যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ হামাসের, ইসরায়েল বলছে তাদের ‘মনঃপূত’ হয়নি
হামাস বলেছে, তারা কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতাকারীদেরকে জানিয়েছে যে ইসরায়েলের সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে তারা।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, “গোটা বিষয়টিই এখন ইসরায়েলের হাতে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের গৃহীত প্রস্তাবটি “ইসরায়েলের মৌলিক শর্তগুলো থেকে অনেক দূরে”, তবে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
এর আগে রাফাহ শহরের কিছু অংশ খালি করার জন্য ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করার পর ইসরায়েল সেখানে বিমান হামলা চালায়।
দীর্ঘদিন ধরেই হামাসের দখলকৃত দক্ষিণের শহরটিতে আক্রমণের হুমকি দিয়ে আসছিলো ইসরায়েল।
মনে করা হয়, শহরের কয়েক হাজার বাসিন্দা ইসরায়েলের এই অভিযানের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং সোমবার অনেককে নানা যানবাহনে কিংবা গাধার গাড়িতে উঠতেও দেখা গেছে।
ইসরায়েলি বিমান হামলার পর রাফাহ শহরের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে বাসিন্দাদেরকে সরে যাওয়ার আদেশকে একটি “বিপজ্জনক তীব্রতাবৃদ্ধি” বলে অভিহিত করেছেন একজন হামাস কর্মকর্তা।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভিত্তি হচ্ছে, যুদ্ধে এক সপ্তাহের বিরতি এবং কয়েক ডজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া, যারা হামাসের হাতে বন্দী।
সোমবার সন্ধ্যায় হামাস একটি বিবৃতিতে বলেছে, তাদের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহ কাতারের প্রধানমন্ত্রী এবং মিশরের গোয়েন্দা প্রধানকে “যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে তাদের প্রস্তাবের অনুমোদন” সম্পর্কে জানিয়েছেন।
প্রস্তাবের সাথে পরিচিত একজন জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন যে, শর্ত পূরণ হলে হামাস “সারাজীবনের জন্য শত্রুতামূলক কার্যকলাপ” বন্ধ করতে রাজি হয়েছে।
বিবৃতির ওই বাক্যাংশটি ইঙ্গিত দেয় যে হামাস তার সশস্ত্র সংগ্রামের সমাপ্তির কথা ভাবতে পারে, যদিও সেখানে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আর কিছু বলা হয়নি। এবারের যুদ্ধবিরতি চুক্তি দুই ধাপের। প্রতিটি ধাপ ৪২ দিন স্থায়ী হবে।
প্রথম ধাপে জিম্মি করা নারী ইসরায়েলি যোদ্ধাদেরকে মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে হবে, যাদের কেউ কেউ যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন।
এই সময়ের মাঝে ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজায় থাকবে। কিন্তু যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ১১ দিনের মধ্যে ইসরায়েল গাজা ভূখণ্ডের কেন্দ্রে গড়ে তোলা তাদের সামরিক স্থাপনাগুলো ভেঙ্গে ফেলা শুরু করবে এবং সালাহ-আল-দীন সড়ক থেকে সরে যাবে। এটি গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণের উপকূলীয় প্রধান সড়ক।
১১ দিন পর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তরে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
কর্মকর্তার মতে, গাজার অবরোধ সম্পূর্ণ তুলে নেওয়ার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়টি শেষ হবে।
হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, “বল এখন [ইসরায়েলের] কোর্টে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হবে না এতে বাধা দেবে।”
হামাসের বিবৃতির খবর ছড়িয়ে পড়লে গাজায় উৎযাপন করা হয়।
কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্স নিউজকে বলেছেন যে হামাস যে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে তা ছিল মিশরীয় প্রস্তাবের একটি “দুর্বল” সংস্করণ, যার মধ্যে “সুদূরপ্রসারী” চিন্তাভাবনা রয়েছে এবং ইসরায়েল তা মেনে নিতে পারেনি।
“ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির চুক্তি প্রত্যাখ্যানকারী পক্ষ হিসেবে দেখানোর একটি কৌশল বলে মনে হচ্ছে এটিকে,” ওই কর্মকর্তা বলেন।
পরে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে: “যদিও হামাসের প্রস্তাবটি ইসরায়েলের মৌলিক শর্ত থেকে অনেক দূরে, তারপরও ইসরায়েলের জন্য যে যে শর্তে চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব, সেই মর্মে মধ্যস্থতাকারীদের একটি প্রতিনিধি দলকে পাঠাবে ইসরায়েল।”
একই সময়ে, ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভা রাফাহ অভিযান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলেছে যে যুদ্ধের লক্ষ্যগুলোকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য হামাসের ওপর সামরিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। তাদের লক্ষ্যগুলো হচ্ছে: জিম্মিদের মুক্তি, হামাসের সামরিক ও শাসন ক্ষমতা ধ্বংস করা এবং ভবিষ্যতে গাজা যাতে ইসরায়েলের জন্য হুমকিস্বরূপ না হয়, তা নিশ্চিত করা।
এই বিবৃতি এমন সময়ে এসেছে, যখন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ঘোষণা করেছে যে তারা পূর্ব রাফাহতে হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের বলেছেন, কাতার ও মিশরকে সাথে নিয়ে একটি চুক্তি করার চেষ্টা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা হামাসের প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করছে এবং “অংশীদারদের সাথে এটি নিয়ে আলোচনা করছে।”
“আমরা বিশ্বাস করি যে ইসরায়েলি জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থ হচ্ছে জিম্মি চুক্তি। এটি ফিলিস্তিনি জনগণেরও সর্বোত্তম স্বার্থ,” তিনি যোগ করেন।
“এটি অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতি আনবে। এটি গাজায় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির অনুমতি দেবে এবং তাই আমরা একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে যাচ্ছি।”
গত বছরের সাতই অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণ অংশে হামলা চালিয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা ও ২৫০ জনকে জিম্মি করার পর থেকে এই যুদ্ধ শুরু হয়।
তবে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এ নিয়ে গাজায় ৩৪ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে।
গত নভেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি হয়েছিলো। এক সপ্তাহের সেই যুদ্ধবিরতিতে হামাস ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ২৪০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তির বিনিময়ে ১০৫ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে।
ইসরায়েল বলছে যে গাজায় ১২৮ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৩৪ জন মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।