রাফাহ শহরে ইসরায়েলি অভিযানে অর্ধশত বাসিন্দা নিহত, দুই জিম্মি উদ্ধার
ডেস্ক রিপোর্টঃ গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ এলাকায় ইসরায়েলের অভিযানে শহরটিতে অন্তত ৬৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার কর্মকর্তারা। অভিযানে হামাসের হাতে অপহৃত দুইজন জিম্মিকে উদ্ধার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এই অভিযান চালানোর সময় দক্ষিণ গাজা এলাকায় বিমান হামলা চালানো হয়। এখনো সেখানে বিমান হামলা চলছে বলে জানা গেছে।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রস এর আগে জানিয়েছিল, রাফাহ এলাকায় অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ওই শহরে গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দেড় লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়ে রয়েছে।
রাফাহ সীমান্ত হচ্ছে গাজা ভূখণ্ড ও মিশরের মধ্যে থাকা একমাত্র সীমান্ত ক্রসিং, যেখান থেকে গাজায় খাদ্য পণ্য ও মানবিক সহায়তা সামগ্রী প্রবেশ করে থাকে।
ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় অভিযান চালানো নিয়ে ইসরায়েলের পরিকল্পনায় এর আগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ।
দুই দিনে নিহত শতাধিক গাজাবাসী
গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দুই দিনে গাজার রাফাহ এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৬৪ জন নিহত হয়েছে। শুধুমাত্র রোববার রাতের হামলায় নিহত হয়েছে ৬৭ জন। এর আগে রবিবার গাজা সিটির আশেপাশে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালানো হয়, যাতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে।
রাফাহ থেকে ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছেন, সেখানকার একটি মসজিদ ও বেশ কয়েকটি বাড়িতে বিমান হামলা চালানো হয়। ফলে সেই সময় ঘুমন্ত বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
রাফাহ থাকা ব্রিটিশ-ফিলিস্তিনি চিকিৎসক সালিম গায়াডা বিবিসির গুড মর্নিং স্কটল্যান্ড অনুষ্ঠানে বলেছেন, ছোট আকারের যে ফ্ল্যাটে তিনি এখন রয়েছেন, সেখানে তার আত্মীয়-স্বজনসহ ২৫টি পরিবার আটকে রয়েছে। যখন বিমান হামলা শুরু হয়, সেই ফ্ল্যাটে থাকা ৫০ জনের সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন।
হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাতই অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১২০০ জন মানুষ নিহত হওয়ার পর পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।
এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ২৮ হাজার ৩৪০ জন নিহত হয়েছে হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, যাতে আহত হয়েছে প্রায় ৬৯ হাজার মানুষ।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাফাহ এলাকায় ইসরায়েলি অভিযানকে ‘গণহত্যা’ বলে বর্ণনা করেছে। তাদের দাবি, ওই হামলায় অন্তত ১০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
এক্স প্লাটফর্মে এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘’ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘প্রতিশোধের মানসিকতা নিয়ে গণহত্যা চালাচ্ছেন। তিনি দাবি করলেও, সেখানে বিজয়ের কোন লক্ষ্য নেই বা আন্তর্জাতিক আইনকানুন মেনে চলার বালাই নেই।‘’
রাফাহ এলাকা হচ্ছে গাজা সিটি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের একটি সীমান্ত শহর। গাজার উত্তর এলাকা এবং খান ইউনিসে ইসরায়েলি অভিযানের পর লাখ লাখ মানুষ পালিয়ে এই শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছে, তারা দক্ষিণ দিকে তাদের সামরিক অভিযান বিস্তৃত করতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দাতা সংস্থাগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, সেখানে বড় ধরনের স্থল অভিযান ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বেসামরিক বাসিন্দাদের সুরক্ষায় যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া ইসরায়েলের এমন অভিযান চালানো উচিত হবে না।
হামাসের কবল থেকে দুই জিম্মি উদ্ধার
গাজার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রোববার দিবাগত রাত থেকেই রাফাহ উত্তর এলাকা এবং মধ্যাঞ্চলে বিমান হামলা শুরু হয়। অভিযানে হেলিকপ্টার ও নৌকাও ব্যবহার করা হয়।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আইডিএফ, আইএসএ (ইসরায়েলি সিকিউরিটি এজেন্সি বা শিন বেত) এবং ইসরায়েল পুলিশের যৌথ অভিযানে দুইজন ইসরায়েলি জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা হলেন ফার্নান্দো সিমন মারম্যান (৬০) এবং লুইস হার (৭০)।
গত বছরের সাতই অক্টোবর হামাসের হামলার সময় ইসরায়েলের কিবুতজ নির ইৎজাহাক থেকে তাদের অপহরণ করা হয়েছিল। এই দুজনেরই আর্জেন্টিনার নাগরিকত্বও রয়েছে।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) একজন মুখপাত্র অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছে, রাফাহ এলাকার একটি ভবনের তিন তলায় দুইজন জিম্মিকে পাওয়া যায়।
তার দাবি, ‘’সেখানে বেশ কিছু সন্ত্রাসীর সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর বড় ধরনের গোলাগুলি হয়’’।
তিনি বলছেন, সেখানে প্রবেশ করার পরেই দেখা গেছে, দুই জন ব্যক্তিকে হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা ঘিরে রেখেছে। এই সময় তাদের সাথে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। এরপর তাদের নিরাপদ এলাকায় নিয়ে আসা পর্যন্ত আইডিএফ সৈন্যরা সুরক্ষা দিয়ে গেছে।‘’
এই অভিযানের জন্য অনেকদিন ধরে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান।
উদ্ধার করা দুই জিম্মিকে স্বাগত জানিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সব জিম্মিকে ঘরে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তাদের দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং এখন ভালো অবস্থায় রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
এখনো হামাসের হাতে ১০০ জনের বেশি ইসরায়েলি নাগরিক জিম্মি অবস্থায় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।