মিয়ানমার: স্কুলের ওপর সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার হামলায় বহু শিশু নিহত, নিখোঁজ অনেকেই

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জঙ্গী হেলিকপ্টার থেকে উত্তরাঞ্চলের সাগাইঙ্গ অঞ্চলের একটি স্কুলে হামলা চালানোর পর অন্তত ১১টি শিশু নিহত এবং আরও ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ।

সামরিক সরকার বলেছে, তারা স্কুলে লুকিয়ে থাকা বিদ্রোহীদের ওপর আক্রমণ করছিল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ছবিতে স্কুলে বুলেটের গর্ত এবং রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে।

বিবিসির সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, উত্তরাঞ্চলীয় লেট ইয়েট কোন গ্রামের একটি বৌদ্ধ মঠের পরিচালিত ঐ হামলার ঘটনটি ঘটেছে গত শুক্রবার, কিন্তু আজ মঙ্গলবারই প্রথম ঘটনাটির কথা জানা যাচ্ছে।

এই স্কুলে কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে কিশোর বয়স পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষা দেয়া হতো।

সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, এই হামলার ঘটনাটি যে এলাকায় ঘটেছে সেখানে গত বছরের অভ্যুত্থানের পর থেকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক সশস্ত্র প্রতিরোধ চলছে।

বিবিসির বার্মিজ সার্ভিস এর আগে নিশ্চিত করেছিল যে, ঐ হামলায় অন্ততপক্ষে ছয়টি শিশু নিহত হয়। তাদের মধ্যে দুটি ছেলের বয়স সাত এবং ১৪ বছর, আর তিনটি মেয়ের বয়স সাত, নয় আর ১১ বছর। কাছাকাছি একটি স্থানে মাছ ধরতে থাকা আরেকটি ১৩ বছরের শিশুও গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

বেশিরভাগ শিশুর মরদেহ বার্মিজ সৈন্যরা নিয়ে গেছে।
বিবিসি বার্মিজ জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর গুলিতে সেখানকার ছয়জন গ্রামবাসীও নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ আর একজন নারী রয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে ওই স্কুলের দেয়ালে গুলির গভীর গর্ত এবং রক্তের দাগ দেখা গেছে।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলছে, হেলিকপ্টার থেকে নির্বিচারে গুলি করার কারণে স্কুলের শিশুরা নিহত হয়েছে। নিখোঁজ ১৫ শিশুকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

”বিস্তারিত তথ্যের ব্যাপারে যদিও এখনো খোঁজখবর চলছে, তবে সন্তানহারা অভিভাবক এবং পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে ইউনিসেফ,” সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে সংস্থাটি।

”স্কুলগুলোকে অবশ্যই নিরাপদ রাখতে হবে। শিশুদের ওপরে কখনোই হামলা করা যাবে না।”
একটি আন্তর্জাতিক এনজিওর হিসেব অনুযায়ী, মিয়ানমারে চলতি বছর এপর্যন্ত প্রায় দু’শতাধিক স্কুলের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।

গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নাটকীয়ভাবে অং সান সু চি’র নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে।

সেই অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত পনেরোশোর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর দি পলিটিকাল প্রিজনারস (বার্মা)।

পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, মিয়ানমারে চলা রক্তক্ষয়ী লড়াই থেকে এই বছর একটি গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ারও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

দেশের অনেক এলাকায় পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) নামের গেরিলা বাহিনীর শক্ত প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছে সরকারি বাহিনী।
বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সংবাদদাতা জোনাথন হেড বলছেন, এসব এলাকায় নিয়মিতভাবে বিমান ও হেলিকপ্টার হামলা চালাচ্ছে মিয়ানমারের বাহিনী। স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তা পাওয়া গেরিলা বাহিনীকে মোকাবেলা করতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছে।

বিবিসির বার্মিজ সার্ভিস বলছে, সাধারণ জনগণের ওপর সামরিক বাহিনীর ভারী অস্ত্র ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সামরিক সরকারের রণকৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

যেখানে সর্বসম্প্রতি এই হামলার ঘটনা ঘটেছে সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মান জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে এই জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যাই বেশি।

ফলে এদের মধ্যে থেকে বিদ্রোহী তৎপরতা শুরু হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে সামরিক সরকারের প্রতি তাদের মনোভাব বদলে যাচ্ছে।


Spread the love

Leave a Reply