মেধাবীরা মুক্তি পাক
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের জন্য সচিব কমিটির সুপারিশের পর সেটিকে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবীর সাথে “সাংঘর্ষিক” বলে মন্তব্য করেছেন।
গতকাল কোটা সংস্কারের জন্য গঠিত সচিব পর্যায়ের কমিটি তাদের প্রাথমিক প্রস্তাবনায় প্রায় সব ধরণের কোটা বাতিল করার সুপারিশ করা হয়।
তবে এই কমিটি সবচেয়ে আলোচিত কোটা, অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে কি থাকবে না, সে ব্যাপারে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছে ওই কমিটি।
কোটা ব্যবস্থা বাতিলের এই সুপারিশকে কিভাবে দেখছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা?
এমন প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনকারী ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন বলছিলেন, “সংস্কারটা কেমন চেয়ে আসছিলাম সেটাই মূল বিষয়।”
তিনি জানান, “গত ১৭ই ফেব্রয়ারী থেকে আমরা বর্তমানে সরকারী চাকরীতে যে কোটা ব্যবস্থা আছে ৫৬% সেটার একটা যৌক্তিক এবং সহনীয় সংস্কার চেয়ে আসছিলাম।”
মি:মামুন বলছিলেন, “যে যে সেক্টরগুলোতে কোটা রয়েছে যেমন নারী, জেলা, উপজাতি-ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী এবং মুক্তিযোদ্ধা। এসব সেক্টরগুলোতে যে কোটা ব্যবস্থা রয়েছে সেটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেকটাই বেশি।”
“সেক্ষেত্রে আমরা চেয়েছিলাম, এই সেক্টরগুলো থেকে কমিয়ে সহনীয় মাত্রায় আনার জন্য। সেটার জন্য আমরা একটা নির্দিষ্ট সীমানা দিয়েছিলাম সেটা হল ১০%।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা এটাও বলেছি যে আমরা ১০৫ দাবি করেছি কিন্তু সেটা রাখা লাগবে এমনটা না, ১৫% করতে বা ২০% করতে পারে। কিন্তু সরকার এটাকে সম্পূর্ণ বাতিল করে দিচ্ছে এটা আমাদের দাবী বা আন্দোলনের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।”‘আদালতে যাবে, অনেকদিন সময় নিবে’
সরকারি চাকরীতে কোটার একটা বড় অংশ হলো ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর ঢাকায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেন, এ বিষয়ে সরকার আদালতের কাছে মতামত চাইবে।
“কমিটির সুপারিশ হলো কোটা প্রায় উঠিয়ে দেয়া, মেধাকে প্রাধান্য দেয়া। তবে কোর্টের একটি ভারডিক্ট আছে, সুপ্রীম কোর্টের, যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রতিপালন করতে হবে, সংরক্ষণ করতে হবে এবং যদি খালি থাকে তাহলে খালি রাখতে হবে,” জানান সচিব।
তিনি বলেন, যদি আদালত এটিকেও মওকুফ করে দেয়, তাহলে কোনো ধরণের কোটা থাকবে না। আর আদালত যদি রায় দেয় ঐ অংশটুকু সংরক্ষিত রাখতে হবে তাহলে ঐ অংশটুকু বাদ দিয়ে বাকি সব উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
তবে এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মামুন বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “আমাদের দাবী আসলেই পূরণ হয়নি। কারণ আমরা সংস্কার চেয়ে আসছিলাম আর সরকার বা মন্ত্রিপরিষদ সচিব যেটা দেখাচ্ছেন সেটা আদালতের একটা পর্যবেক্ষেণ।”
“কোটা সংস্কারের জন্য আমরা যারা আমরা আন্দোলন করছি তাদের জন্য এক ধরণের প্রহসন।”
এটিকে “দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া” হিসেবে ব্যাখ্যা করে তিনি বলছিলেন, “এটা আদালতে যাবে, এবং অনেকদিন সময় নিবে আর আমরা যারা সাধারণ শিক্ষার্থী তারা পড়াশোনা করতে পারছি না।”
“আন্দোলনের কারণে আমাদের অনেকে গ্রেফতার অবস্থায় আছে এবং আমরাও গ্রেফতারের আতঙ্কে আছি।”
আন্দোলনের ব্যাপারে মি: মামুন জানান, “কোটা সংস্কারের যে পাঁচ দফা দাবী, সেই দাবীতে আমরা অনড় থাকবো। যে পর্যন্ত কোটা একটা যৌক্তিক এবং সহনীয় সংস্কার না হবে সে পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।”