যুক্তরাজ্যের স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র কি ইউক্রেন যুদ্ধের গতি পাল্টে দেবে?
ডেস্ক রিপোর্টঃ যুক্তরাজ্যের সরকার জানিয়েছে যে, তারা ইউক্রেনে বেশ কিছু স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে। গত ১১ই মে এ তথ্য জানালেও দেশটি সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ১৫০ মাইল পর্যন্ত দূরত্বে আঘাত করতে সক্ষম। ইউক্রেন বর্তমানে যে ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে, এই দূরত্ব তার প্রায় তিনগুণ।
এর মানে হলো, ইউক্রেন এখন রাশিয়ার এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত করতে পারবে, যা এতদিন তাদের আওতার বাইরে ছিল।
এই ক্ষেপণাস্ত্র থাকায় ইউক্রেন এখন থেকে দখলীকৃত এলাকায় রুশ সামরিক অবস্থানগুলোর দিকে নজর দিতে পারবে।
আবার রুশ সামরিক পরিকল্পনাকারীদের এখন থেকে ভাবতে হবে কীভাবে তারা সরঞ্জাম, কমান্ড সেন্টার এবং সরবরাহ ব্যবস্থা নিরাপদ রাখতে পারে।
সেই সঙ্গে স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিমান ঘাটির হ্যাঙ্গার ভেদ করে আঘাত করতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষক বেন ব্যারি বলছেন, এর ফলে ইউক্রেনের দখলকৃত এলাকার ভেতরে থাকা রুশ বিমান ঘাটিগুলো এখন আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
এর ফলে রাশিয়া এখন তাদের বেশ কিছু বিমান ঘাটি সরিয়ে নিতে পারে।
সেটা হলে ইউক্রেন এখন যে সোভিয়েত যুগে তৈরি করা ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত সু-২৪ ফেন্সার জেট ফাইটারগুলো ব্যবহার করছে, সেগুলো ব্যবহার করে নিরাপদ দূরত্বে থেকেই বিমান হামলা করতে পারবে।
এর মধ্যেই স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্রের প্রভাব যুদ্ধ ক্ষেত্রে পড়তে শুরু করেছে।
গত ১২ই মে রাশিয়া দাবি করেছে, যুক্তরাজ্যের সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তাদের দখলে থাকা পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্কের দুটি শিল্প এলাকায় আঘাত করা হয়েছে।
তবে এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার কোন তথ্য এখনো জানায়নি ইউক্রেন। তবে দেশটি সম্প্রতি দাবি করেছে, ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্ব জাপোরিশা এলাকার ভেতরে বেরদিনস্ক বন্দরে রাশিয়ার একটি সামরিক সদর দপ্তরে তারা হামলা চালিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের স্টর্ম শ্যাডো বনাম যুক্তরাষ্ট্রের হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র
গত বছরের জুলাই মাস নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র যে হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সরবরাহ করেছে ইউক্রেনকে, সেগুলো ৫০ কিলোমিটার দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
এসব হামলার ফলে রাশিয়া তাদের অবস্থান সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে এবং সামরিক সরঞ্জামগুলো এসব ক্ষেপণাস্ত্রের আওতার বাইরে রাখছে।
আন্তোনিভকা সেতুর ওপরে ইউক্রেনের হামলার ফলে খেরসন শহর দখলে রাখা রুশ সৈন্যদের কাছে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছিল। ফলে রাশিয়া সৈন্যদের দানিপ্রো নদীর অন্য পাশে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল।
ইউক্রেন যুদ্ধের গতি বদলে দেয়ার ক্ষেত্রে হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকেও আংশিক কৃতিত্ব দেয়া হয়।
হিমার্সের তুলনায় ইউক্রেনের হয়তো কম স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, কিন্তু এগুলো রাশিয়ার যুদ্ধ পরিকল্পনায় বাধা তৈরি করতে ভালো কাজ দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের নিরাপত্তা বিশ্লেষক জে অ্যান্ড্রেস ঘানান বলছেন, “রাশিয়া যদি তাদের কমান্ড সেন্টার এবং সরবরাহ কেন্দ্রগুলোকে সুরক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয় বা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাদের আরও দূরে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে অবশ্যই তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার অভিযানগুলোকে শ্লথ করে দেবে।”
কৌশলগত অবস্থানগুলোতে এর মধ্যেই কার্যকারিতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্রগুলো, যদিও সেটি বেশি দূরের বা চলমান লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে না।
যেমন চলমান অবস্থায় গাড়ির ওপরে থাকা আকাশ প্রতিরক্ষা স্থাপনায় সহজে হামলা করা যায় না।
কিন্তু স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
এটি ব্যবহার করে ইউক্রেনের ভেতরে রাশিয়ার দখলকৃত এলাকায় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত করা যাবে।
যার ফলে ইউক্রেনের পাল্টা হামলা শুরুর আগে রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তোলা যাবে, যা বিশেষ সুবিধা দেবে ইউক্রেনের স্থল সৈন্যদের।
যদিও যুক্তরাজ্যের এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
রাশিয়ার ভেতরে এটির আঘাত করার ক্ষমতা থাকলেও ইউক্রেনকে এই শর্তে রাজি হতে হয়েছে যে, রুশ ফেডারেশনের ভেতরে সামরিক কোন স্থাপনায় হামলায়, এমনকি সীমান্তের অন্যপাশে হামলায় এগুলো ব্যবহার করা হবে না, যাতে যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হয়ে না পড়ে।
এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করে যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো, যদিও তাদের ক্ষেপণাস্ত্র আর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সরবরাহ সীমাহীন নয়।
যুক্তরাজ্য যখন ইউক্রেনকে তাদের প্রধান যুদ্ধাস্ত্র চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য ইউরোপিয় দেশগুলোও এরপর দেশটিকে ট্যাঙ্ক সরবরাহ করতে শুরু করে।
স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র হয়তো সেরকম আরেকটি উদাহরণ তৈরি করতে যাচ্ছে।