রানি এলিজাবেথ: রাজপরিবারে সিংহাসনের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে কে আগে, কে পরে
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তাঁর বড় ছেলে চার্লস এখন রাজা হয়েছেন। তিনি রাজা তৃতীয় চার্লস নামে পরিচিত হবেন। ১৬৮৫ সালের পর এই প্রথম চার্লস নামের কেউ সিংহাসনে বসলেন। রানি মারা যান ৮ই সেপ্টেম্বর। ব্রিটিশ ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে ছিলেন। ব্রিটিশ রাজপরিবার এবং তাদের বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকারের তালিকার বিস্তারিত এই প্রতিবেদনে:
রাজা তৃতীয় চার্লস, জন্ম: ১৯৪৮
চার্লস রাজা হয়েছেন তাঁর মা মারা যাওয়ার ঠিক পরের মূহুর্ত হতে।
সাবেক প্রিন্স অব ওয়েলস ১৯৮১ সালের ২৯শে জুলাই বিয়ে করেছিলেন লেডি ডায়ানা স্পেন্সারকে। ডায়ানা বিয়ের পর প্রিন্সেস অব ওয়েলস নামে পরিচিত হন। এই দম্পতির দুটি ছেলে, উইলিয়াম এবং হ্যারি। চার্লস এবং ডায়ানা পরে আলাদা হয়ে যান এবং তাঁদের বিয়ে ১৯৯৬ সালে ভেঙ্গে যায়। প্রিন্সেস ডায়ানা ১৯৯৭ সালের ৩১শে অগাস্ট প্যারিসে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। চার্লস ২০০৫ সালের ৯ই এপ্রিল ক্যামিলা পার্কার বোলসকে বিয়ে করেন। রানি মারা যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন তাঁর ছেলে যখন রাজা হবেন, তখন যেন ক্যামিলা, যিনি ডাচেস অব কর্নওয়াল, কুইন কনসর্ট হিসেবে পরিচিত হন।
সিংহাসনের উত্তরাধিকারের ক্রমতালিকা:
১. উইলিয়াম, প্রিন্স অব ওয়েলস, জন্ম: ১৯৮২
প্রিন্স উইলিয়াম হচ্ছেন রাজা তৃতীয় চার্লস এবং ডায়ানার বড় ছেলে। তিনি এখন প্রিন্স অব ওয়েলস। ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকায় তিনিই এখন এক নম্বরে। যখন তার মা মারা যান, তখন তার বয়স ছিল ১৫। তিনি পড়াশোনা করেছেন সেন্ট এন্ড্রুজ ইউনিভার্সিটিতে। সেখানেই তাঁর ভবিষ্যতের স্ত্রী কেইট মিডলটনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। তাঁরা বিয়ে করেন ২০১১ সালে।
তাঁর ২১তম জন্মদিনে তাঁকে রাষ্ট্রীয় পরামর্শক নিযুক্ত করা হয়। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তিনি রানির প্রতিনিধিত্ব করতেন। তিনি এবং তাঁর স্ত্রীর প্রথম সন্তান জর্জের জন্ম হয় ২০১৩ সালের জুলাইতে। তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান শার্লোটের জন্ম ২০১৫ সালে, এবং তৃতীয় সন্তান লুইজের জন্ম ২০১৮ সালে।
প্রিন্স উইলিয়াম সেনাবাহিনী, রাজকীয় নৌবাহিনী এবং রাজকীয় বিমানবাহিনীতে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি রাজকীয় বিমানবাহিনীতে তল্লাশি এবং উদ্ধারকারী পাইলট হিসেবে তিন বছর উত্তর ওয়েলসে কাজ করেন। এরপর অন্যান্য রাজকীয় দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি দু’বছর ইস্ট অ্যাংলিয়ান এয়ার এম্বুলেন্সের একজন খন্ডকালীন কো-পাইলট হিসেবেও কাজ করেন। রানি এবং ডিউক অব এডিনবরার পক্ষে আরও দায়িত্ব পালনের জন্য ২০১৭ সালে তিনি এই কাজ ছেড়ে দেন।
উইলিয়াম তাঁর বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে ডাচি অব কর্নওয়াল পেয়েছেন এবং এখন তিনি প্রিন্স অব ওয়েলস। তাঁর স্ত্রী ক্যাথরিন এখন প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে তাঁর প্রধান দায়িত্ব রাজাকে তাঁর রাজকীয় কর্তব্যে সহযোগিতা করা।
২. প্রিন্স জর্জ অব ওয়েলস, জন্ম: ২০১৩
প্রিন্স জর্জ অব ওয়েলসের জন্ম ২০১৩ সালের ২২শে জুলাই লন্ডনের সেন্ট মেরি’জ হাসপাতালে। ছেলের জন্মের সময় প্রিন্স উইলিয়াম সেখানে উপস্থিত ছিলেন, জন্মের সময় তার ওজন হয়েছিল ৮ পাউন্ড ৬ আউন্স (৩ দশমিক ৮ কেজি)।
সিংহাসনের উত্তরাধিকার তালিকায় প্রিন্স জর্জ আছেন দুই নম্বরে, তার বাবার ঠিক পরে।
৩. প্রিন্সেস শার্লোট অব ওয়েলস, জন্ম: ২০১৫
প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিন তার দ্বিতীয় সন্তান শার্লোট এলিজাবেথ ডায়ানার জন্ম দেন ২০১৫ সালের ২রা মে লন্ডনের সেন্ট মেরি’জ হাসপাতালে। ৮ পাউন্ড ৩ আউন্স ওজনের (৩ দশমিক ৭ কেজি) দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের সময় উইলিয়াম সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
উত্তরাধিকারের ক্রমতালিকায় শার্লোট আছেন তিন নম্বরে, তার বাবা এবং বড় ভাইয়ের ঠিক পরে। তিনি পরিচিত হার রয়্যাল হাইনেস প্রিন্সেস শার্লোট অব ওয়েলস হিসেবে।
৪. প্রিন্স লুইজ অব ওয়েলস, জন্ম: ২০১৮
নতুন প্রিন্সেস অব ওয়েলস তার তৃতীয় সন্তানের জন্ম দেন ২০১৮ সালের ২৩শে এপ্রিল। লন্ডনের সেন্ট মেরি’জ হাসপাতালে জন্ম নেয়া ছেলে শিশুটির ওজন ছিল ৮ পাউন্ড ৭ আউন্স। লুইজ আর্থার চার্লসের জন্মের সময় বাবা উইলিয়াম সেখানে উপস্থিত ছিলেন। উত্তরাধিকারের ক্রম তালিকায় লুইজ আছেন ৪ নম্বর স্থানে।
৫. প্রিন্স হ্যারি, ডিউক অব সাসেক্স, জন্ম: ১৯৮৪
প্রিন্স হ্যারি স্যান্ডহার্স্টের রয়্যাল মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে পরে সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি একজন হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবে কাজ করতেন।
সশস্ত্র বাহিনীতে ১০ বছর কাজ করার সময় তিনি ক্যাপ্টেন ওয়েলস নামে পরিচিত হন। তিনি আফগানিস্তানে ২০১২ হতে ২০১৩ পর্যন্ত দুবার সক্রিয় সৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন। একবার অ্যাপাচি হেলিকপ্টারের কো-পাইলট হিসেবে, আরেকবার গানার হিসেবে।
তিনি ২০১৫ সালে সেনাবাহিনী ছেড়ে দেন এবং এখন জনকল্যাণমূলক কাজে মনোনিবেশ করেছেন।
এরমধ্যে আছে আফ্রিকায় প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং সশস্ত্র বাহিনীর আহত সদস্যদের জন্য ইনভিক্টাস গেমসের আয়োজনের মতো কাজ।
তার ২১তম জন্মদিন হতে তিনি রাষ্ট্রীয় পরামর্শক নিযুক্ত হন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রানির প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
তিনি ২০১৮ সালের ১৯শে মে মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেলকে উইন্ডসর প্রাসাদে বিয়ে করেন। এই রাজকীয় দম্পতি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ঘোষণা করেন যে তারা রাজপরিবারের সিনিয়র সদস্যের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেবেন এবং যুক্তরাজ্য এবং উত্তর আমেরিকায় সময় ভাগাভাগি করে থাকবেন। দুজন আরও বলেছিলেন, “আর্থিকভাবে স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করবেন তাঁরা।”
এর প্রায় এক বছর পরে, বাকিংহাম প্রাসাদ নিশ্চিত করেছিল যে, এই দম্পতি আর রাজকীয় দায়িত্বে ফিরে আসবেন না, এবং তাদের সন্মানিত সামরিক উপাধি এবং রাজকীয় সুযোগ-সুবিধা ত্যাগ করবেন।
৬. আর্চি হ্যারিসন মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর, জন্ম: ২০১৯
ডিউক এন্ড ডাচেস অব সাসেক্সের প্রথম সন্তান আর্চি হ্যারিসন মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসরের জন্ম ২০১৯ সালের ৬ই মে। জন্মের সময় ওজন ছিল ৭ পাউন্ড ৩ আউন্স, জন্মকালে পাশে উপস্থিত ছিলেন বাবা হ্যারি। এই দম্পতি তাদের প্রথম সন্তানের যে নাম রেখেছেন, তাতে কোন রাজকীয় উপাধি ব্যবহার করেন নি। যখন তার নাম ঘোষণা করা হয়, বিবিসির রাজপরিবার বিষয়ক সংবাদদাতা জনি ডায়মন্ড বলেছিলেন, এই সিদ্ধান্তের মধ্যে এমন ইঙ্গিত স্পষ্ট ছিল যে, এই দম্পতি তাদের সন্তানকে রাজপরিবারের আনুষ্ঠানিক সদস্য হিসেবে বড় করতে চান না।
৭. লিলিবেট ডায়ানা মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর, জন্ম: ২০২১
ডাচেস অব সাসেক্স তাঁর দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেন ২০২১ সালের ৪ঠা জুন ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারায়। রানির নামের সঙ্গে মিলিয়ে তার নাম রাখা হয় লিলিবেট ডায়ানা মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর, তবে ডাকা হয় লিলি নামে। রাজপরিবারে রানিকেও ডাকা হতো লিলিবেট নামে। লিলি রানির প্রপৌত্র-প্রপৌত্রীদের মধ্যে ১১তম। তার মধ্যম নাম রাখা হয় ডায়ানা, প্রিন্স হ্যারির মা ডায়ানার স্মরণে, যিনি ১৯৯৭ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। তখন হ্যারির বয়স ছিল ১২ বছর।
৮. ডিউক অব ইয়র্ক, জন্ম: ১৯৬০
রাজসিংহাসনের বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকারের তালিকায় প্রিন্স এন্ড্রু আছেন ৮ নম্বরে। তিনি রানি এবং ডিউক অব এডিনবরার তৃতীয় সন্তান। যখন তার জন্ম হয়, তখন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনে। ১৯৮৬ সালে তিনি সারাহ ফারগুসনকে বিয়ে করার পর তাকে ডিউক অব ইয়র্ক করা হয়। তার স্ত্রী হন ডাচেস অব ইয়র্ক। তাদের দুই মেয়ে- বিয়াট্রিসের জন্ম ১৯৮৮ সালে, এবং ইউজিনের জন্ম ১৯৯০ সালে। ডিউক এবং ডাচেস অব ইয়র্ক ১৯৯২ সালের মার্চে পৃথক হবেন বলে ঘোষণা করা হয়। তাদের বিয়ে ভেঙ্গে যায় ১৯৯৬ সালে।
ডিউক অব ইয়র্ক রাজকীয় নৌবাহিনীতে কাজ করেন ২২ বছর। তিনি ১৯৮২ সালের ফকল্যান্ড যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। রাজকীয় নানা দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের বিশেষ বাণিজ্য দূত হিসেবেও কাজ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়ে ২০১৯ সালে বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকার দেয়ার পর প্রিন্স এন্ড্রু তার রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে যান। জেফরি এপস্টেইন যৌনকাজের জন্য মেয়ে পাচার এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিচারের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় আত্মহত্যা করেছিলেন।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রিন্স এন্ড্রু যুক্তরাষ্ট্রে তার বিরুদ্ধে আনা এক যৌন হামলার মামলার নিস্পত্তির জন্য অভিযোগকারীর সঙ্গে আদালতের বাইরে সমঝোতা করেন, এজন্যে তিনি কত অর্থ দিয়েছেন তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে তিনি দায় স্বীকার করেননি এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বার বার অস্বীকার করে গেছেন।
৯. প্রিন্সেস বিয়াট্রিস, জন্ম: ১৯৮৮
প্রিন্সেস বিয়াট্রিস হচ্ছেন প্রিন্স এন্ড্রু এবং সারাহ, ডাচেস অব ইয়র্কের বড় মেয়ে। তার পুরো পদবী হচ্ছে হার রয়্যাল হাইনেস প্রিন্সেস বিয়াট্রিস অব ইয়র্ক। তাঁর কোন পারিবারিক নাম নেই, তবে ইয়র্ক নামটি ব্যবহার করেন। তিনি প্রপার্টি ধনকুবের এডোয়ার্ডো মাপেলি মোজিকে ২০২০ সালের জুলাই মাসে উইন্ডসরের রয়্যাল লজের অল সেইন্টস চ্যাপেলে বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে করার কথা ছিল মে মাসে, কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এটি বিলম্বিত হয়।
১০. সিয়েনা এলিজাবেথ মাপেলি মোজি, জন্ম: ২০২১
প্রিন্সেস বিয়াট্রিস ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এক কন্যা শিশুর জন্ম দেন, সিয়েনা এলিজাবেথ। সিংহাসনের উত্তরাধিকারের ক্রমতালিকায় তার অবস্থান ১০ এবং রানির প্রপৌত্র-প্রপৌত্রীদের মধ্যে ১২তম। প্রিন্সেস বিয়াট্রিসের স্বামী মিস্টার মাপেলির আগের জীবনসঙ্গী ডারা হুয়াঙ এর সঙ্গেও একটি ছেলে আছে, নাম ক্রিস্টোফার উলফ, যাকে উলফি নামে ডাকা হয়। প্রিন্সেস বিয়াট্রিস উলফির সৎ মা।
১১. প্রিন্সেস ইউজিন, জন্ম: ১৯৯০
প্রিন্সেস ইউজিন হচ্ছেন প্রিন্স এন্ড্রু এবং সারাহ, ডাচেস অব ইয়র্কের ছোট মেয়ে। তার পুরো পদবী হার রয়্যাল হাইনেস প্রিন্সেস ইউজিন অব ইয়র্ক এবং সিংহাসনের উত্তরাধিকারের ক্রমতালিকায় তিনি আছেন ১১ নম্বরে।
তার বোন প্রিন্সেস বিয়াট্রিসের মতো তিনিও কোন পারিবারিক নাম ব্যবহার করেন না, এর বদলে ইয়র্ক নামটি ব্যবহার করেন। তার দীর্ঘদিনের প্রেমিক জ্যাক ব্রুকসব্যাংকের সঙ্গে ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর উইন্ডসর ক্যাসেলে তার বিয়ে হয়।
১২. অগাস্ট ফিলিপ হক ব্রুকসব্যাংক, জন্ম: ২০২১
প্রিন্সেস ইউজিন এবং জ্যাক ব্রুকসব্যাংকের ছেলে অগাস্টের জন্ম ২০২১ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি, রানির প্রপৌত্র-প্রপৌত্রীদের মধ্যে তার অবস্থান ৯ম।
১৩. দ্য আর্ল অব ওয়েসেক্স, জন্ম: ১৯৬৪
প্রিন্স এডওয়ার্ড ১৯৯৯ সালে যখন সোফি রিজ-জোনসকে বিয়ে করেন তখন তাকে আর্ল অব ওয়েসেক্স এবং ভাইকাউন্ট সেভের্ন পদবী দেয়া হয়। এই দম্পতির দুটি সন্তান: লেডি লুইজ, যার জন্ম ২০০৩ সালে, এবং জেমস, ভাইকাউন্ট সেভের্ন, যার জন্ম ২০০৭ সালে।
প্রিন্স এডওয়ার্ড অল্প কিছুদিন রাজকীয় নৌবাহিনীতে কাজ করেন। এরপর তিনি নিজের একটি টেলিভিশন প্রোডাকশন কোম্পানি খোলেন। পরবর্তীকালে তিনি রানিকে রাজকীয় দায়িত্ব পালনে সহায়তা করেন এবং বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে রানির প্রতিনিধিত্ব করেন। রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারের ক্রমতালিকায় তিনি আছেন ১৩ নম্বরে।
১৪. জেমস, ভাইকাউন্ট সেভের্ন, জন্ম: ২০০৭
ভাইকাউন্ট সেভের্ন হচ্ছেন আর্ল এবং কাউন্টেস অব ওয়েসেক্সের কনিষ্ঠ সন্তান। এই দম্পতি তাদের সন্তানদের প্রিন্স বা প্রিন্সেস উপাধির পরিবর্তে একজন আর্লের ছেলে বা মেয়ে যে সৌজন্যসূচক উপাধি পায়, সেটি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ধারণা করা হয়, এই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছিল রাজকীয় উপাধি নিলে যে বোঝা বইতে হয়, সেটি এড়াতে।
১৫. লেডি লুইজ, জন্ম: ২০০৩
লেডি লুইজ উইন্ডসরের জন্ম ২০০৩ সালে, তিনি আর্ল এবং কাউন্টেস অব ওয়েসেক্সের প্রথম সন্তান। তবে তিনি উত্তরাধিকারের ক্রমতালিকায় তার ছোট ভাইয়ের পেছনে পড়ে গেছেন। কারণ রাজপরিবারের আগের নিয়মে ছিল, ছেলে বয়সে ছোট হলেও তার বড় বোনকে ক্রমতালিকায় ডিঙ্গিয়ে যেতে পারে। এই আইনটি এখন পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু লেডি লুইজের জন্ম হয়েছিল আইনটি পরিবর্তন করার আগে।
১৬. দ্য প্রিন্সেস রয়্যাল, জন্ম: ১৯৫০
অ্যান, প্রিন্সেস রয়্যাল হচ্ছেন রানির দ্বিতীয় সন্তান এবং কন্যা। যখন তার জন্ম হয় তখন উত্তরাধিকারের ক্রমতালিকায় তিনি ছিলেন তিন নম্বরে। কিন্তু এখন তার অবস্থান ১৬তম স্থানে। ১৯৮৭ সালে তাকে প্রিন্সেস রয়্যাল উপাধি দেয়া হয়।
প্রিন্সেস অ্যান দুবার বিয়ে করেছেন; তার প্রথম স্বামী ক্যাপ্টেন মার্ক ফিলিপস তাদের প্রথম দুই সন্তানের জনক: পিটার এবং জারা। তার দ্বিতীয় স্বামী ভাইস-এডমিরাল টিমোথি লরেন্স। প্রিন্সেস ছিলেন রাজপরিবারের প্রথম সদস্য যিনি কোন সরকারি নথিতে মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর পারিবারিক উপাধি ব্যবহার করেন। ক্যাপ্টেন ফিলিপসের সঙ্গে বিয়ের সময় রেজিস্টারে তিনি এই নাম উল্লেখ করেন। ১৯৭৬ সালের মন্ট্রিয়েল অলিম্পিকসে প্রিন্সেস অ্যান ব্রিটেনের পক্ষে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি সেভ দ্য চিলড্রেন সহ বেশ কিছু দাতব্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭০ সাল হতে তিনি সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।
১৭. পিটার ফিলিপস, জন্ম: ১৯৭৭
পিটার ফিলিপস হচ্ছেন রানির নাতি-নাতনিদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। তিনি ২০০৮ সালে কানাডিয়ান নাগরিক অটাম কেলিকে বিয়ে করেন। তাদের দুটি মেয়ে; সাভানাহ, যার জন্ম ২০১০ সালে, এবং ইসলা, যার জন্ম ২০১২ সালে।
প্রিন্সেস রয়্যালের সন্তানদের কোন রাজকীয় উপাধি নেই, কারণ তারা রাজপরিবারের নারী সদস্যদের বংশধর। মার্ক ফিলিপস বিয়ের পর তাকে আর্ল করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, কাজেই তাদের সন্তানদের কোন সৌজন্য উপাধিও নেই।
পিটার ফিলিপস এবং তাঁর স্ত্রী ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন।
১৮. সাভানাহ ফিলিপস, জন্ম: ২০১০
সাভানাহর জন্ম ২০১০ সালে। তিনি পিটার এবং অটাম ফিলিপসের বড় মেয়ে, এবং রানির প্রথম প্রপৌত্রি।
১৯. ইসলা ফিলিপস, জন্ম: ২০১২
পিটার এবং অটাম ফিলিপসের দ্বিতীয় মেয়ে ইসলার জন্ম ২০১২ সালে।
২০. জারা টিনডাল, জন্ম: ১৯৮১
জারা টিনডাল তার মা এবং বাবার পথ ধরে ঘোড়দৌড়ে বেশ সফল কেরিয়ার গড়ে তোলেন- ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকসে তিনি ব্রিটেনের পক্ষে রৌপ্য পদক জেতেন। ২০১১ সালে তিনি বিয়ে করেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক রাগবি খেলোয়াড় মাইক টিনডালকে। এই দম্পতির প্রথম সন্তান মিয়া গ্রেসের জন্ম ২০১৪ সালে।
প্রিন্সেস রয়্যালের সন্তানদের কোন রাজকীয় উপাধি নেই, কারণ তারা রাজপরিবারের নারী সদস্যের বংশধর। তবে জারা টিনডাল এরপরেও উত্তরাধিকারের তালিকায় ২০ নম্বরে আছেন। তাদের বাবা মার্ক ফিলিপস প্রিন্সেস অ্যানকে বিয়ের পর আর্ল হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, তাদের কোন সৌজন্য পদবীও নেই।
২১. মিয়া গ্রেস টিনডাল, জন্ম: ২০১৪
রানির নাতনি জারা টিনডাল তার প্রথম সন্তান মিয়া গ্রেসের জন্ম দেন ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে।
২২. লেনা এলিজাবেথ টিনডাল, জন্ম: ২০১৮
এই দম্পতির দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম ২০১৮ সালের ১৮ই জুন গ্লস্টারশায়ারের স্ট্রাউড ম্যাটারনিটি ইউনিটে। লেনা এলিজাবেথের ওজন হয়েছিল ৯ পাউন্ড ৩ আউন্স, তার নাম রাখা হয় তার প্রপিতামহীর নামে।
তার বোনের মতই লেনা এলিজাবেথের কোন রাজকীয় উপাধি নেই, কাজেই মিস টিনডাল নামে তিনি পরিচিত হবেন।
২৩. লুকাস ফিলিপ টিনডাল, জন্ম: ২০২১
জারা এবং মাইক টিনডালের ছেলে লুকাস ফিলিপ তাদের তৃতীয় সন্তান এবং রানির দশ নম্বর প্রপৌত্র। তার জন্ম ২০২১ সালের মার্চে এবং জন্মের সময় তার ওজন ছিল ৮ পাউন্ড ৪ আউন্স।