লন্ডনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহৃত ভাষা ‘বাংলা’ নয়
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ব্রিটিশ সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সিটি লিট’ বলেছে তাদের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে লন্ডনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে বাংলার অবস্থান দ্বিতীয়। এ নিয়ে বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে শোরগোল চলছে।
তবে বিবিসির রিয়েলিটি টিম তদন্ত করে দেখেছে যে তথ্যটি সঠিক নয়।
লন্ডনের বিভিন্ন এলাকায় প্রচলিত ভাষা ব্যবহারকারীর একটি তালিকা থাকে। সেখানে ইংরেজি পর দ্বিতীয় সবোর্চ্চ বাংলা ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা যোগ দিয়ে এই তথ্য পায় ‘সিটি লিট’।
সংস্থাটি শুধুমাত্র তিনটি স্থানে বাংলা ব্যবহারকারীদের সংখ্যা হিসেব করেছে বলেও বিবিসির রিয়েলিটি চেক জানতে পেরেছে।
ওই তালিকায় থাকা তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম অবস্থানে থাকা ভাষাগুলোর ব্যবহারকারীর সংখ্যা একত্রে যোগ করা হয়নি।
এনিয়ে যে পাঁচটি তথ্য হয়তো আপনি জানতে চাইবেন – সেগুলো হল:
১. বাংলা নয়, পোলিশ
লন্ডনের সামান্য কিছু অঞ্চল যেমন ক্যামডেন, নিউহ্যাম এবং টাওয়ার হ্যামলেটসে ‘বাংলা’ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহৃত ভাষা হলেও পুরো লন্ডনে বাংলা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহৃত ভাষা নয়।
বাংলা থেকেও লন্ডনের বিভিন্ন স্থানে পোলিশ ভাষার ব্যবহার বেশি। তবে বাংলা ভাষা যারা বলেন তাদের মধ্যে সিলেট অঞ্চলের কথনরীতির প্রচলন দেখা যায়।
২. গবেষণার ভিত্তি
সিটি লিট মূলত ২০১১ সালে প্রকাশিত যুক্তরাজ্যের ‘অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস’ (ওএনএস)-এর একটি জরিপের উপর ভিত্তি করে তাদের গবেষণাটি করেছে।
এ বছরের ১৯শে নভেম্বর প্রকাশিত একটি নিবন্ধে তারা দাবি করেছে যে লন্ডনে ইংরেজির পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহৃত ভাষা হচ্ছে বাংলা। এরপরেই রয়েছে পোলিশ এবং তুর্কি ভাষা।
কিন্তু বিবিসি তার তথ্য অনুসন্ধানে জেনেছে লন্ডনের যে তিনটি এলাকায় বাংলা ভাষা ব্যবহারের দিক দিয়ে এগিয়ে সেসব জায়গায় বাংলার পরে যেসব ভাষা বেশি ব্যবহৃত হয় – সেটা আমলে নেওয়া হয়নি বলে দেখা যাচ্ছে।
যেমন, ক্যামডেনে বসবাসকারী ২ লাখ ১২ হাজারের মতো মানুষের মধ্যে বাংলা ব্যবহার করেন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার লোক আর ফ্রেঞ্চ ব্যবহার করেন চার হাজারের বেশি মানুষ।
এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে বাংলার চেয়ে ফ্রেঞ্চ ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ঢের বেশি। ওএনএস-এর জরিপে এমনটাই পাওয়া গিয়েছিল।
৩. কেন এই গবেষণা
সিটি লিট তাদের পাঠানো একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে যে তারা লন্ডনের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য তারা এই গবেষণাটি করেছিল।
তাদের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল যেন স্থানীয়দের দ্বিতীয় আরেকটি ভাষার প্রতি উৎসাহ জোগানো।
মূলত তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর প্রতি সেখানকার মানুষদের আকৃষ্ট করতে এই গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশ করেছে।
৪. বাংলার অবস্থান আসলে কোথায়?
ওএনএস এর ডেটা অনুযায়ী, মাত্র তিনটি ডিস্ট্রিক্টে বাংলা ভাষার ব্যবহার বেশি। সেগুলো হলো: ক্যামডেন, নিউহ্যাম এবং টাওয়ার হ্যামলেটস।
পুরো লন্ডনের জরিপকৃত ৭৮ লাখ নয় হাজার লোকের (তিন বছর বা তার বেশি বয়সী)-এর মধ্যে এক লাখ ১৪ হাজারের মতো মানুষ বাংলা ব্যবহার করেন।
আর ইংল্যান্ড এবং ওয়েলেসের পাঁচ কোটি ৩৯ লাখ জনের মধ্যে বাংলা ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাত্র দু্ই লাখ ২১ হাজার।
লন্ডন ও ইংল্যান্ডে বাংলা ভাষা কতটা প্রচলিত
- ১,১৪,২৬৭লন্ডনে বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী
- ২, ২১, ৪০৩ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী
সূত্র: অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস, ইংল্যান্ড
৫. এটি আসলে কী বোঝাচ্ছে? ?
অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস এর যে সরকারি জরিপের ভিত্তিতে এই গবেষণাটি করা হয়েছে সেটি আসলে আট বছরের পুরনো।
এরমধ্যে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচ লাখের মতো।
তাই ওই পুরনো জরিপের ভিত্তিতে বর্তমানে বাংলার অবস্থা কোথায় তা হয়তো সঠিক ধারণা নাও দিতে পারে।
তবে নতুন করে আবার জরিপ হবে আগামী ২০২১ সালে।