মিয়ানমারে ঐতিহাসিক পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু
প্রায় অর্ধশতাব্দী পর মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের মাধ্যেম প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হয়েছে। সোমবারের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন নবনির্বাচিত শতাধিক এমপি। নির্বাচনে ৮০ শতাংশ আসনে জয়লাভ করা এনএলডি প্রধান সু চিও প্রথমদিনের সংক্ষিপ্ত অধিবেসনে যোগ দিয়েছেন।
গত নভেম্বরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে জয়লাভের পর সোমবারের এই অধিবেশনের মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের ক্ষমতায় বসল অং সান সু চি’র ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। গণতন্ত্রপন্থী এই নেত্রীর দলের এমপিরা এদিন কমলা রঙের বিশেষ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে রাজধানী নাইপিদোর পার্লামেন্ট ভবনে আসেন। এনএলডি ছাড়াও একাধিক আঞ্চলিক দলের নির্বাচতি সদস্য সোমবার পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনের দিন শপথ গ্রহণ করেছেন শতাধিক এমপি। এনএলপির অনুগত পার্লামেন্ট সদস্য ইউ উয়িন মিন্ট স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন। সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির ইউ টি খুন মাইয়াতকে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগ দিলেও সরকার গঠনের প্রথম ও প্রধান কাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিষয়ে এখনো কিছু বলেননি সু চি। বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মার্চে। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা তাই মিয়ানমারের পার্লামেন্টের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
থেইন সেইনের উত্তরাধীকারী হওয়ার ক্ষেত্রে সু চি’র সাংবিদানিক বাধা থাকায় এনএলডির পক্ষ থেকে এখনো কোনো ঘোষণা আসেনি। বিদেশিকে বিয়ে করায় এবং সন্তানরা বিদেশের নাগরিক হওয়ার কারণে সংবিধান অনুসারে প্রেসিডেন্ট হতে পারছেন না ১৫ বছর ধরে গৃহন্দী থাকা এ নোবেলজয়ী রাজনীতিক। যিনিই মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হন না কেন সু চি’ই দেশটির ‘ছায়া প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে থাকবেন বলেও মনে করা হচ্ছে। তবে নিজেকে এ রকম কোনো ভূমিকায় রাখবেন না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ৭০ বছর বয়সী সু চি।
স্পিকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে পার্লামেন্টের প্রথম ভাষণে ইউ উয়িন মিন্ট বলেন, মিয়ানমারের রাজনৈতিক ইতিহাসে আজ গর্ব করার মতো একটি দিন। খিন জাও উয়িন নামে এনএলডির এক এমপি বলেন, আমাদের গণতন্ত্রের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
এরইমধ্যে অভিজ্ঞ কিছু কর্মকর্তাকে পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসনে নিয়োগ দিয়েছে সেনাবাহিনী। দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির কারণে এনএলডির অনেক এমপিই রাজনীতির ময়দানে নবীন এবং সরকারি দায়িত্ব পালনে দক্ষ নন। এসব কারণে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ পার্লামেন্টের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এনএলডির জন্য সুখবর হচ্ছে সামরিক বাহিনী থেকে ২৫ শতাংশ আসনে নিয়োগের পরও পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ট রয়েছে দলটি।