যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ একাউন্ট হ্যাকড, ১০ কোটি ডলার লাপাত্তা
বাংলা সংলাপ ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ডলার হাতিয়ে নিয়েছে বিদেশি হ্যাকাররা। বাংলাদেশি মূদ্রায় যার মূল্যমান প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ সাইবার অপরাধ সংগঠিত হয়। অবশ্য সোমাবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হ্যাকারদের হাতিয়ে নেয়া অর্থের একটি অংশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চুরি হওয়া অর্থের একটি অংশ ইতোমধ্যেই উদ্ধার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এই অর্থ উদ্ধারে এবং বাকি টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। ফিলিপাইনর অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় একটি মামলা করেছে এবং হ্যাকিং-এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব বন্ধ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানিয়েছে, এ ঘটনায় তাদের তদন্ত শেষ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে বিশ্ব ব্যাংকের স্টোলেন অ্যাসেটস রিকভারিকে (এসটিএআর) সম্পৃক্ত করা হবে। বিশ্বব্যাংকের একটি বিশেষজ্ঞ ও ফরেনসিক দল এ ব্যাপারে বিএফআইইউ-এর সঙ্গে কাজ করছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, চুরি হওয়া অর্থ ফেরত পেতে বাংলাদেশ ব্যাংক অত্যন্ত গোপনে মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে জোর তৎপরতা শুরু করেছে। প্রাথমিক তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, চীনা হ্যাকারদের একটি দল বিপুল এ অর্থ প্রথমে ফিলিপাইনের ব্যাংকিং চ্যানেলে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে অন্য কোথাও পাচার করে। হ্যাকের মাধ্যমে অর্থ চুরির বিষয়টি জানার পর দ্রুত তৎপরতা শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য জানতে নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করা হলে অর্থ চুরির বিষয়টি স্বীকার করলেও কেউ বিস্তারিত জানাতে চাননি। তারা বলছেন, তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বিপুল এ অর্থ চুরির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের বিনিয়োগ যেভাবে সংরক্ষিত হয়, তাতে ভেতরের কারও সহযোগিতা ছাড়া হ্যাক করে অর্থ চুরি করা খুবই জটিল। বিষয়টি নিয়ে এখন বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া দাপ্তরিক কাজে তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার ও অনলাইন কার্যক্রমের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার সতর্কতামূলক একটি অফিস আদেশও জারি করা হয়েছে।
এদিকে ফিলিপাইনের দৈনিক দ্য ইনকোয়েরার পত্রিকায় গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে ১০ কোটি ডলার মানি লন্ডারিং হয়েছে বলে একটা খবর প্রকাশ করে। ওই খবরে বলা হয়, দেশটির মাকাতি শহরে অবস্থিত রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের একটি শাখার মাধ্যমে ওই অর্থ ফিলিপাইনে আসে। চীনা হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা সেখানকার কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এ অর্থ হাতিয়ে নেয়। হ্যাকার দল এ অর্থ প্রথমে ফিলিপাইনে পাচার করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অর্থ পাচারের এ ঘটনা তদন্ত করছে ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল। বিভিন্ন তথ্যসূত্রের উদৃব্দতি দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পরে ওই অর্থ সেখান থেকে ক্যাসিনোসহ একাধিক হাত ঘুরে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, রিজার্ভের অর্থ কোন দেশে, কোথায় বিনিয়োগ বা সংরক্ষণ করা আছে তা সুইফট কোডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিশ্বব্যাপী সুরক্ষিত হিসেবে বিবেচিত এ নেটওয়ার্ক হ্যাক করে রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির ঘটনা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ঘটেছে। এরপর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশের (এনপিএসবি) চ্যানেলের মাধ্যমে সুইফট ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়েছে।