লন্ডন সোনালী ব্যাংককে ৩.৩ মিলিয়ন পাউন্ড জরিমানা
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃমানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রন করেত ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের ইউকে অপারেশন, ২৪ সপ্তাহের জন্য কোনো নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ফিনান্সিয়েল কন্ডাক্ট অথরিটি (এফসিএ) ব্যাংকটিকে ৩.৩ মিলিয়ন পাউন্ড জরিমানা করেছে। খবর বিবিসির।
জরিমানার এই অঙ্ক বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৩ কোটি টাকার বেশি। এফসিএ’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কার্যক্রমের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংকের পদ্ধতিগত ‘গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতা’ ধরা পড়েছে। মুদ্রা পাচারের বড় ধরনের ঘটনা ঘটার পর বিশ্বের নানা দেশ গত কয়েক বছরে ব্যাংকগুলোর মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদারের তাগিদ দিয়ে আসছে।
বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য সোনালী ব্যাংককে জরিমানার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির মুদ্রা পাচার নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা স্টিভেন স্মিথকে ব্যাংক খাতের এই ধরনের চাকরিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্মিথকে ব্যক্তিগতভাবে ১৮ হাজার পাউন্ড জরিমানাও করা হয়েছে।
তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে সোনালী ব্যাংকের রেমিটেন্স পাঠানোর স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিবিসি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবা দেওয়া এবং রেমিটেন্স পাঠানোর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত সোনালী ব্যাংক ইউকের ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা বাংলাদেশ সরকারের, বাকি অংশের মালিক সোনালী ব্যাংক।
সোনালী ব্যাংক ইউকের তিনটি শাখা ছিল যুক্তরাজ্যে। এর একটি লন্ডনে, অন্য দুটি বার্মিংহাম ও ব্রাডফোর্ডে। তবে ব্রাডফোর্ড শাখাটি সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যায়। সম্ভাব্য মুদ্রা পাচার ঠেকাতে পদ্ধতি উন্নত করতে সোনালী ব্যাংককে ২০১০ সালে সতর্ক করেছিল এফসিএ।
কিন্তু চার বছরেও ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে ব্যর্থ হওয়ায় এই জরিমানা করা হয়েছে। বিবিসি বলছে, এক গ্রাহকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগের বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের কাছে তথ্য চেয়েছিল এফসিএ, কিন্তু সাত সপ্তাহেও সেই তথ্য পাওয়া যায়নি। যুক্তরাজ্যের ফিন্যানন্সিয়াল কনডাক্ট অথরিটি এফসিএর তদন্তে উঠে এসেছে, ওই গ্রাহকের বছরে আয় ২৮ হাজার পাউন্ড, অথচ তিনি গত ১৮ মাসে বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন ২৫ হাজার পাউন্ড, যা সন্দেহজনক। কিন্তু সোনালী ব্যাংক এর কোনো তদন্ত করেনি।
এফসিএর নির্দেশে গত ছয় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সোনালী ব্যাংকে নতুন হিসাব খোলা। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সোনালী ব্যাংক ইউকের পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সমালোচনাও করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর যুক্তরাজ্যে সোনালী ব্যাংকের যাত্রা শুরু হলেও নানা অনিয়মের কারণে ১৯৯৯ সালে এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মানি এক্সচেঞ্জে সীমাবদ্ধ ছিল ব্যাংকের কার্যক্রম।
২০০১ সালে সোনালী ব্যাংক ইউকে নামে নতুন করে যাত্রা শুরু হয়। প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী। প্রায় বছর খানেক আগে বাংলাদেশ থেকে নিয়োগ নিয়ে লন্ডনে এসে সোনালী ব্যাংক ইউকেতে যোগ দেন সারোয়ার। সোনালী ব্যাংককে নিয়ে এই পদক্ষেপে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, ব্যাংকের মধ্যে কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর দলাদলির ফল হল এটা।
আর এতে দেশের ভাবমূর্তিই ক্ষতির মুখে পড়েছে। সারোয়ার বিডনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য একক কোনো ব্যক্তি দায়ী নন। তবে ব্যবস্থাপনার বিশেষ করে ‘আইটি ক্ষেত্রে’ ঘাটতি রয়েছে। কয়েক মাস ধরে নতুন হিসাব খুলতে না পারাটা কী প্রভাব ফেলছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের ডিপোজিটর কম থাকায় তেমন প্রভাব পড়ছে না। এখানে একাউন্ট খুলতে কম লোকই আসে।” তবে বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে পসার বাড়াতে সচেষ্ট রয়েছেন বলে জানান সিইও সারোয়ার।