রাষ্ট্রপতিকে অবশ্যই চলে যেতে হবে

Spread the love

প্রেসিডেন্ট ইস্যুতে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক দল, সরকার ও ছাত্র আন্দোলনের  নেতারা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নেয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকার চাইছে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিষয়টির সুরাহা করতে। ছাত্র আন্দোলনের নেতারা প্রেসিডেন্ট অপসারণে অনড় অবস্থান নিলেও বেশির ভাগ দল এই মুহূর্তে এমন কোনো উদ্যোগ চায় না- যাতে সাংবিধানিক কোনো সংকট তৈরি হয়। কয়েকটি ইসলামী দল অবশ্য প্রেসিডেন্টকে অপসারণের পক্ষে মত দিচ্ছে।

প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি কোনোভাবেই প্রেসিডেন্টের পদত্যাগকে কেন্দ্র করে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট হোক- এমনটা চায় না। অন্যদিকে জামায়াত শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে নমনীয় হলেও প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অনেকে ছাত্রদের দাবির সঙ্গে নিজেদের সম্মতির কথা জানিয়েছে। সরকারের শীর্ষ মহলেও মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ঘিরে সাংবিধানিক সংকট হওয়ার আশঙ্কা করছেন। আবার কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পদত্যাগ দাবিতে রাজপথের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। সংকট সমাধানে রাজনৈতিক ঐক্যের ওপর জোর দেয়া হলেও সেটা আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও আছে শঙ্কা। এ ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর রাজনৈতিক ঐকমত্যের জন্য দলগুলোর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গতকালও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে তারা। এদিকে গতকাল বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রেসিডেন্ট ইস্যু নিয়ে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ইস্যুতে বিএনপিকে জনগণের পালস বুঝে ও উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়ে জনগণের কাতারে এসে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী। তার মতে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে ঐকমত্যে আসলে সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ মনে করেন বিএনপি নেতাদের অনেকে বিক্ষিপ্তভাবে এ বিষয়ে বক্তব্য রাখলেও সাংগঠনিকভাবে দলটি এখনো ছাত্রদের দাবির বিপক্ষে অবস্থান নেয়নি। তাই তারা দলগত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। বিএনপি ছাত্রদের দাবির সঙ্গে একমত হবে না- এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেন তিনি। সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গতকালও এ বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ওপর জোর দেন।

সূত্রের দাবি শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে ছাড় দিতে রাজি না। তারা মনে করেন, শেখ হাসিনার নিয়োগকৃত প্রেসিডেন্ট যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি তার পদে থাকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাই মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগই একমাত্র পথ। এদিকে প্রেসিডেন্টের অপসারণ নিয়ে গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ছাত্রদের দাবির বিষয়ে শুনেন এবং বিষয়টি রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমাধানের ওপর জোর দেন। এমনকি প্রেসিডেন্টের অপসারণ সংকটের পথ উন্মুক্ত করতে পারে বলেও আশঙ্কার কথা জানানো হয় বলে একটি সূত্র জানায়। পরদিন সকালে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রেসিডেন্টের অপসারণে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে বলে নিজেদের আশঙ্কার কথা জানায়। এরপর আন্দোলনের নেতারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপি’র সঙ্গে দুই দফা জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার, ১২ দলীয় জোটসহ অনেকের সঙ্গে বৈঠক করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গতকাল ১২দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, চুপ্পু (প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন) মাস্ট গো। তাকে যেতেই হবে। তার যাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। সবাই এ বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত।
গতকাল চন্দ্রিমা উদ্যানে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, কোনো হঠকারী পদক্ষেপ নয়, সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সব কিছু করতে হবে। তিনি বলেন, এর আগেও বলেছি, গণঅভ্যুত্থানের যে ফলাফল, সেই ফলাফলের ফসলকে ঘরে তোলার জন্য-বাংলাদেশে বিপ্লবকে যদি আপনার সুসংহত করতে হয়, তাহলে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য এবং কোনো রকম হঠকারী পদক্ষেপ গ্রহণ না করে একটা সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সবগুলো কাজ করার প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

রাজধানীতে আরেক অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অনেক রকমের সাংবিধানিক সংকট তৈরির পাঁয়তারা চলছে। সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সংকট যদি হয়, সেই রাজনৈতিক সংকটের পেছনে কী শক্তি আছে, সেটা আগে আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে। তার ফলাফল কী হবে, তা বিশ্লেষণ করতে হবে। অন্যদিকে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ অনেক দলই ছাত্রদের দাবির সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত। তবে জামায়াত এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, তারা মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ করে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাউকে এ পদে দেখতে চায়। যদিও গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে নিজের দলসহ অন্য রাজনৈতিক দলের কেউ যদি এখন ফ্যাসিবাদের মতো আচরণ করেন, তাহলে তাদের পরিণতি অতীতের ফ্যাসিবাদের চেয়েও করুণ হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
১২ দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে মো. সাহাবুদ্দিন ভূমিকা রাখতে পারেন। আবার সাংবিধানিকভাবেও তিনি এ পদে থাকতে পারেন না। তার অপসারণ নিয়ে রাজনৈতিক ঐক্যের প্রয়োজন। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে জাতীয় ও সাংস্কৃতিক ঐক্য তৈরি হয়েছে। এখন রাজনৈতিক ঐক্যের দরকার। তাই বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, ১২ দলীয় জোট, গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক চলছে। চুপ্পুর অপসারণের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে সবাই একমত। এখন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্যে আসতে হবে। আর তার জায়গায় কে আসবে সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আরও আলোচনা প্রয়োজন। সবাই আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রেখেছেন। সবাই এ বিষয়ে আগ্রহী। বর্তমানে চুপ্পু এ পদে থাকায় ন্যাশনাল ডিসকম্পোর্ট (জাতীয়ভাবে অস্বস্তি) তৈরি হয়েছে। তাই পলিটিক্যাল কনসেনসাস (রাজনৈতিক ঐক্য) প্রয়োজন। যদি মো. সাহাবুদ্দিন ইস্যুতে বিএনপিকে পাশে না পাওয়া যায় তাহলে কী হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিএনপি রোববারও স্পষ্ট করেছে তাদের স্থায়ী কমিটি ও অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। বিক্ষিপ্তভাবে যেসব বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো বিএনপি’র সাংগঠনিক বক্তব্য না। তাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের পর আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাবো। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে প্রোকলেমেশন অব সেকেন্ড রিপাবলিক ইস্যুও। এ বিষয়েও সবাই নীতিগতভাবে একমত। সবাই চাচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতি। হাসনাত বলেন, আমরা বিরাজনীতিকরণের পথে হাঁটতে চাই না। আমরা চাই স্টেইট লেভেল ডিসিশনের (রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত) ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মতো না করে গণতন্ত্রকামী সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেন সিদ্ধান্ত হয়।

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বিএনপি উদারমানসিকতার পরিচয় দিয়ে জনগণের পালসের প্রতি লক্ষ্য রাখলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দাবিটি সংকট নয় বরং দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। বিএনপিকে আহ্বান জানাবো জনগণের পালস বুঝুন এবং গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে যেভাবে ধারণ করেছিলেন সেটাকে আরও জোরালো করে প্রেসিডেন্ট হাউজে যে গোখরা সাপ বসে আছে তাকে দূর করুন। অন্যদিকে সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রেসিডেন্ট ইস্যুতে আমরা রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ার চেষ্টা করবো। এটা গোপন কোনো বিষয় নয়। সিদ্ধান্ত হলে সবাই জানতে পারবে। তবে তাড়াহুড়ো কিংবা দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখার সুযোগ নেই। যত তাড়াতাড়ি রাজনৈতিক ঐক্য হবে ততদ্রুত সিদ্ধান্ত হবে। এখন রাজনৈতিক ঐক্য কোন দিকে যাবে সেটা তো আমরা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। ছাত্ররা বিএনপিসহ সবার সঙ্গে কথা বলছে। রাজনৈতিক ঐকমত্য যেহেতু গড়ার চেষ্টা করছে সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অবশ্যই যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

রোববার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুতে ১২ দলীয় জোটের সাথে বৈঠক শেষে এ মন্তব্য করেন তিনি৷

গত কয়েকদিনে এই নিয়ে ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

এরই মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, ১২ দলীয় জোট, গণঅধিকার পরিষদের সাথে বৈঠকও করেছে দলটি।

রোববার সন্ধ্যায় ছাত্রনেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে জাতীয় অস্বস্তির জায়গা তৈরি হয়েছে৷ তাই তাকে তার পদ ছেড়ে যেতেই হবে। এ নিয়ে সবগুলো রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য রয়েছে”।

তিনি বলেন, “তবে কী প্রক্রিয়ায় এই অপসারণ হবে, তা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা”।

এ নিয়ে শিগগিরই আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সবগুলো রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল ইসলাম আদীব বিবিসি বাংলাকে বলেন, “রাষ্ট্রপতি ইস্যু ছাড়াও আলোচনায় আমরা সংবিধান সংস্কার এবং বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন বাতিলে ঐকমত্য গড়ে তুলতে কাজ করছি”।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির নেতারা বলছেন, সব দলগুলোর সাথে আলোচনা শেষেই এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।


Spread the love

Leave a Reply