রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ: তিন প্রধানমন্ত্রী ট্রেনযোগে কিয়েভে এবং ২০তম দিনে আরো যা ঘটেছে

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ইউক্রেনে রাশিয়ান হামলার বিশতম দিনে রাজধানী কিয়েভের অধিবাসীরা ৩৫ ঘণ্টার কারফিউতে ছিলেন, যদিও এর মধ্যে ট্রেনে কিয়েভ গেছেন পোল্যান্ড, স্লোভেনিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রীরা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিক থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকির সতর্কবাণী সত্ত্বেও তিন প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের উদ্যোক্তা ছিলো পোল্যান্ড।

বিবিসি ইউরোপ এডিটরের রিপোর্ট অনুযায়ী তিন প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কারণ পোলিশ সামরিক জেটের উড্ডয়ন রাশিয়ার কাছে বিপজ্জনক উস্কানি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

তবে তখনও এটা পরিষ্কার ছিলো না যে কখন তাদের বহনকারী ট্রেন ওয়ারশতে ফেরত আসতে পারবে।

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতিউস মোরাভিয়েস্কি বলেছিলেন নতুন ইতিহাস তৈরি হতে যাচ্ছে ইউক্রেনের রাজধানীতে।

মঙ্গলবার বিকেলে কারফিউ বলবৎ হবার পর কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ করেন তিন প্রধানমন্ত্রী।

পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ব্রিফিং করেন তারা। উভয় নেতা তিন প্রধানমন্ত্রীকে তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান।

শরীরে পচন আর ক্ষুধা
রাশিয়ার যুদ্ধবিমান আর ট্যাংক থেকে অনবরত গোলা আর বোমা বর্ষণ হচ্ছে ইউক্রেনের শহরগুলোতে।

মারিউপোলে বড় একটি ভবনের বেজমেন্টে আটকে আছেন শত শত মানুষ। সেখানে তীব্র খাদ্য সংকটের পাশাপাশি দরকার হয়ে পড়েছে জরুরি স্বাস্থ্য সেবা।

সংক্রমণের কারণে অনেকের শরীরে পচন ধরেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় একজন শিক্ষক আনাসতাসিয়া পনমারেভা।

যুদ্ধের শুরুতেই তিনি শহর ছাড়লেও শহরে থাকা অনেকের সাথে তার যোগাযোগ আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তারা বন্ধুরা পরিবারের সাথে দিনের বেশিরভাগ সময় ভবনের বেজমেন্টেই অবস্থান করছেন। সূর্যের আলোর সংস্পর্শ পেতে কখনো কখনো ভবনের ওপরে উঠছেন কিন্তু ভবনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ বিরল।

নিরাপত্তার অভাবে তারা আগেই তাদের বাড়িঘর ছেড়েছেন।

শহরের পশ্চিমদিকের শহরতলীতে একটি হাসপাতালের কর্মীরা বলছেন তারা যেন রুশ সেনাদের হাতে জিম্মি হয়ে আছেন।

একজন কর্মী জানিয়েছেন আশেপাশের অন্তত চারশো জনকে রাশিয়ান সেনারা বাধ্য করেছে বাড়ি ছেড়ে হাসপাতালে আসতে।

“এখন আমরা আর যেতে পারছি না,” বলছিলেন তিনি।

আঞ্চলিক গভর্নর পাবলো কিরিলেঙ্কো বলেছেন, সাম্প্রতিক গোলাবর্ষণে সব ধ্বংস হয়ে গেছে যদিও কর্মীরা হাসপাতালের বেজমেন্টেই লোকজনকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে প্রায় দু হাজার গাড়ি মানবিক করিডোর দিয়ে মারিউপোল ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। যুদ্ধের আগে চার লাখ মানুষ শহরে বাস করতো। সিটি কাউন্সিল বলছে অন্তত দু হাজার মানুষ এরই মধ্যে মারা গেছে।

ক্যামেরাম্যান ও সাংবাদিক মারা গেছে কিয়েভে
ফক্স নিউজের জন্য কাজ করছিলেন এমন একজন ক্যামেরাম্যান ও সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। কিয়েভের শহরতলীতে ব্যাপক গুলিবর্ষণের মধ্যে আটকে পড়েছিলেন তারা।

ফক্স নিউজ চীন এক্সিকিউটিভ সুজানে স্কট এই দুজনের মৃত্যুকে ‘হৃদয় বিদারক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তাদের সহকর্মী বেনজামিন হালও আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন।

এর আগে রবিবার ৫০ বছর বয়সী মার্কিন সাংবাদিক ব্রেন্ট রেন্যঁ গুলিতে নিহত হয়েছিলেন।

নিখোঁজ যুদ্ধবিরোধী সাংবাদিক দৃশ্যপটে
ইউক্রেনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে লাইভ টিভি নিউজে প্রতিবাদ করেছিলেন একজন রুশ সাংবাদিক। তিনি আগ্রাসনকে অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করে একটি ভিডিও প্রকাশ করায় পরে তাকে ত্রিশ হাজার রুবল জরিমানা করা হয়েছিলো।

পরে তাকে ছেড়ে দিয়েছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ।

মারিনা ওভসানিকভা রাষ্ট্রায়ত্ত চ্যানেল ওয়ানের সম্পাদক। সোমবার তাকে আটক করা হয়েছিলো যুদ্ধবিরোধী পোস্টার প্রদর্শনের দায়ে।

পরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিলো তাকে নিয়ে কারণ কেউ তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলো না।

তবে মঙ্গলবার তাকে আদালতের শুনানিতে দেখা গেছে।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন দুদিন তিনি নির্ঘুম কাটিয়েছেন কারণ ১৪ ঘণ্টা ধরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং কোন আইনি সহায়তা দেয়া হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশচারীকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে সম্মত রাশিয়া
৩৫৫ দিন ধরে মহাকাশে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের মার্ক ভান্ডে হেই। ভয় ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছিলো যে তাকে রুশ ক্যাপসুলে করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে কিনা।

কিন্তু পরে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে যে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হবে।

আর দুজন রাশিয়ানের সাথে এই আমেরিকান ফিরে আসবেন এবং তারা কাজাখস্তানে অবতরণ করবেন।

নাসার একজন প্রোগ্রাম ম্যানেজার জোয়েল মনতালবানো বলেছেন, “আমি নিশ্চিত মার্ক বাড়ি ফিরবে। রাশিয়ান সহকর্মীদের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই”।

বাইডেন রাশিয়ায় যেতে পারবেন না
পশ্চিমারা যেহেতু রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা চাপাচ্ছে তাই মস্কোও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১২ মার্কিন কর্মকর্তার ওপর।

এর মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও প্রেসিডেন্ট পুত্র হান্টার বাইডেনও রয়েছেন।

এ নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব ব্যক্তিরা রাশিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন না এবং রাশিয়ায় তাদের সম্পদ থাকলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে।


Spread the love

Leave a Reply