যেসব ছবির মাধ্যমে আলোড়ন তোলেন বাংলাদেশের আলোকচিত্রী শহিদুল আলম
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বাংলাদেশের সুপরিচিত ফটোগ্রাফার এবং অ্যাকটিভিস্ট শহিদুল আলম এখন কারাগারে।
নিরাপদ সড়কের দাবিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ছাত্র বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে মি: আলমকে আটক করা হয়।
সে বিক্ষোভের সময় নিরাপদ সড়ক নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ এবং হতাশার চিত্র ক্যামেরা বন্দি করেন মি: আলম।
মি: আলম আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেল এবং ফেসবুকে সরকারের ভূমিকা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন।
মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য তিনি এখন অভিযুক্ত। বিতর্কিত ইন্টারনেট আইনের আওতায় এখন তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে।
মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিক্ষোভের পর সরকারের সমালোচক অনেককেই আটক করা হয়েছে।
৬৩ বছর বয়সী মি: আলম বলেছেন তাকে পুলিশের হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, লেখক এবং কয়েকশ আলোকচিত্রী মি: আলমের মুক্তি চেয়েছেন।
গত কয়েক দশক ধরে মি: আলম বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাবলী তাঁর ক্যামেরা বন্দি করেছেন।
তাঁর আলোকচিত্র বিশ্বের অনেক নামকরা সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছে।
ঢাকায় সুপরিচিত ফটোগ্রাফির প্রতিষ্ঠান দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
বাংলাদেশের একটি প্রজন্মের ফটোগ্রাফারদের প্রশিক্ষিত করার পেছনে তাঁর অবদান আছে।
গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম
১৯৮০’র দশকের শেষের দিকে একটি সংঘাতময় পরিস্থিতিতে প্রবেশ করে বাংলাদেশ।
গণআন্দোলন, হরতাল-ধর্মঘট এবং অস্থিরতার কারণে রাজনৈতিক পরিবর্তন আসে যার মাধ্যমে ১৯৯০ সালে জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান হয়।সে সময়ের নানা বিক্ষোভ এবং সহিংসতার ঘটনা শহিদুল আলম তাঁর ক্যামেরা-বন্দী করেছেন।
প্রেসিডেন্ট এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের একজন সুপরিচিত কর্মী ছিল নূর হোসেন।
১৯৮৭ সালে এক বিক্ষোভের সময় তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হন। গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্য শহীদ হবার কারণে তাকে এখনো স্মরণ করা হয়।
১৯৮৭ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে নূর হোসেনের মৃত্যুর পর ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়।
সে কর্মসূচীর আগে সরকার জরুরী অবস্থা জারী করে।
১৯৯০ সালে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হয়ে জেনারেল এরশাদের পতনের জন্য আন্দোলন শুরু করে।
১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসের চার তারিখ রাতে প্রেসিডেন্ট এরশাদ পদত্যাগ করেন।
সে সময় ঢাকার রাস্তায় উল্লসিত মানুষের ছবি ক্যামেরায় ধারণ করেছেন শহিদুল আলম।
১৯৯১ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বদলের সে দিনের ছবিও তুলেছেন মি: আলম।
‘ক্রসফায়ার’ হত্যাকাণ্ড
শহিদুল আলম শুধু বাংলাদেশের সংঘাতময় রাজনৈতিক ইতিহাসই ক্যামেরা-বন্দী করেননি, তিনি নানা বিতর্কিত বিষয়ও তাঁর কাজের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব-এর বিতর্কিত অভিযানের বিষয়গুলোও তুলে ধরেছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং মানবাধিকার কর্মীরা বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের নিন্দা জানিয়ে সেগুলো তদন্তের আহবান জানিয়েছে।
ক্রসফায়ার নিয়ে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজনও করেছিলেন শহিদুল আলম। কিন্তু পুলিশ সেটি বন্ধ করে দিয়েছিল।
এসব ছবিতে প্রকৃত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি ততটা উঠে আসেনি।
বরং কোন প্রেক্ষাপটে এবং কোথায় এসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে বা মৃতদেহ পাওয়া গেছে সেসব জায়গা তুলে ধরা হয়েছে।
বন্যা এবং সাইক্লোন
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নানা বিষয় শহিদুল আলমের আলোকচিত্রে উঠে এসেছে।
বন্যা এবং সাইক্লোনের কারণে নগর জীবনের দুর্দশা, ফসলহানি, মানুষের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, মৃত্যৃ এবং বাস্তু-চ্যুত মানুষের ছবি উঠে এসেছে তাঁর ক্যামেরায়।
১৯৮৮ সালের বন্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হিসেবে চিহ্নিত।
রাজধানী ঢাকার একটি বড় অংশসহ দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে ছিল। তখন লক্ষ-লক্ষ মানুষ বাস্তু-চ্যুত হয়।
সুত্র-বিবিসি বাংলা