রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জোলি
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃজোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রাণ বাঁচানো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজারে এসেছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বিশেষ দূত ও হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। সোমবার বিকালে কক্সবাজারের টেকনাফের চাকমারকুল রোহিঙ্গা শিবিরে পৌঁছেন।
এর আগে বেলা সোয়া ১টার দিকে মেরিন ড্রাইভ হয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে পৌঁছান জোলি। এ সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং জোলির আশপাশ এলাকায় কোনো গণমাধ্যম কর্মীকে যেতে দেয়া হয়নি। ইউএনএইচসিআর-এর সংশ্লিষ্ট ও প্রশাসনের নির্দিষ্টরা ছাড়া কেউ জোলির সঙ্গে ছিলেন না। চার দিনের সফরে আসা জোলি ২০১২ সাল থেকে ইউএনএইচসিআর’র বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করছেন।
গতকাল সোমবার সকালে নভোএয়ারের একটি ফ্লাইটে তিনি কক্সবাজারে পৌঁছান। কক্সবাজার বিমানবন্দরে প্লেন থেকে নামা অ্যাঞ্জেলিনার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ক্যামেরায় ধরা পড়ে। বিমানবন্দর থেকে বিশেষ নিরাপত্তায় জোলিকে ইনানীর তারকা হোটেল রয়েল টিউলিপে নিয়ে যাওয়া হয়।
ইউএনএইচসিআর’র আরেক শুভেচ্ছা দূত বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে বিব্রতকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করায় জোলির সময়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন।
রোহিঙ্গা সূত্র জানায়, ইউএনএইচসিআর’র এ বিশেষ দূত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে শরণার্থী হয়ে আসা বাস্তুচ্যুতদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনেন। নিপীড়িত নারীদের সঙ্গে কথা বলে সে সময়কার বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হন তিনি। এসময় রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ দোভাষীর মাধ্যমে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্মমতার বর্ণনা দেন।
চাকমারকুল ক্যাম্পের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গা আবদুল আলীম জানান, বিশ্বের নামকরা সব মানুষ আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি দেখতে আসছেন আর চলে যাচ্ছেন।
সময় গড়ালেও আমাদের কি উপকার হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। নাগরিকতার স্বীকৃতি নিয়ে নিজ দেশে ফেরার প্রতীক্ষা আমাদের শেষ হবে কবে? এর আগে ইউএনএইচসিআর’র এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে তিনদিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন জোলি। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমিন এবং সরকারের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করবেন। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে ইউএনএইচসিআর কীভাবে বাংলাদেশ সরকারকে আরো সহযোগিতা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করবেন জোলি। এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে নিগৃহীত এই সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মানুষের সমস্যা সমাধান কীভাবে নিরাপদ ও টেকসই উপায়ে করা সম্ভব, সে বিষয়েও আলোচনা করবেন এই অভিনেত্রী।
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ২০১২ সালে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার বিশেষ দূত হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর থেকে তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মানুষ বিশেষ করে নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন নির্যাতনের প্রতিরোধে সোচ্চার ভূমিকা রাখছেন।
অ্যাঞ্জেলিনা জোলির আগে গত ২১শে মে রোহিঙ্গা শিশুদের দেখতে এসেছিলেন জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। পরে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জোলিও নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিশ্চিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টরা।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এরপর সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। এখন দেশে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের টেকনাফ ও রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছেন।