লজ্জা ! প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান ও নায়িকা মাহির ফোনালাপ (ভিডিও সহ)

Spread the love

বিশেষ প্রতিবেদন,ঢাকাঃ বিতর্কিত বক্তব্য ও ফোনালাপ প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবারের মধ্যেই তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। রাতে এই তথ্য নিশ্চিত করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রাতে সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সন্ধ্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে এবং আমি আজ (গতকাল) রাত ৮টায় প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছি। গত দুইদিনে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বিতর্কিত কয়েকটি বক্তব্য প্রকাশের পর তীব্র সমালোচনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নারী অধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়। দিনভর তাকে নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই তার বিষয়ে দলীয় অবস্থান পরিষ্কার হয়।

সম্প্রতি একটি লাইভ অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে দেয়া বক্তব্যে প্রথমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান বিভিন্ন পক্ষ। এর মধ্যে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে একটি টেলিফোন আলাপের অডিও প্রকাশের পর সমালোচনা আরও তীব্র হয়। দাবি উঠে প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগের। নতুন আরেকটি ভিডিও প্রকাশ হয়ে যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্কিত কথা বলেছেন প্রতিমন্ত্রী। এসব ঘটনায় আলোচনায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী। তার পদত্যাগ দাবি করেছেন নারী নেত্রীরা। বিএনপি’র তরফেও তার পদত্যাগ দাবি করা হয়।

মাহির সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে চিত্রনায়ক ইমন জানিয়েছেন, এটি দুই বছর আগের। ফাঁস হওয়া ওই কথোপকথনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মাহিকে ধর্ষণের হুমকি দেয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তুলে আনার হুমকি দেন। পুরো বক্তব্যে ‘অশ্রাব্য’ কিছু শব্দ উচ্চারিত হয়েছে। তবে এ নিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী গতকাল পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেননি। মাহিয়া মাহি উমরাহ করতে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, এরকম একটি পদে আসীন যেকোনো ব্যক্তির এ ধরনের ফোনালাপ প্রকাশ পাওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা। নারী অধিকার কর্মীরাও প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। ভাইরাল হওয়া অন্য একটি ভিডিওতে প্রতিমন্ত্রী মুরাদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া এবং শামসুন নাহার হলের ছাত্রলীগ নেত্রীদের সম্পর্কে বলতে শোনা যায়, তারা শিষ্টাচারের সংজ্ঞাটা আমাদের শেখাতে চাচ্ছে। তসলিমা নাসরিনের মতো অনেক তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশ আছে, দুঃখ লাগে কোনটা জানেন? এরা আবার জয়বাংলার কথা বলে। এরা ছাত্রলীগ করছে নাকি, এরা আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, এরা নাকি আবার নেত্রী ছিল কোনো কোনো হলে। কিন্তু রাতের বেলা এরা নিজেদের হলে থাকতেন না, ঘুমাতেন হোটেলে হোটেলে। কারণ ফাইভ স্টার হোটেলে থাকার মজা, আর রোকেয়া হল শামসুন নাহার হলে থাকাটা কি এক কথা? আমি এর চেয়ে বেশি বললে মিছিল শুরু হয়ে যেতে পারে। আমি আর বেশি কিছু বলব না। এই বক্তব্য প্রকাশের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান এবং সাবেক নেত্রীরাও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদের বক্তব্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবো: ওবায়দুল কাদের
তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান নারী বিদ্বেষমূলক যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার ‘ব্যক্তিগত’ বলে মত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি। তথ্য প্রতিমন্ত্রী ‘নারী বিদ্বেষমূলক’ যে বক্তব্য দিয়েছেন এতে দল বা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত মন্তব্য হতে পারে। আমাদের দল বা সরকারের কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য না। এ ধরনের বক্তব্য কেন সে দিলো, অবশ্যই আমি বিষয়টা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবো। বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে পুঁজি করে বিএনপি রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি ক্রমাগত মনগড়া বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে যা তাদের নেতাদের কাছেই একদিন জবাবদিহি করতে হবে। ‘বেগম জিয়া না থাকলে আওয়ামী লীগ থাকবে না’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আসলে তিনি হয় তো বলতে চেয়েছিলেন খালেদা জিয়া না থাকলে বিএনপি থাকবে না। হয়তো খেই হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। খালেদা জিয়া না থাকলে আওয়ামী লীগ কেন থাকবে না? তিনি বলেন, খালেদা জিয়া না থাকলে বিএনপি না থাকার প্রশ্ন থাকতে পারে। আওয়ামী লীগ জনগণের মাঝ থেকে বেড়ে উঠা দল। যত দিন বাংলার ভূখণ্ড থাকবে, লাল সবুজের পতাকা থাকবে ততদিন আওয়ামী লীগ এই বাংলার মাটিতে থাকবে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে অতি রাজনীতির জন্য বিএনপি’র নেতাদেরকেই একদিন দলের ভেতরে জবাবদিহি করতে হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বেগম জিয়ার চিকিৎসা বিএনপি’র অতি রাজনীতির শিকার বলে দেশের জনগণ মনে করে। তাদের এত বাঘা বাঘা আইনজীবী তার মামলা নিয়ে দীর্ঘ কালক্ষেপণ করা, তাদের অতি রাজনীতির এই ফল। ‘খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে’ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যে তিনি বলেন, বিএনপি’র লোকজন, তার গৃহপরিচালকরা, তাদের চিকিৎসকরা তার আশেপাশে থাকে। আওয়ামী লীগের লোকজন কীভাবে স্লো পয়জনিং করবে। এটা হাস্যকর ব্যাপার। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে অতি রাজনীতির জন্য একদিন বিএনপি’র নেতাদেরকে তাদের দলের ভেতরে জবাবদিহি করতে হবে। ৬ই ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবসের কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই দিন এরশাদের নেতৃত্বাধীন স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। স্বৈরাচারের পতন হলেও এখনো দেশে গণতন্ত্রের শত্রুরা, স্বাধীনতার শত্রুরা তৎপর। দেশের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে এদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তারা দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায়, সামপ্রদায়িকতা সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। আরও সুসংগঠিত থাকতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ সফলভাবে পালনের লক্ষ্যে ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ১৬ই ডিসেম্বর বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে সারা জাতিকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। এ ছাড়াও কর্মসূচির কথা তুলে ধরে তিনি জানান, ১৬ই ডিসেম্বর সকালে সাভার ও বঙ্গবন্ধু ভবনে আওয়ামী লীগসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। ১৭ই ডিসেম্বর সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে দেশি-বিদেশি অতিথিদের নিয়ে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ই ডিসেম্বর দুপুর আড়াইটায় শিখা চিরন্তন থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা করবে আওয়ামী লীগ। ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এসএম কামাল ও এডভোকেট আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

ডা. মুরাদের পদত্যাগ দাবি ফখরুলের
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে নিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের করা মন্তব্যকে ‘হীন রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক, নারী ও বর্ণবিদ্বেষী, বিকৃত’ বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেইসঙ্গে অবিলম্বে তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। বিবৃতিতে তথ্য প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ না করলে ভবিষ্যতে যথাসময়ে এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে বলেও সুস্পষ্টভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি।

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, সমপ্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সরকারের তথ্য-প্রতিমন্ত্রীর একটি বিকৃত এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত নারী ও বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি অবিলম্বে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বহনকারী একজন ব্যক্তির এ ধরনের ঘৃণ্য ও কুরুচিপূর্ণ আচরণের প্রতিকার দাবি করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ব্যক্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী যে দুর্বলতার মানুষই হোক না কেন একজন জাতীয় পতাকাধারী ব্যক্তির এ ধরনের মনোবৈকল্য উৎসারিত বিকৃতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত করেছে।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণের শিকার হয়ে এই মুহূর্তে বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ না পেয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এমন সময়ে তার পরিবারের একজন নারী সদস্য তথা পরিবারের বিভিন্নজন সম্পর্কে এহেন অশ্লীল ঘৃণ্য অপপ্রচার ইতিমধ্যেই নারী নেতৃত্বসহ দেশের সচেতন সকল মহলের ঘৃণা কুড়িয়েছে।’।

এদিন দুপরে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেছেন, ডা. মুরাদ হাসান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীকালে সে ছাত্রলীগের নেতা হয়ে প্রেসিডেন্ট (ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি) হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্য আমাদের। এ রকম একটা ছেলে ছাত্রদলে ছিল।
ডা. মুরাদ কয়েকদিন আগে ভয়াবহ বক্তব্য দিয়েছেন উল্লেখ করে বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, সেদিন তিনি বলেছেন ‘আমি যা কিছু করছি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই করছি। প্রধানমন্ত্রী সবকিছু জানেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্পষ্ট জানতে চাই, এই ভয়াবহ উক্তি যদি একজন মন্ত্রী করতে পারে, তাহলে আপনার সরকারের অবস্থান কী আমরা জানতে চাই। উত্তর দিতে হবে। কারণ আপনাকে জড়িয়ে কথা বলা হয়েছে। আমরা তীব্রভাবে এর প্রতিবাদ জানাই। ধিক্কার জানাই।

ক্ষমা চাইতে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদকে আল্টিমেটাম, অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা
অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের শপথ ভঙ্গ হয়েছে, এজন্য তাকে জাতির সামনে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি বলেছেন, অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে জাতির সামনে তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ মোতাবেক তৃতীয় তফসিলে বর্ণিত ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন-অনুযায়ী যথাবিহিত আচরণ করিব’ মর্মে মন্ত্রী হিসেবে তিনি যে সাংবিধানিক শপথ গ্রহণ করেছেন, তিনি ক্রমাগতভাবে তার নানাবিধ মন্তব্য/কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তা ভঙ্গ করে চলেছেন। জাতি হিসেবে এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। প্রতিমন্ত্রীর মতো একটি দায়িত্বশীল পদে থেকে তার এসব অযাচিত মন্তব্য জাতি হিসেবে আমাদের কলঙ্কিত করেছে।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান সম্পর্কে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক বলেন, জাইমা রহমান সম্পর্কে তথ্য প্রতিমন্ত্রী যে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে জাতির সামনে তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, মুরাদ হাসান বিভিন্ন ব্যক্তি, বিশেষ করে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সম্পর্কে লাগামহীনভাবে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেই চলেছেন। তার এ ধরনের বক্তব্য দেশের নাগরিকের জন্য বিশেষ করে নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক ও চরম অবমাননাকর।
সংবাদ সম্মেলনে বার সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল ছাড়াও সমিতির বিএনপি সমর্থিত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

তথ্য প্রতিমন্ত্রীর অপসারণ দাবি ৪০ নারী অধিকারকর্মীর
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তার নাতনি জায়মা রহমানকে নিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের দেয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ৪০ নারী অধিকারকর্মী। গত ২রা ডিসেম্বর নাহিদরেইনস নামক একটি অনলাইন লাইভে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যকে লিঙ্গবাদী, কুৎসিত যৌন হয়রানিমূলক আখ্যা দিয়েছেন তারা। সোমবার এক বিবৃতিতে নারী অধিকারকর্মীরা বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় পদে আসীন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর মুখে এই ভাষা বাংলাদেশের আপামর নারীদের অপমান এবং অসম্মান করেছে বলে আমরা মনে করি। এর মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি যৌন হয়রানিকে সমাজ এবং রাষ্ট্রে কাঠামোগতভাবে প্রতিষ্ঠিত করার বৈধতা দেয়া হয়।’ বিবৃতিতে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে যথাযথ জবাবদিহির আওতায় এনে অপসারণের দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, নাসরিন খন্দকার, স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন, উইমেন চ্যাপ্টার সম্পাদক সুপ্রীতি ধর, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, নারীনেত্রী ফরিদা আখতার, মিথিলা মাহফুজ, শিক্ষক, শিল্পী ও সংগঠক বীথি ঘোষ, উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি, ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের সম্পাদক মুনমুন শারমীন শামস, সাংবাদিক ইশরাত জাহান ঊর্মি, অ্যাক্টিভিস্ট পূরবী তালুকদার, দিলশানা পারুল, মোশফেক আরা শিমুল, নারী সংহতি নাসরিন আক্তার সুমি, সুমি রেক্সোনা, মনজুন নাহার, উন্নয়নকর্মী ফেরদৌস আরা রুমী, মাহফুজা মালা, প্রমা ইসরাত, অ্যাক্টিভিস্ট সুমাইয়া নাসরিন সুমু, মারজিয়া প্রভা, অপরাজিতা সংগীতা।

‘বিকৃত এবং কুরুচিপূর্ণ ভাষার প্রতিউত্তর আমার জানা ছিল না’-মাহি
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির ফাঁস হওয়া অডিও নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন খোদ এ নায়িকা। ওমরাহ করতে সৌদি আরবে অবস্থান করা মাহি তার ফেসবুক আইডিতে একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেছেন। ওই ভিডিও’র ক্যাপশনে মাহি লিখেছেন, বিকৃত এবং কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার ও ভাষার প্রতিত্তোরের ভাষা আমার জানা ছিল না, নম্রতা আমার পারিবারিক শিক্ষা। ভিডিওতে মাহিয়া মাহি বলেন, আমি এখন পবিত্র হারাম শরিফে আছি। ওমরাহ পালন করছি। আমি যেটা বলার জন্য ভিডিওটা করছি। আমি সেদিনও বলেছিলাম। আমার বিকৃত এবং কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার ও ভাষার প্রতি-উত্তরের ভাষা আমার জানা ছিল না। দুই বছর আগের ঘটনা। তখন আমি শুধু আল্লাহর কাছে বলেছিলাম। মাহি আরও বলেন, আমি আরও একবার দেশবাসীর কাছে ছোট হলাম। কিন্তু আপনারা নিজের থেকে একটু চিন্তা করে দেখবেন, এই ভাষার প্রতিত্তোর কী দেওয়া উচিত ছিল? সেদিন আমার আসলে কিছু বলার ভাষা ছিল না। তাই সেদিন কিছু বলিনি। আমি সেদিন চুপ থেকেছি পাশ কাটিয়ে। তিনি বলেন, এটা (প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথাপোকথন) ঠিক দুই বছর আগের ঘটনা। আমি বরাবরের মতোই সব সময় আল্লাহর কাছে বলি যে, আল্লাহ আমি কষ্ট পেয়েছি। যার মাধ্যমে কষ্ট পেয়েছি। কোনো না কোনোভাবে তিনি তার রেজাল্ট (ফল) পেয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ। মাহিয়া মাহি বলেন, আমি সাংবাদিক ভাইদের বলছি, আমি আসলে এখন কারও ফোন রিসিভ করছি না। আমি এখন যেখানে আছি, এখানে আসলে এ বিষয়ে কথা বলার মতো না। সবাইকে ধন্যবাদ।


Spread the love

Leave a Reply