যুব বিশ্বকাপ : ইতিহাস সৃষ্টি করে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। আসরের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে নেপালকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশের যুবারা। শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নেপাল নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২১১ রান সংগ্রহ করে। জবাবে বাংলাদেশ ৪৮.২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে।
যুব বিশ্বকাপের প্রথম আসর বাদে প্রতিটি আসরে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করলেও এবারই প্রথম সেমিফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। এর আগে যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল ২০০৬ সালে। সেবার পঞ্চম হয়েছিল বাংলাদেশ। শুধু যুব বিশ্বকাপ নয়, বৈশ্বিক যেকোনো ক্রিকেট টুর্নামেন্টে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য।
সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে আবারও সতর্কভাবে শুরু করে বাংলাদেশি যুবারা। অতিরিক্ত সতর্ক থাকলে যা হয়! নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাও ভুলতে বসে ক্রিকেটাররা। সেটা করেই বিপদ ডেকে আনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশের রান মাত্র ২১, ১ উইকেটের বিনিময়ে।
মন্থর গতিতে ব্যাটিং করা সাইফ হাসান এদিনও ২১ বল খেলে করেন ৫ রান! ছিল না কোনো বাউন্ডারি মারার প্রচেষ্টা। সাইফের বিদায়ের পর রান তুলে নেওয়ার কাজটা শুরু করেন পিনাক ও জয়রাজ শেখ। সিঙ্গেল ও ডাবলের সঙ্গে দুই-একটি বাউন্ডারি আসছিল তাদের ব্যাট থেকে। কিন্তু প্রায়ই রান নিতে গিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হচ্ছিল পিনাক ও জয়রাজের মধ্যে। ভাগ্য সহায় থাকায় দুবার ভুল করে বেঁচে গেলেও তৃতীয়বার ভুলের খেসারত দিতে হয় পিনাককে।
২০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কভারে ঠেলে গিয়ে এক রান নেন জয়রাজ। ফিল্ডার ভুল করায় এক রান ‘চুরি’ করতে যান জয়রাজ। কিন্তু অপরপ্রান্তে থাকা পিনাক কোনো আগ্রহই দেখাননি। ভুল করে দুজনই একপ্রান্তে। অন্যপ্রান্তে স্ট্যাম্প তুলে ফেলে নেপাল। জয়রাজ আগে ব্যাট উইকেটের ভেতরে প্লেস করায় রান আউটের শিকার পিনাক (৩২)। পিনাকের বিদায়ের পর গ্রুপ পর্বের সেরা ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত ক্রিজে আসেন। কিন্ত নিজের প্রতি সুবিচার করতে না পেরে লেগ স্পিনার সন্দ্বীপ ল্যামিচানের হাতে ফিরতি ক্যাচ দেন শান্ত (৮)।
এক প্রান্ত আগলে খেলে যান জয়রাজ শেখ। ডানহাতি এ টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান নিজের প্রতিভা দেখিয়ে দ্রুত রান তুলে নেন। কিন্তু ইনিংসের ২৯তম ওভারে থেমে যায় তার ব্যাটিং যাত্রা। ধামালার বলে আউট হওয়ার আগে ৬৭ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৩৮ রান করেন তিনি।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বাংলাদেশকে। নির্ভারতার প্রতীক অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ও জাকির হাসান অবিচ্ছিন্ন ১১৭ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জয় এনে দেন। জাকির ক্যারিয়ারের চতুর্থ ও মেহেদী দশম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। মিরাজ ব্যক্তিগত ২৫ ও ৫৫ রানে দুবার স্ট্যাম্পিংয়ের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন। দুবারই ব্যর্থ হন নেপালের অধিনায়ক রাজু রিজাল। অন্যদিকে জাকির হাসান ছিলেন ভয়ংকর। ৪৯তম ওভারে ১ চার ও ১ ছক্কায় জয় নিশ্চিত করেন জাকির। জাকির ৭৫ ও মেহেদী ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন। জাকির ৭৭ বলে ৫ চার ১ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান। ম্যাচসেরা নির্বাচিত হওয়া মিরাজের ইনিংসে ছিল ৩টি চারের মার।
এর আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২১১ রান সংগ্রহ করে নেপাল।
ফিল্ডিং করতে নেমে শুরুতেই দাপট দেখায় বাংলাদেশ। ১৯ রান খরচ করেই ২ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে পেসার সাইফউদ্দিনের বলে বোল্ড হন ওপেনার সন্দ্বীপ সুনার (৭)। পরের ওভারের প্রথম বলে আব্দুল হালিমের পরিবর্তে খেলতে নামা মেহেদী হাসান রানা চমক দেখান। গতির পাশাপাশি অসাধারণ এক বাউন্সে তুলে নেন প্রথম উইকেট। ব্যাটসম্যান জোগেন্দ্র সিং কারকি (১) ব্যাট নামিয়েও রক্ষা পাননি।
দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তুলে নেপাল। অধিনায়ক রাজু রিজাল ও সুনিল ধামালা ৪৪ রান যোগ করেন। বিপজ্জনক হয়ে উঠা এ জুটি ভাঙে রান আউটে। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে নাজমুল হোসেন শান্তর থ্রোতে উইকেটরক্ষক জাকির হাসান স্ট্যাম্প তুলে সুনিল ধামালাকে (২৫) আউট করেন।
চতুর্থ উইকেটে ৫১ রানের জুটি পায় নেপাল। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাটিং করে ৫৭ বলে ৫১ রান যোগ করেন রাজু রিজাল ও আরিফ শেখ। অধিনায়ক রাজু হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। এ সময় বাংলাদেশের অধিনায়ক স্পিন অ্যাটাক সরিয়ে পেস অ্যাটাক আনার পর সাফল্য পায় বাংলাদেশ। পেসার সাইফউদ্দিনের বল তুলে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন আরিফ শেখ (২১)। অসাধারণ দক্ষতকায় ক্যাচটি লুফে নিতে কোনো সমস্যাই হয়নি জয়রাজ শেখ ইমনের।
তবে একপ্রান্ত আগলে খেলে যেতে থাকেন রাজু রিজাল। হাফসেঞ্চুরির পরও বাংলাদেশের বোলারদের বেশ দাপট দেখিয়ে খেলে যেতে থাকেন ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান। তবে জুনিয়র টাইগারদের ফিল্ডিং নৈপুণ্যে হার মানতেই হয় তাকে। তার ৮০ বলে ৭২ রানের ইনিংসটি থেমে যায় শান্ত ও জাকির হাসানের ফিল্ডিংয়ে। রান আউট হয়ে ফিরে যান রাজু। অন্যপ্রান্তে থাকা বাহাতি রাজভির সিংকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি স্পিনার শাওন। শাওনের বলে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডাব্লিউর শিকার হন রাজভির সিং (৯)। শেষ দিকে দিপেন্দ্র সিং আইরি ২২ রান, প্রেম তামাং ২২ রান এবং কৌশল ভুটেলের ১৪ রানে ২১১ রানের পুঁজি পায় নেপাল।
বল হাতে বাংলাদের সেরা বোলার পেসার সাইফউদ্দিন। ৩৮ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। এ ছাড়া ১টি করে উইকেট নেন মেহেদী হাসান রানা, মেহেদী হাসান মিরাজ ও সালেহ আহমেদ শাওন।