র্যাব হেলিকপ্টার থেকে ছাত্রদের উপর গুলি, মহাপরিচালক বললেন গুলি করেননি
ডেস্ক রিপোর্টঃ এলিট ফোর্স র্যাব’র মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. হারুন অর রশিদ বলেছেন, সহিংসতা ঠেকাতে র্যাব হেলিকপ্টার থেকে কোনো গুলি করেনি। এগুলো প্রপাগান্ডা। আমরা গুলি করিনি। আমরা হেলিকপ্টার থেকে যা করেছি সেগুলো ভিডিও ক্লিপ করা আছে। যারা এসব অপপ্রচার করছে, এগুলো করে কোনো লাভ হবে না। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। গতকাল র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, ১৯ তারিখ থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংসতায় পরিণত হয়। শুরু হয় ধ্বংসযজ্ঞ। এই ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানায়। পুলিশ ও তাদের স্থাপনাকে টার্গেট করা হয়।
উত্তরা পূর্ব থানার সামনে র্যাব’র কনস্টেবল অমিত বড়ুয়াকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়। সে এখন সিএমএইচ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। আমাদের গাড়িও সেখানে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাদে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা আশ্রয় নেন। আমরা তাদের হেলিকপ্টার দিয়ে সেখান থেকে উদ্ধার করেছি। নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে হাইওয়ে পুলিশের অফিসে আগুন দেয়া হয়েছে। আমরা সেখান থেকেও পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করেছি। দুবৃর্ত্তদের আগুনে দু’জন শ্রমিক সেখানে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন দিয়েছে। সেতু ভবনের ৫০টিরও বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে দুবৃর্ত্তরা আন্দোলনের নামে রাস্তা বন্ধ করে ছোট ছোট বাচ্চাদের সামনে বসিয়ে দিয়েছিল। ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সরকার ও দেশকে অকার্যকর করে দিতে চেয়েছিল। যখন আমরা রাস্তা ব্যবহার করতে পারছিলাম না তখন হেলিকপ্টার ব্যবহার করে কাজ করেছি। আমরা চেষ্টা করেছি মানুষের জীবন যাতে বাঁচানো যায় এবং ক্ষতিটা কমানো যায়। হেলিকপ্টার না থাকলে র্যাব কীভাবে অভিযান পরিচালনা করতো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের হামলা এবারই প্রথমই নয়। এর আগে অনেক সহিংসতা-নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। আমরা সেগুলো হেলিকপ্টার ছাড়াই মোকাবিলা করেছি। তিনি বলেন, ছাত্ররা যখন আন্দোলন করছিল তখন কোনো সহিংসতা ছিল না। ছাত্ররা আমাদের প্রতিপক্ষ না। সাধারণ মানুষও আমাদের প্রতিপক্ষ না। আমরা তাদেরই প্রতিপক্ষ যারা হামলা করেছে। দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। সাধারণ মানুষ ও ছাত্ররা কিন্তু আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর তারা আর কোনো আন্দোলন করেনি। স্বাধীনতা বিরোধীরা সবসময়ই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
প্রথম যেদিন সংঘর্ষ হয়েছিল তারপর থেকে র্যাব সতর্ক ছিল কিনা? আর সতর্ক থাকলে নিয়ন্ত্রণ করতে এত সময় কেন লেগেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯ তারিখ থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর খুব দ্রুতই সিচুয়েশন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আমরা জাতিসংঘ মিশনেও দেখেছি এত দ্রুত করা হয় না। সময় নেয়া হয়।
আন্দোলনে ছাত্রদের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে সহিংসতা দ্রুত টার্ন করবে, এই তথ্য কি র্যাব আগে থেকে জানতে পারেনি? এক্ষেত্রে র্যাব’র ইন্টেলিজেন্স ব্যর্থতা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সেটি বলছি না। কুইকলি টার্ন করেছে। সন্ত্রাসী, জঙ্গি, হামলাকারীরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সুযোগ পেলেই হামলা, নাশকতা করে। যারা নাশকতার সঙ্গে জড়িত তাদের আমরা ধরবো। চারজনকে আটক করেছি। বিভিন্ন জায়গায় যারা নাশকতা করেছে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। আমাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক অনেক শক্তিশালী ও সুবিস্তৃত। প্রত্যেককে শনাক্ত করা হবে। আইনের আওতায় আনা হবে। আন্দোলনে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এসেছে। দু’জন পুলিশ সদস্য স্নাইপার রাইফেলের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো। তবে স্নাইপার ব্যবহার হয়েছে কিনা জানি না। সহিংসতার দায় বিএনপিকে দিলেও তারা দায় স্বীকার করছে না এ বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, যে অপরাধ করে সে দায় স্বীকার করে না। এটা তাদেরই কাজ আগেও তারা করেছে। সাধারণ মানুষও বলছে এটা ছাত্রদের কাজ না।