লন্ডনে “মিট দ্য প্রেস” অনুষ্ঠানে জামায়াত আমীরঃ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যেকটি হত্যাকান্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে
মোঃ জয়নুল আবেদীনঃ যুক্তরাজ্য সফরে থাকা জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামীলীগের বিচার অবশ্যই করতে হবে। তবে অবিচার নয়, ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে।তিনি বলেন ‘একাত্তরে জামায়াত কোনো ভুল যদি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় তাহলে আমরা জাতির কাছে ক্ষমা চাইব।’
১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াত বারবারই বলে আসছে, একাত্তরে দলটি অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে থাকলেও নেতা-কর্মীদের কেউ বাঙালি নিধন এবং যুদ্ধাপরাধে জড়িত ছিল না। জামায়াতের ভূমিকা ছিল রাজনৈতিক। রাজনৈতিক ভূমিকার জন্য জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের দায়ে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। শফিকুর রহমান লন্ডনে একই দাবি করেন।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘১৫ বছর জামায়াতকে কার্যালয়ে খুলতে দেওয়া হয়নি। কথা বলতে দেওয়া হয়নি। সভা-সমাবেশ করতে দেয়নি। এমনকি শোভাযাত্রা পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি। আমরা সাংবাদিকদের মাধ্যমে জাতির কাছেও যেতে পারিনি।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন জামায়াত আমির। তিনি বলেছেন, অভ্যুত্থানে দেশের সব শ্রেণির মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। প্রবাসীরা সাধ্য অনুযায়ী আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন।
জাতিগতভাবে অনৈক্য এবং দুর্নীতিকে দেশের জন্য জাতীয় লজ্জা বলে আখ্যা দেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য দুর্নীতি থেকে অনেকটা মুক্ত হওয়ায় মর্যাদাপূর্ণ স্থানে নিয়ে যেতে পেরেছে। কিন্তু আমরা পারিনি।
অনুষ্ঠানে প্রবাসীরা রেমিটেন্সের মাধ্যমে জন্মভূমি বাংলাদেশকে বিপুল সহায়তা করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন,আপনারা আগে পাঠাতেন ‘মনিটারি রেমিটেন্স, এখন পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক রেমিটেন্স পাঠানোর অনুরোধ করেন। ইন্টেলিজেন্স রেমিটেন্স বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে বিরাটভাবে সহায়ক হবে। এভাবেই স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে প্রবাসীরা অপরিসীম অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।’ ফ্যাসিস্ট সরকারের লাগামহীন দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে জামায়াত আমীর বলেন, যে পরিমাণ উন্নয়ন করা সম্ভব হতো, সেটা আসলে হয়নি। বাংলাদেশে একটি উন্নয়ন প্রকল্পে যে ব্যয় দেখানো হয়েছে, আমাদের অঞ্চলের অন্যান্য দেশে সে ধরণের উন্নয়ন প্রকল্প তার তিন ভাগের এক ভাগ ব্যয়েই সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের দেশে সময়মতো কোনো প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়নি, একের পর এক সময় বাড়ানো হয়েছে আর সেই সাথে বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে প্রকল্পের ব্যয়। এভাবেই দেশটাকে লুটেপুটে নিঃস্ব করা হয়েছে। জাতিগতভাবে অনৈক্য এবং দুর্নীতির কারণে আমরা আগাতে পারিনি। দূর্ণীতি আমাদের জন্য একটি জাতীয় লজ্জার বিষয়। যুক্তরাজ্য নিজেদেরকে দূর্ণীতি থেকে অনেকটা মুক্ত রাখতে পারার কারণে সারা বিশ্বে নিজেদেরকে একটা মর্যাদাপূর্ণ স্থানে নিয়ে যেতে পেরেছে। কিন্তু আমরা পারিনি। যারা সমাজ পরিচালনা করবেন তারা পরিচ্ছন্ন না হলে সমাজ পরিচ্ছন্ন হবে না।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ও বিপ্লবে অসংখ্য প্রবাসী সমর্থন দিয়েছেন, অংশ নিয়েছেন। রেমিটেন্স বন্ধ করাসহ নানাভাবে তারা অবদান রেখেছেন।
‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ইউরোপ জামায়াতে্র মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা।