যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি বিভিন্ন সেবা বন্ধ হতে চলেছে
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃযুক্তরাষ্ট্রে নতুন বাজেট নিয়ে সিনেটে ঐকমত্য না হওয়ায় ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন সেবা এক এক করে বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করেছে।
আগামি ১৬ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফেডারেল সরকারের অর্থায়নের একটি বিল সেনেটে প্রয়োজনীয় ৬০টি ভোট না পাওয়াতেই এ সমস্যা। এর কারণ হলো সেনেটরদের মধ্যে অভিবাসন ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে চলমান তিক্ত বিবাদ।
এর ফলে শনিবার দিনের প্রথম প্রহর থেকে বহু সরকারি বিভাগ – যেমন গৃহায়ন, পরিবেশ, শিক্ষা এবং বাণিজ্য দফতরের বেশিরভাগ কর্মকর্তাই কাজে যাচ্ছেন না। এছাড়া অর্থ, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ – এই বিভাগগুলোর অর্ধেক কর্মচারী সোমবার কাজ করবেন না। জাতীয় উদ্যান এবং স্মৃতিসৌধগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, ভিসা এবং পাসপোর্টের কাজ বিলম্বিত হবে।
তবে জরুরি সেবাগুলো – ‘যেগুলো মানুষের জীবন ও সম্পদের সুরক্ষা দেয়’ – সেগুলো কাজ করা অব্যাহত রাখবে। এর মধ্যে আছে জাতীয় নিরাপত্তা, হাসপাতাল, বিদ্যুৎ, কারাগার, ডাক বিভাগ ইত্যাদি।
এই সরকারি সেবা বন্ধের ঘটনা এমন এক সময় ঘটছে – যখন মার্কিন কংগ্রেসের দুই কক্ষেই রিপাবলিকান পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, এবং প্রেসিডেন্টও একজন রিপাবলিকান। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আগে কখনো এমন হয় নি।
শেষবার যুক্তরাষ্ট্রে এরকম সরকারি সেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ২০১৩ সালে, চলেছিল ১৬ দিন। এতে প্রায় সাড়ে আট লাখ কর্মচারি কাজে যান নি, এবং সরকারের ২০০ কোটি ডলারের উৎপাদনশীলতার ক্ষতি হয়।
ফেডারেল কর্মচারীরা এ সময়টাকে বিনাবেতনে ছুটি হিসেবে পেয়ে থাকেন।
এর কারণ কি?
মূল সমস্যা হলো, যে যে ৭ লক্ষেরও বেশি অনিবন্ধিত অভিবাসী শিশু বয়েসে আমেরিকায় ঢুকেছেন, ডেমোক্র্যাটরা চাইছেন তাদের বহিষ্কারের হাত থেকে রক্ষা করতে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা এক কর্মষূচির মাধ্যমে তাদের সাময়িক আইনী বৈধতা দিয়েছিলেন।
কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন তিনি এ কর্মসূচি বন্ধ করে দেবেন এবং কংগ্রেসকে একটা নতুন পদক্ষেপ চূড়ান্ত করতে মার্চ মাস পর্যন্ত সময় দেন।
এরপর শুরু হয় দু’দলের মধ্যে দরকষাকষি।
মি. ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান চাইছিলেন ডেমোক্র্যাটদের এ প্রস্তাব মেনে নেবার বিনিময়ে তাদেরকে আবার রিপাবলিকানদের দুটি প্রকল্প মেনে নিতে হবে। এগুলো হচ্ছে – মেক্সিকো সীমান্তের দেয়াল নির্মাণ এবং নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুদের স্বাস্থ্যবীমা কর্মসূচির মেয়াদ বৃদ্ধি – যা ডেমোক্রাটরা বন্ধ করে দেবার পক্ষে।
কিন্তু উভয় দলের সম্মতি আছে এমন দুটি আপোষরফার প্রস্তাবকে মি. ট্রাম্প প্রত্যাখ্যান করেন। কিছু অভিবাসীর দেশকে নিয়ে তার করা ‘শিটহোল’ (বিষ্ঠার গর্ত) মন্তব্য সারা দুনিয়ার আলোচনা বিষয় হয়।
সেনেটে ডেমোক্রাট নেতা চাক শুমার বলেন, প্রেসিডেন্ট তার দলের ওপর কোন চাপ প্রয়োগ করেন নি।
তবে হোয়াইট হাউস ডেমোক্রাটদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে তারা জাতীয় স্বার্থের চেয়ে রাজনীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিবিসির সংবাদদাতারা বলছেন, এ নিয়ে আগামী দিনগুলোতে দু দলের দ্বন্দ্ব আরো তীব্র চেহারা নিতে পারে। তবে কোন দলই ফেডারেল সেবা বন্ধ হয়ে যাবার দায় ঘাড়ে নিতে চাইছে না।
তবে রিপাবলিকারন ও ডেমোক্রাট উভয় দলের নেতারাই বলেছেন যে তারা আলোচনা অব্যাহত রাখবেন।