দেওয়া হয়েছে ছয় বছরের কারাদণ্ড । শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে বিচারক এই রায় দেন।
পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, প্রজ্ঞাময় চৌধুরী ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব লন্ডনে ২৯ বছর বয়সী এক পূর্বপরিচিত যুবকের সঙ্গে দেখা করে। তারপর সেখান থেকে তাকে নিয়ে যায় ফরেস্ট গেটের কাছে একটি ঠিকানায়। ওই ঠিকানায় উপস্থিত ছিল কদরিস। সেখানে তারা দুইজন মিলে ভুক্তভোগী যুবককে মারধর করে এবং হুমকি দেয়। মারধরের হাত থেকে বাঁচার জন্য ভুক্তভোগী তার ব্যাংকের কার্ড অভিযুক্তদের হাতে তুলে দেয়। অভিযুক্তরা প্রায় ৬০০ পাউন্ড অর্থ তুলে নেয় সেখান থেকে।
বেশ কয়েক ঘণ্টা পর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার আগে তার কাছ থেকে তার নথিপত্রের ছবি তুলে রাখা হয়। নিয়ে নেওয়া হয় তার পরিবারের ছবি। তার ও তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়। দাবি করা হয় আরও অর্থও। পরে ভুক্তভোগী যুবক পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
কিন্তু এটাই প্রজ্ঞাময় চৌধুরী ও কদরিসের বিরুদ্ধে একমাত্র অভিযোগ নয়। আগেও তারা একই ধরনের অপরাধে জড়িয়েছে। গত বছরের মার্চ মাসে হোয়াইটচ্যাপেলে অবস্থিত ‘রয়্যাল লন্ডন হসপিটাল’ থেকে পুলিশের কাছে ফোন করা হয় একজন ভুক্তভোগীর বিষয়ে জানাতে। পুলিশ সেখানে গিয়ে দেখে ২৯ বছর বয়সী একজন যুবককে ভর্তি করা হয়েছে চিকিৎসার জন্য। তার মুখে আঁচড়ের দাগ; এক হাত ভাঙা। তাকে বেদম মারধর করা হয়েছে। ভুক্তভোগী পুলিশকে জানিয়েছিল, শাহ আবদাল তার পূর্বপরিচিত। ঘটনার দিন তিনি আবদালের কাছ থেকে একটি ফোনকল পেয়েছিলেন। আবদাল তাকে চাকরির কথা বলে একটি ঠিকানা দেয় এবং সেখানে যেতে বলে।
নির্ধারিত ঠিকানায় যাওয়ার পর ভুক্তভোগী দেখতে পান, সেখানে শাহ আবদালের সঙ্গে প্রজ্ঞাময় চৌধুরী ও মোহাম্মদ কদরিস উপস্থিত। কদরিস তাকে লাঠি দিয়ে বেদম পেটাতে থাকে। তারা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে তার আইডি কার্ড, মোবাইল ফোন ও ৬৫০ পাউন্ড কেড়ে নেয়। পরে তারা দাবি করে, ভুক্তভোগী যুবক যেন তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ফোন করে আরও অর্থ পাঠাতে বলে।
শেষ পর্যন্ত তার এক বন্ধু ৫০০ পাউন্ড ও অপর এক বন্ধু ২০০ পাউন্ড পরিশোধ করে। কিন্তু অভিযুক্তরা তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। ৫০ হাজার পাউন্ডের দাবিতে কদরিস, প্রজ্ঞাময়, আবদাল ও স্বজন মিলে তাকে বেদম মারধর করে। তারা হুমকি দেয়, অর্থ না দিলে তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হবে। কিন্তু ভুক্তভোগীর পরিবার ততটা ধনী ছিল না যতটা অভিযুক্তরা ভেবেছিল। মারধরের পর তারা ভুক্তভোগীকে তারা তার বাসার সামনে গাড়িতে করে নামিয়ে দিয়ে যায়। ফোনকলের রেকর্ড ও সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পরে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনা হয়।