ম্যালেরিয়া পাহাড়ি এলাকার একটি রোগ
এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন:
ম্যালেরিয়া হলো মশাবাহিত প্লাজমোডিয়াম পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট রোগ। ম্যালেরিয়া শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন টর্টি (১৯৫১ সালে)। ম্যালেরিয়ার শব্দটি ইতালির যার অর্থ দূষিত বায়ু (Mal- দূষিত, Aria- বায়ু)। তখনকার মানুষ মনে করতো দূষিত বায়ু সেবন করলে এই রোগ হয়। রোগটি ক্রান্তীয় অঞ্চল, উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং অনেক সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা, এশিয়া এবং আমেরিকা অঞ্চলসহ বিষুবরেখা ঘিরে ব্যাপক বিস্তৃত।
প্লাজমোডিয়াম পরজীবী পাওয়া যায় অ্যানোফিলিস মশকীর মাধ্যমে। এটি বাংলাদেশের পর্বতী এলাকায় Plasmodium falciparum বেশি দেখা যায়। যেমন: চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ইত্যাদি এসব জায়গা দেখা যায়।
লক্ষণ:
সুপ্তকাল:
১) Plasmodium vivax – ১২-২০ দিন
২) Plasmodium ovale – ১১-১৬ দিন
৩) Plasmodium falciparum – ৮-১৫ দিন
৪) Plasmodium malarie – ১৮-৪০ দিন
প্রাথমিক পর্যায়
১)মাথা ব্যথা হয়।
২) বমি বমি ভাব।
৩) ঘুম আসে না।
৪) ক্ষুধা মন্দা।
দ্বিতীয় পর্যায়
১) শীত অনুভূত হয়।
২) ১০৪-১০৫° সেলসিয়াস জ্বর থাকে।
তৃতীয় পর্যায়
১) RBC ( লোহিত রক্তকণিকা) পরিমাণ কমে যায়। ফলে প্লীহা, যকৃত এবং মস্তিষ্কে আক্রান্ত হয়। আর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। পরবর্তীতে এটি সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ার আকার ধারণ করে। পরে রোগীকে বাঁচানোর সম্ভব হয়ে উঠে না।
রোগ নির্ণয়:
রোগীর রক্ত পরীক্ষা’র মাধ্যমে জানা যায়, যে সে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত আছে কিনা। ব্লাড ফিল্ম মাধ্যমে ম্যালেরিয়া পরজীবি শনাক্ত করার মাধ্যমে বলা যেতে পারে।
এই ছাড়া রোগী যদি জ্বর নিয়ে আসে, তখন রোগীকে জিজ্ঞেস করতে হয় যে, “আপনি কিছুদিন আগে কোথাও পাহাড়ি এলাকায় গিয়েছেন কিনা?” যদি রোগী বলে যে, হ্যাঁ, আমি পাহাড়ি এলাকায় গিয়েছি, তখন ডাক্তার কিছুটা হলে আন্দাজ করতে পারবে যে সে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত।
প্রতিকার:
কিছু ঔষুধ সেবনের করতে হবে যাতে প্লাজমোডিয়াম মারা যায়।
১) Malarone (ম্যালারণ)
২) Melfloquine (ম্যালফোক্লুইন)
৩) Primoquine phosphate
এসব ঔষুধ সেবন করলে ম্যালেরিয়া রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। কখনো রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। বেশি করে পানি পান করতে হবে।
প্রতিরোধ:
১) প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে। পঁচা পানিতে মশকী ডিম পাড়ে। তাই পরিত্যক্ত ডোবা, নালা পরিষ্কার করা, যেখানে সেখানে পানি জমতে দেওয়া যাবে না ইত্যাদি।
২) লার্ভা এবং পিউপা ধ্বংস করতে হবে। যেমন: পানিতে কেরোসিন বা পেট্রোল জাতীয় পদার্থ ছিটিয়ে দিলে এগুলো মারা যাবে।
৩) ঘুমানোর সময় মশারী টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে।
এভাবে আমরা ম্যালেরিয়া বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি।
ম্যালেরিয়ার মহামারী:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র মতে, ২০২২ সালে বিশ্বের ম্যালেরিয়ার রোগের আক্রান্ত হয়েছিলো প্রায় ২৪৮ মিলিয়ন। তার মধ্যে মারা গিয়েছিলো প্রায় ৬ লাখের মতো।
আমাদের দেশে ৬৪ টি জেলার মধ্যে ১৩ টি জেলায় ম্যালেরিয়া মহামারী আকার ধারণ করেছে, যার ঝুঁকির মাত্রা ৩.১% থেকে ৩৬% পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশে প্রত্যেক বছর ১০ হাজারের বেশি মানুষ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে মারা যায় ৪ থেকে ৫ শতাধিক মতো। বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ থাকলেও এই বছর ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ বাড়তে পারে।
লেখক: এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন, শিক্ষার্থী, সেশন: ২০২০-২১, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ