লন্ডনে আগুন আতঙ্ক
হেফাজুল করিম রকিব
ব্রিটেনে এবার যোগ হয়েছে নতুন আতঙ্ক আগুন। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ছোটখাটো আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। লন্ডন ফায়ার সার্ভিস অবশ্য দক্ষতার সঙ্গে তা মোকাবিলাও করছে। এতে লন্ডনবাসীর উদ্বেগও বেড়েছে। পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় খালি করা হয় ২৭টি বহুতল ভবন। ফলে ঘরছাড়া হয়েছে প্রায় ৪ হাজার বাসিন্দা।গ্রেনফেল টাওয়ারের অগ্নিকা-ের পর থেকে অনেক ভবনে আগুন লেগেছে। গ্রেনফেল টাওয়ার দুর্ঘটনার একদিন পর বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের শ্যাডওয়েলে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। অবশ্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের তৎপরতায় বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। অগ্নিকা- নিয়ন্ত্রণও সম্ভব হয়। এর পর ২৪ জুন ইস্ট লন্ডনের বেথনাল গ্রিনে আগুন লাগে। সেই ঘটনায় অনেক ক্ষতি ছিল এবং এতে একজন আহত হন। ২৬ জুন পূর্ব লন্ডনের ডকল্যান্ডের কাসিলিস রোডের একটি ভবনের ১ম তলায় স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টায় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এতে অবশ্য হতাহতের তেমন ঘটনা ঘটেনি।
একই দিন দুটি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ইস্ট লন্ডনের কেনেরিওয়ার্ফের কাছে আইল অফ ডগে প্রথমটি ও অপরটি ছিল রেইনহ্যামে। দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের সময় ইস্ট লন্ডনের রেইনহ্যামে ফেরি লেইনে অগ্নিকা-ে ৬টি কার ও ৪০ ফুট লম্বা একটি ফর্ক লিফটে আগুন লাগে। ৬টি ফায়ার ইঞ্জিন নিয়ে প্রায় ৩০ জন ফায়ার ফাইটার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।ইস্ট লন্ডনের কেনারিওয়ার্ফের কাছে আইল অফ ডগে অপর দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুপুর প্রায় ২টার দিকে ব্ল্যাকওয়েল এলাকার প্রেস্টনস রোডে (মিলওয়াল ডকের প্রবেশ মুখে) নির্মাণাধীন একটি তিন তলা ভবনে আগুন লাগে। প্রায় এক মাইল দূর থেকে ধোঁয়ার কু-লি দেখা যায়।গত ২৪ জুন আগুন আতঙ্কে লন্ডনের কেমডেনের ৫টি বহুতল ভবনের ৮০০ বাসিন্দাকে জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নেয় কেমডেন কাউন্সিল। লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারের মতো এ ভবনে একই উপকরণ ব্যবহার করায় সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আগুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেমডেন কাউন্সিলের লিডার জর্জিয়া গোল্ড জানিয়েছেন, ক্যালকট স্টেটের উঁচু পাঁচ ভবনের মধ্যে ট্যাপলো ব্লকের ১৬১ ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। কারণ সেখানে গ্রেনফেল টাওয়ারের মতো বাইরের অংশে একই ক্লাডিং ব্যবহার করা হয়েছে।২ জুলাই দুপুর ১২টায় পূর্ব লন্ডনের রোমান রোডে একটি বিল্ডিংয়ে বড় ধরনের আগুন লাগে। তিন ঘণ্টায় ১০টি ফায়ার ইঞ্জিন নিয়ে প্রায় ৫০ ফায়ার ফাইটার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। অগ্নিকা-ে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।ইংল্যান্ডের বহুতল ভবনগুলোর ক্লাডিং ব্যবহার নিয়ে বড় ধরনের জাতীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। গ্রেনফেল টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর বহুতল ভবনগুলোয় ক্লাডিং আতঙ্ক কাজ করছে। গ্রেনফেল টাওয়ারের অগ্নিকা-ে প্রায় ৭৯ জনের মৃত্যু হয়। পুড়ে ছাই হয়ে যায় ২৪ ভবনের প্রায় সবটি।পুরো ইউকেতে প্রায় ৪ হাজারের মতো পুরনো বহুতল ভবন আছে। গ্রেনফেল টাওয়ারের অগ্নিকা-ের পর সেসব ভবনে একে একে ফায়ার সেইফটি পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের প্রায় ৩২টি বারাতে ৯৫ বহুতল ভবন ফায়ার সেইফটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি শুধু ক্লাডিংয়ের কারণে। ক্লাডিং অর্থাৎ প্লাস্টিকের এই বস্তুটি ভবনের সৌন্দর্য বাড়াতে ভেতরে এবং বাইরের ওয়াল ও জানালার ফেইমে ব্যবহার করা হয়। দামি ক্লাডিংয়ে আগুনের ভয় নেই। সস্তা ক্লাডিংয়ে আগুন সহজে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার ক্লাডিং ইস্যুতে জাতীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। এর মাধ্যমে গ্রেনফেল টাওয়ারের পাবলিক ইনকোয়ারির দ্বিতীয় দফার ফলও বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। প্রধানমন্ত্রীর ধারণা, আগুনের ঝুঁকিতে আরও শতাধিক বহুতল ভবন রয়েছে বলে জানান তেরেসা মে। অন্যদিকে লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলছেন, গ্রেনফেল অগ্নিকা-সহ সব অগ্নিকা-ই ‘কঠোর ব্যয় সংকোচনের মারাত্মক ফল’।২০০৯ সালের ৩ জুলাই লন্ডনের সাউথওয়াক ক্যাম্বারওয়েল লাকানাল হাউসের অগ্নিকাইেমবর ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়। ওই দুর্ঘটনায় আহত হয় ২০ জন।