মেগা প্রকল্প এবং হাসিনা কথন

Spread the love

“খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে টুস করে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত।”
“ড. ইউনূসকে মরে যাতে না যায়, পদ্মা নদীতে একটু চুবানি দিয়ে সেতুতে তুলে দেওয়া উচিত।”

বাংলাদেশি হিসাবে আমাদের লজ্জা এই ধরনের একজন প্রধানমন্ত্রী এবং এটা উনার মুখের ভাষা। এক সময় দেশের সর্বোচ্চ আদালত উনাকে রং হেডেড বলেছিলেন। সেই কথা আমরা ভুলতে বসেছি। কিন্তু উনার বেফাস কথাবার্তা উনার মানসিক বিকারগ্রস্থতাই প্রমান করে । উনি ডক্টর ইউনুসকে পানিতে চুবিয়ে তুলতে চান আবার খালেদা জিয়াকে সেতুর উপর থেকে ফেলে দিতে চান । উনার কথায় প্রমান করে উনি দেশের ৩ বারের প্রধানমন্ত্রীকে এবং দেশের একজন সিনিয়র সিটিজেনকে হত্যা করতে চান । দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী আসনে বসে এই ধরনের কথা, এটা অপরাধ। গুরুতর অপরাধ। আবার কয়েক দিন আগে উনি বলছেন”দেশের বড় প্রকল্পগুলো নিয়ে অনেক সমালোচকেরা অর্বাচীনের মতো মিথ্যা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।তারা অর্বাচীনের মতো একেকটা কথা বলবে আর মিথ্যে বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে। এটা কিন্তু গ্রহণ করা যায় না।”

সমালোচকদের উনি সরাসরি অর্বাচীন,মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়ে বল্লেন এ গুলো গ্রহন করা যাবেনা। সমালোচনাকে উনি বিভ্রান্তি বলছেন। মানে সমালোচকদের সমালোচনার জবাব না দিয়ে উনি উনার স্বভাবজাত হুমকি দিয়ে দিলেন।

তো দেশের অর্থনীতিবিদ,রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সমাজের সর্বস্তরের জনগন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম,পেপার পত্রিকা বা টেলিভিশনের টকশো তে এই মেগা প্রকল্প বিষয়ে সরকারের কি সমালোচনা করছেন?

দুর্নীতি,প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা,প্রকল্প গ্রহনে অদূরদর্শিতা এসবের ফলে মেগা প্রকল্প গুলো জনগনের উপকারের বদলে গলার কাটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।কিন্তু হাসিনা সরকারের বা দলের লোকদের পকেট ভারি হচ্ছে।কিছু মেগা প্রকল্পের কাহিনি বর্ণনা করব আমার এই লেখায়।

পদ্মাসেতু প্রকল্প

২০০৭ সালে একনেকে পাস হওয়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।২০১১ সালে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফা সংশোধনের পর ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। বর্তমানে কয়েক দফা সময় বৃদ্ধির পর এখন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। প্রকল্প শেষ হওয়ার আগে আরেক দফা প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করতে হবে।অর্থাৎ ১০ হাজার কোটি টাকার সেতু আজ আরো দ্বিগুন বেড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকার উপরে হয়েছে।নিশ্চয় এটি শাসকদলের ব্যর্থতা অথবা এই সেতু থেকে টাকা লুটেপুটে খেয়েছে।এই পদ্মা সেতুকে হাসিনা তার রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে জনগনের সামনে গত এক দশক ধরে ব্যাবহার করছেন।আওয়ামীলীগ এর কর্তাব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত বলছেন শেখ হাসিনা থাকায় এই সেতুটি হচ্ছে এবং বলছেন নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে।যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে পদ্মাসেতু নিজস্ব অর্থায়ন বা জনগন এর টাকায় উনারা করলেন সেটি কি জনগণ এর কুনো উপকারে আসবে।পদ্মা সেতুতে ফেরির তুলনায় দেড় থেকে পৌনে দুই গুণ টোল প্রস্তাব করা হয়েছে। উচ্চ টোলের কারণে পদ্মা সেতু থেকে মানুষ যেসব আর্থিক সুবিধা ও সাশ্রয়ের উপযোগ পাওয়ার কথা ছিল, সেটা আসবেনা বরং উচ্চ হারের টোলের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সুবিধাদি জনগণকে না দিয়ে বরং সরকার জনগণের কাছ থেকে আদায় করে নেওয়ার আয়োজন করেছে। সেতুকে সংযোগকারী জেলা থেকে দেশের অন্য প্রান্তে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন খরচ বাড়লে দক্ষিণের জেলাগুলোর কৃষি ও শিল্পপণ্য দেশের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না।

মাঝারি ও বড় ট্রাক–লরিতে টোলের হার অসহনীয়, তাই নিশ্চিত যে এই উচ্চ পরিবহনভাড়ায় দক্ষিণাঞ্চলের শিল্পবিকাশ বিঘ্নিত হবে। এমনিতেই দক্ষিণাঞ্চল ঝড় ও দুর্যোগপ্রবণ বলে সেখানে শিল্পও বিস্তারের হার কম। এদিকে সরকার ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতেও টোল নেবে। ভূমি অধিগ্রহণে ব্যাপক দুর্নীতির কারণে প্রতি কিলোমিটারে ২০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়ে যাওয়ায় সেখানেও উচ্চ টোল হার পড়বে বলে ধারণা করি। ঢাকা থেকে দক্ষিণের উপকূলীয় জেলা পর্যন্ত সড়কে রয়েছে আরও দুটি টোল সেতু ও ফেরি। এতগুলো সেতু ও সড়কে উচ্চ হারে টোল দিলে সেটা দক্ষিণাঞ্চলের শিল্পবিকাশ বিঘ্নিত করবে নিশ্চিত। দিন শেষে দক্ষিণের মানুষের পকেট কাটার উপকরণ হয়ে উঠবে সড়ক ও সেতুর টোল।সরকার বলছে নিজস্ব অর্থায়নে করছি সেতু তার মানে জনগণ এর টাকায় করা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ কেন এত অসহনীয় মাত্রায় টোল দেবে।এত অসহনীয় মাত্রায় টোল থাকলে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কুনো অবদান রাখবেনা।

মেট্রোরেল প্রকল্প : জাপান সরকারের অর্থায়নে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীতে বাস্তবায়ন হচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্প। ২০৩৫ সালের মধ্যে একটি বিআরটিসহ পাঁচটি রুটে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা সরকারের। ১৩ বছর পর সব রুটে যখন মেট্রোরেল চালু হবে, তখনো পরিবহনব্যবস্থার মাত্র ১৭ ভাগ চাপ সামাল দেওয়া যাবে। অর্থাৎ মেট্রোতে যানজট পরিস্থিতি পুরোপুরি যাবে না। সরকার ঢাকার মাটির নিচের ২৫ থেকে ৭০ ফুট গভীরে ৪০ লাখ যাত্রীর পারাপারের সক্ষমতার ১১টি পাতালরেল নিয়ে ভাবছে। কিলোমিটারপ্রতি যার নির্মাণ ব্যয় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা, মোট খরচ বাংলাদেশের দুই বছরের রাজস্ব আয়ের প্রায় কাছাকাছি। ঢাকার কার্যকর ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ না করে, জলাবদ্ধতা-ড্রেনেজ সংকট ও জলবায়ু ঝুঁকির পরিপ্রেক্ষিতে এসব মেগা প্রকল্প আদৌ টেকসই কি না, এ প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাতালরেলের যাত্রীদের মাসেই ভাড়া গুনতে হবে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। খরচের বাস্তবতা, বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা বিবেচনায় এমন উন্নয়ন প্রকল্প আসলে মানুষের কতটা উপকার হবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র : দেশের সর্বোচ্চ ব্যয়ের প্রকল্প এটি। বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে।কিন্তু ৯০ শতাংশ রাশিয়ার করা এই প্রকল্পের এখনো পর্যন্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডের নকশা তৈরি এবং নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমের আরোপিত অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞার খড়্গ প্রকল্পটিতে পড়ার ঝুঁকি আছে। অন্যদিকে, চুল্লি প্রস্তুত হয়ে গেলেও সঞ্চালন গ্রিডের অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যথাসময়ে উৎপাদনে যেতে পারবে না, বরং অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। বর্তমান বাস্তবতায় এই অতি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন আদৌ হবে কিনা সন্দেহ আছে।

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র

২০১৫ সালের আগস্টে মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। প্রকল্পের ২৯ হাজার কোটি টাকা দেবে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা-জাইকা। বাকি ৫ হাজার কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে। অবশিষ্ট অর্থের জোগান দেবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ও স্বত্বাধিকারী কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)।ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গত ১১ মে এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলে এই মাতারবাড়িতে জমির প্রয়জন চিল ৪১৮ একর কিন্তু কেনা হয়েছে ১৩৫৮ একর এবং মাতারবাড়িতে শুধু জমির জন্য দুর্নীতি হয়েছে ১১৯ কুটি টাকা।

এছাড়া তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এই প্রকল্পে ২৫৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। আর ১৬ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বরিশালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণে।

এই যে কয়েকটী মেগা প্রকল্প গুলোর হালহকিকত বর্ণনা করলাম এই প্রকল্প গুলো থেকে হাসিনার লোকজন দেদারসে দুর্নীতি করছে এবং বিদেশে টাকা পাচার করছে। যার প্রমান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির রিপোর্টে বলছে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছেশ্রীলঙ্কার এই ধরনের অবস্থা ছিল তাই শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এ থেকে স্বভাবতই যারা আমার দেশকে নিয়ে চিন্তা করে দেশের কথা ভাবে তারা দেকছে শ্রীলঙ্কা যেভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে তার একই কারন বাংলাদেশে বিদ্যমান তাই তারা সমালোচনা মুখর এই মেগা প্রকল্প নিয়ে।কিন্তু হাসিনা তাদের উত্তর যৌক্তিক ভাবে না দিয়ে হুমকি দিয়ে দিলেন যাতে সমালচনা না করার জন্য।কিন্তু হাসিনা জানেননা চোখ বন্ধ করলেই যে প্রলয় বন্ধ হয়না।এক সময় এই প্রকল্প গুলোই দেশের জনগণ এর গলার কাটা হয়ে দাঁড়াবে।আর দেশের জনগন এর যখন পিঠ ঠেকে যাবে তখন উনার অহমিকার চূড়ান্ত পতন হবে।


Spread the love

Leave a Reply