রাজনীতি এবং আলাদীনের চেরাগ !
আহমেদ শামীম:
যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্কে জড়ালে কেউ কাউকে সহজে ছাড় দিতে রাজি না, সেটা- রাজনীতি।এতে অনাকাঙ্ক্ষিত মতবিরোধও দেখা দেয় । মোদ্দাকথা, কেউ নিজ দলের ত্রুটি খুঁজে পায়না। সব দোষ অন্য দলের। অর্থাৎ “যত দোষ নন্দ ঘোষ”-এর মত অবস্থা ! সবাই থাকতে চায় জিতের নৌকায় ! বেশিরভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন না কোন দলের সাপোর্টার।
ঘরে ঘরে রাজনৈতিক উন্মাদনা ।শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই বুঝে রাজনীতি।শিক্ষিত- অশিক্ষিত কেউ এর বাইরে নয়। প্রত্যেকে পার্টি চেনে। নেতা-নেত্রী চেনে।রাজনৈতিক জ্ঞানগরিমায় একেকজন মহা পণ্ডিত।নেতা হওয়া, জনপ্রতিনিধি হওয়া, এমপি-মন্ত্রী হওয়ার খায়েশ যেন আঁতুড়ঘর থেকেই শুরু! রাজনীতি হয়ে গেছে মহা আকর্ষণীয় নেশা এবং পেশা। কোনভাবে তাতে জড়ালেই কেল্লাফতে। আর পদপদবী কব্জা করতে পারলে তো কপাল খুলে যায়।আলাদীনের চেরাগ চলে আসে হাতে । রাতারাতি বদলে ফেলা যায় জীবনের চাকা। জিরো থেকে হিরো হওয়ার সোপান তৈরী হয় ।শূন্য থেকে বিশাল বিত্ত ভৈরবের মালিক হওয়া মামুলি ব্যাপার।
রাজনীতির চরম বিকেন্দ্রীকরণ ঘটায় ঘরে ঘরে দেখা দেয় অশান্তি।মত-পথের ভিন্নতা, সংকীর্ণতা,মতদ্বৈততা, বিবাদ বৈষম্যের সূত্রপাত ঘটে নীরবে নিভৃতে ।পক্ষান্তরে, ভয়াল রাজনীতির কালো থাবায় রক্তারক্তির ঘটনাও অতি স্বাভাবিক।হিংস্র উন্মত্ততায় কত মায়ের বুক খালি হয়। কত সন্তান হয় পিতৃহারা-স্বজনহারা। কত মা-বোন অকালে বিধবা হয় । পঙ্গুত্ব বরণ করে দুর্বিষহ জীবনের পথ বেছে নিতে হয় অগুনিত মানুষকে।আর সহায় সম্পদ,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি বিনষ্টের হিসাব তো ধর্তব্যের মধ্যে পড়েনা !
কোথায় নেই রাজনীতি? সবদিকেই এর জঞ্জাল বিস্তৃত ।যে কোন আড্ডায় কিংবা শিক্ষাঙ্গন, কলকারখানা, অফিস আদালত, ব্যবসা বাণিজ্য, চিকিৎসাঙ্গণ, মিডিয়া- সর্বত্রই রাজনীতিতে সয়লাব। সহাবস্থান সুদূর পরাহত ।অন্তর্দ্বন্ধের বহিঃপ্রকাশ যত্রতত্র ।কেউ কাউকে বিশ্বাসের জায়গায় স্থান দিতে রাজি না। চারিদিকে আস্থার সংকট।
সমাজ জীবনে রাজনীতির মহাবিস্তার ঘটায় যে কেউ অতি সহজে রাজনীতিবিদ হয়ে যায়। রাজনীতিতে জড়িয়ে ব্যবসায়ীরা দখলে নেয় বড় বড় পদপদবী। ডাক্তার, খেলোয়াড়, নায়ক, গায়কেরা হয়ে যায় এমপি-মন্ত্রী ।
রাজনীতি করা দোষের কিছু নয়। রাজনীতিকরা দেশ চালান। জাতির আশা আকাংখার প্রতীক হন তারা।তবে সবাই রাজনীতিবিদ হয়ে গেলে রাজনীতির বারোটা বাজাই স্বাভাবিক।এক সময় হাতে পাওয়া আলাদীনের চেরাগ থেকে বেরিয়ে আসে দৈত্য। সেই দৈত্য অসাধু রাজনীতিকদের লাল ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে পিছপা হয়না।
প্রশ্ন উঠেছে- পড়ালেখা বাদ দিয়ে ছাত্ররা কেন রাজনীতি করবে? বিভিন্ন পেশায় কিংবা খেলাধূলায় যারা অবদান রাখছেন তারা কেন রাজনীতিতে জড়াবে? রাজনীতিক হওয়ার জন্যে বিস্তর জ্ঞানার্জন দরকার । দেশ দুনিয়া সম্পর্কে বিষদ অবগত হওয়া জরুরি । খোলা মন নিয়ে মানবিক হয়ে মানব সেবায় ব্রত হতে হবে। নিজেকে সমাজ জাতি ও দেশের জন্য সুযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা অপরিহার্য । নির্লোভ, নিরহংকার, নিঃস্বার্থ থাকতে হবে। পদপদবীর মোহ ত্যাগ করে প্রকৃত দেশপ্রেমিক হতে হবে সর্বাগ্রে। তারপরে রাজনীতিতে জড়ানো উচিত । তখন আপনি শুধু বড় নেতা হবেন না, মানুষ আপনাকে মাথায় তুলে রাখবে।বুকের গভীরে স্থান দেবে চিরকাল। সকলের শ্রদ্ধা ভালবাসায় বেঁচে থাকবেন হাজার বছর। নতুবা নিক্ষিপ্ত হবেন ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। আপনার কর্ম আপনাকে যথার্থ স্থানে সমাসীন করবে-এটাই প্রকৃতির নিয়ম ।
লেখকঃ বার্তা সম্পাদক,
সাপ্তাহিক বাংলা সংলাপ, লন্ডন ।