লন্ডনে ফিনসবারি পার্ক মুসল্লিদের ওপর হামলায় নিহত ১ – আহত ১০ , হামলার নেপথ্যে ইসলামবিদ্বেষ, শঙ্কিত মুসলিমরা
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ পার্লামেন্ট ভবন ও ওয়েস্ট মিনস্টার ব্রিজের হামলার পর গ্রেনফেল টাওয়ারের আগুনের শোক কাটিয়ে না উঠতেই আবারও হামলার শিকার হলো লন্ডন। এবার লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে মসজিদে নামাজ আদায় করে বাড়ি ফিরতে থাকা মুসল্লিদের। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর লন্ডনের সেভেন সিস্টার রোডের ফিনসবারি পার্ক মসজিদের সামনে এই ঘটনা ঘটে। ৪ জুন লন্ডন ব্রিজের হামলার মতো করেই এদিন দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে দেওয়া হয় পথচারীদের ওপর। গাড়ির ধাক্কায় বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
লন্ডন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানায়, তারা ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছে। সংস্থাটির উপ-পরিচালক কেভিনবেট বলেন, আমরা কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্স কর্মী, দক্ষ প্যারামেডিক ও বিশেষ দল পাঠিয়েছি। এছাড়া লন্ডন এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ট্রমা টিমও সেখানে গেছে।
অনলাইনে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে হতাহতদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে স্থানীয়রা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই স্থানে অনেক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। সবাই চিৎকার করছিলো। সিনথিয়া ভ্যানজেলা নামের এক ব্রিটিশ টুইটারে জানান, ‘দৃশ্যটি সত্যি ভয়ংকর ছিলো। মাটিতে শুয়ে থাকা আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছিলো পুলিশ।’
মুসল্লিরা তারাবিহর নামাজ পড়ে বের হয়ে আসছিলেন যখন, তখনই সন্ত্রাসীরাপথচারীদের ওপর দ্রুতগতির গাড়ি নিয়ে হামলে পড়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এখনও হামলাকারীর সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ওই গাড়ি থেকে এক সন্দেহভাজন হামলকারী চিৎকার করে বলছিল, ‘আমি সব মুসলিমকে হত্যা করতে চাই।’ সে কারণে মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ থেকেই উত্তর লন্ডনের মসজিদে হামলা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে হামলার সম্ভাব্য কারণ বলা হয়েছে ‘ইসলামবিদ্বেষ’কে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল জানায়, পুলিশ আসার আগেই হামলাকারীকে ধরে ফেলেন স্থানীয়রা। তখন ওই হামলকারী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমি সব মুসলিমকে হত্যা করতে চাই।’
ইতোমধ্যে এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে অভিহিত করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।
ফিনসবাড়ি মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ কোজবার বলেন, ‘এটা অবশ্যই সন্ত্রাসী হামলা। ম্যানচেস্টার, ওয়েস্টমিনিস্টার ও লন্ডন ব্রিজের মতো এখানেও সন্ত্রাসী হামলাই হয়েছে।’
এই ঘটনায় খুবই অবাক বলে মন্তব্য করেছেন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় আমি খুবই মর্মাহত। মসজিদ, পুলিশ ও আইলিংটন কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তিনি। ঘটনাকে ‘ভয়ংকর ঘটনা’ বলে উল্লেখ করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তিনি বলেন, ‘আহতদের ও তাদের পরিবারের পাশে আছি আমরা। ঘটনাস্থলে সবরকম জরুরি সার্ভিস নিয়োজিত আছে।
দেশটির মুসলিম কাউন্সিল একে ইসলামফোবিয়ার সবচেয়ে সহিংস বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছে। এজন্য মসজিদগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানায়, ভ্যান থামার পর তারা সন্দেহভাজন দুজনকে পালিয়ে যেতে দেখেছে। ডেইলি মেইল জানায়, জরুরি সার্ভিসের কর্মীরা আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। এসময় দুইজন সন্দেহভাজন হামলাকারী পালিয়ে গিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি।
আতিকুর রহমান নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘তিনজন ব্যক্তি ছিলো। একজনকে তারা আটক করেছে এবং বাকি দুইজনকে খুঁজছে। একজন বয়স্ক ব্যক্তি মসজিদ থেকে বের হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তার সাহায্যার্থে অন্যান্যরা এগিয়ে এলে ওই ভ্যান তাদের ধাক্কা দেয়।’
ফাবিয়ান সান্তানা নামে একজন বলেন, তিনি তার বন্ধুকে বাইরে রেখে চিকেন শপে গিয়েছিলেন। বেরিয়ে দেখেন তার বন্ধু মাটিতে লুটিয়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনায় আমি লন্ডনে আর নিরাপদ বোধ করছি না। আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই।