যেভাবে হত্যা করা হলো বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী জাওয়াহিরিকে

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড ‘সন্ত্রাসী’ আল কায়েদার প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি। তাকে হত্যা পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার টিম। জাওয়াহিরিকে হত্যার নির্দেশ দেয়ার আগে জো বাইডেন নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন যে, তিনি কোথায় লুকিয়ে আছেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ড্রোন হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে তার আগে কয়েক মাস ধরে অতি গোপনে পরিকল্পনা সাজান প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও তার ‘টাইট সার্কেলের’ সিনিয়র উপদেষ্টারা। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জাওয়াহিরি যে নিরাপদ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, তার একটি ছোট আকারের মডেল প্রস্তুত করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তা প্রতিস্থাপন করেন হোয়াইট হাউজ সিচুয়েশন রুমে, যাতে বাইডেন পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তার বিকল্প সুযোগগুলোর বিষয়ে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন।

২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম মূলহোতা আয়মান আল জাওয়াহিরি। এ হিসেবে তিনি বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী।
তাকে হত্যা করতে গিয়ে যাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে দুর্ঘটনাবশত কোনো বেসামরিক মানুষের জীবন ঝুঁকিতে না পড়ে, সে দিকে নজর রাখতে হয়েছে। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের প্রত্যাহারের সময় ১১ মাস আগে এক বিশৃংখল অবস্থার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলা চালিয়েছিল। তাতে বেশ কিছু বেসামরিক মানুষ মারা গিয়েছিলেন। এবার যাতে তা না হয় সেদিকে কড়া নজর রাখা হয়।
সোমবার মিশন সম্পন্ন হওয়ার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তার আগে প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা হামলা ও এর পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করেন। তাতে বলা হয়, এই অভিযান নিয়ে কয়েক মাস ধরে পরিকল্পনা সাজানো হয়। বার বার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন জো বাইডেন, যাতে কোনো বেসামরিক মানুষ, এমনকি জাওয়াহিরির পরিবারের কেউ যাতে নিহত না হন, তা নিশ্চিত করতে। অবশেষে অভিযানে কোনো বেসামরিক মানুষ মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন দ্বিতীয়বার করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত। তিনি আইসোলেশনে আছেন। তবে হোয়াইট হাউজের ব্যালকনিতে বেরিয়ে আসেন সোমবার। সেখান থেকে তিনি ঘোষণা দেন আয়মান আল জাওয়াহিরিকে হত্যার। আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বেশ জটিল অবস্থায় আছেন যখন প্রেসিডেন্ট বাইডেন, তখন এই ঘোষণা, এই মুহূর্ত তার জন্য বড় এক বিজয় এনে দিয়েছে। তিনি ঘোষণায় বলেছেন, বিশ্ববাসীর আর ভয়াবহ ও সংকল্পবদ্ধ খুনি থেকে আতঙ্কিত হওয়া দরকার নেই।
এর আগে এপ্রিলে প্রেসিডেন্টকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা প্রথম জাওয়াহিরির নিরাপদ আস্তানা সম্পর্কে ব্রিফ করেন। আফগানিস্তানের রাজধানীতে এই নেতার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রচেষ্টায় তার স্ত্রী, কন্যা ও ছেলেমেয়েদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয় যুক্তরাষ্ট্র। এ বছর কাবুলে পৌঁছেন জাওয়াহিরি। তারপর থেকে তিনি ওই অবস্থান ত্যাগ করেননি। সেই বাড়ির ব্যালকনিতে কখন উপস্থিত হন জাওয়াহিরি, সেদিকে দৃষ্টি রাখেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তার কর্মকাণ্ড অব্যাহতভাবে মনিটরিং করতে থাকেন তারা। ওই ভবনটির গঠন ও গাঠনিক কাঠামো নিয়ে গোপনে বিশ্লেষণ করেন তারা। যাতে অভিযানে কোনো বেসামরিক মানুষ মারা না যায়, সে জন্য ওই বাড়িতে অবস্থানকারী অন্যদের বিষয়ে নিরপেক্ষ বিশ্লেষণকারীরা বিশ্লেষণ করেন। কিন্তু বাড়িটি কাবুলের ডাউনটাউনে অবস্থিত হওয়ায় বিষয়টি জটিল হয়ে পড়ে।

এর চারপাশ ঘিরে আছে আবাসিক ভবন। বিষয়টি মাথায় রাখতে হয় কর্মকর্তাদের। এক্ষেত্রে অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে নিরেট তথ্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ফলে এই পরিকল্পনা যাতে প্রকাশ না হয়ে পড়ে, তাই একটি ছোট্ট ও নির্বাচিত গ্রুপের সদস্য এই পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারেন। তারা বিভিন্ন সংস্থার।
মে ও জুন মাসে বিষয়টিতে আরও অগ্রগতি হয়। গোপনীয়তা বুকের ভিতর চেপে রাখেন বাইডেন। ১লা জুলাই তিনি হোয়াইট হাউজের সিচুয়েশন রুমে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের ডেকে নেন। তাদেরকে একটি অপারেশনের প্রস্তাব দেন। এতে তার সামনে টেবিলে উপস্থিত ছিলেন সিআইএ পরিচালক বিল বার্নস, ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক অ্যাভরিল হেইন্স, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান, তার ডেপুটি জন ফিনার, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি উপদেষ্টা লিস শেরউড র‌্যান্ডল। এর ভিত্তিতে জাওয়াহিরির বাড়ির একটি মডেল বানানো হয়। প্রেসিডেন্ট যাতে তা পরীক্ষা করতে পারেন, সেজন্য তা রাখা হয় হোয়াইট হাউজে। সূর্যের আলো কিভাবে তাতে রোদ দেয়, বাড়িটি নির্মাণে কি সরঞ্জাম ব্যবহার হয়েছে এবং কোনো অপারেশনে গেলে আবহাওয়া কেমন হবে এ বিষয়ে জানতে চান বাইডেন। তিনি তার টিমকে ওই ভবন সম্পর্কে আরও তথ্য দিতে বলেন। একই দিন বিকেলে তিনি উড়ে যান ক্যাম্প ডেভিডে। কিন্তু হোয়াইট হাউজে রয়ে যায় তার টিম। তারা সিচুয়েশন রুমে পরের সপ্তাহগুলোতে পরিকল্পনা সাজাতে থাকেন এবং তা প্রেসিডেন্টকে জানাতে থাকেন।

২৫ শে জুলাই করোনা পজেটিভ হওয়ার পর হোয়াইট হাউজের আবাসনে আইসোলেশনে চলে যান বাইডেন। তবে চূড়ান্ত ব্রিফিং পেতে তিনি কাছাকাছি রাখেন তার টিমকে। আবারও তিনি বেসামরিক প্রাণহানির বিষয়ে সতর্ক করেন। এর ৫ দিন পরে কাবুলের স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ১৮ মিনিটে জাওয়াহিরির নিরাপদ আস্তানার ব্যালকনিতে হামলা চালাতে দুটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এতেই নিহত হন জাওয়াহিরি।


Spread the love

Leave a Reply