মারা যাবেন তবুও ব্রেক্সিট পেছাবেন না বরিস জনসন
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দুই দফা হারের পরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পক্ষে স্থির রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে ব্রেক্সিট বিলম্ব করতে অনুরোধ করার থেকে বরং খাদে পড়ে মরবো।’ ওয়েকফিল্ডের পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দেয়া বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রস্তুত রয়েছে দাবি করা হলেও পার্লামেন্টের বিরোধী দল লেবার পার্টি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এটা প্রতিহত করবে বলে জানিয়েছে।
ব্রেক্সিট ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে চলতি বছরের গত মে মাসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তিনি সরে দাঁড়ানোর পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী বরিস জনসন। নির্বাচিত হওয়ার পর আগামী ৩১ অক্টোবর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়নেরও ইঙ্গিত দেন তিনি। মঙ্গলবার জনসন সরকারের ব্রেক্সিটনীতির বিরোধীরা পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব তোলেন। এই প্রস্তাবে যুক্তরাজ্যের স্বার্থ রক্ষায় চুক্তি চূড়ান্ত করতে ব্রেক্সিট আরও পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। ওই প্রস্তাব পাস হলে হেরে যান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার পর বরিস জনসন আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব আনলেও তা খারিজ হয়ে যায়।
বরিস জনসন বলেন, ব্রেক্সিট বিলম্ব করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে সময় চেয়ে অনুরোধ করার থেকে বরং খাদে পড়ে মরবেন তিনি। চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত হবেন বলেও জানান তিনি। তবে লেবার পার্টি জানিয়েছে, সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এটা বন্ধ করতে কাজ করছে তারা। তবে ইতোমধ্যে আইনপ্রণেতারা ‘নো-ডিল ব্রেক্সিট’ বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে চুক্তি ছাড়া বেরিয়ে যাবার বিষয়টি আটকে দিতে একটি বিল পাস করেছেন সংসদে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে যখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, যদি ব্রেক্সিটের নির্ধারিত তারিখ ৩১ অক্টোবর থেকে পিছিয়ে আরও সময় নেওয়া হলে পদত্যাগ করবেন কিনা তখন তিনি সে সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।
গতকাল ওয়েকফিল্ডের পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দেয়া বক্তৃতায় বরিস জনসন ফের তার আগাম নির্বাচনের কথা বলেছেন। তিনি চান আগামী ১৫ অক্টোবর ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। তিনি এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি (ব্রেক্সিট) সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এটাই একমাত্র পথ।’
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রী ও আইনপ্রণেতার পদ সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ছোট ভাই ও বাণিজ্যমন্ত্রী জো জনসন। প্রধানমন্ত্রীকে তার ভাই সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জো একজন ‘দুর্দান্ত ব্যক্তি’। তবে ব্রেক্সিট ইস্যুতে আমাদের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।
জো বলেছেন, পারিবারিক আনুগত্য এবং জাতীয় স্বার্থের মধ্যে সংঘাতের কারণে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এক টুইটে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি এক অপরিসীম উদ্বেগের মধ্যে আছেন। তার স্থানে এখন অন্য কারো আসার সময় হয়েছে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে ভোটাভুটিতে প্রথম দফা হারার পরদিনই আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব তুললে দ্বিতীয় দফার ভোটেও হেরে যান প্রধানমন্ত্রী বরিস। তারপর থেকে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে তার সরকার। ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটিশ রাজনীতিতে চরম সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
আইনপ্রণেতারা যদি একটি নতুন চুক্তি করে অথবা ১৯ অক্টোরবের মধ্যে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের অনুমোদন না দেয় তাহলে সংসদ ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ব্রেক্সিট বিলম্ব করতে বাধ্য করবে।
নতুন চুক্তির কোনও পরিকল্পনা না করায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিযুক্ত করেন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। লিবারাল ডেমোক্র্যাট নেতা জো সুইমসন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যগুলো গভীর সমস্যার সৃষ্টি করছে। শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী আইনি প্রক্রিয়ায় ব্রেক্সিট বিলম্ব করতে বাধ্য হবেন।