লিবিয়ায় নির্যাতন ইমোতে দেখিয়ে বাংলাদেশে মুক্তিপণ দাবিঃ অপহরণকারি বাঙালি
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ তুই আমারে বাঁচা ভাই। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। বলেছে, ৫০ লাখ টাকা পণ দিলে জান ফিরে পাবো। বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন সেলিম মিয়া। মোবাইল ফোনে শুধু কান্নার শব্দ। এ পাশে কাঁদতে থাকেন ভাই আরিফুলও। অনেক স্বপ্ন নিয়ে নানা প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে তার ভাই সেলিম মিয়া লিবিয়ায় যান। তার মুখ থেকে এরকম কথা শুনবেন তা কল্পনাও করেননি আরিফুল। শুধু শুনেছেন তা নয়। ইমোতে কল দিয়ে দেখানো হয়েছে দুঃসহ নির্যাতনের দৃশ্য। ছোট্ট একটি কক্ষে চোখ বেঁধে নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। খাবার প্রায় বন্ধ। পানি পান করতে চাইলে প্রস্রাব করে পান করতে বলা হয়। জোর করে তা পান করানো হয়। এভাবেই দিনের পর দিন নির্যাতন করা হচ্ছে। সেলিম মিয়া ও শাহ আলমসহ একই কায়দায় অপহরণকারী চক্র বন্দি করেছে ১০ থেকে ১২ জনকে। সেলিম মিয়া ও শাহ আলম দুজনেই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এতো টাকা দেয়ার সাধ্য তাদের নেই। সেলিমের বাঁচার আকুতি, নির্যাতন, রক্তাক্ত মুখ দেখে সহ্য করতে পারেননি তার মা-বাবা। দুজনেই পুত্রের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবা রফিকুল ইসলাম পাজরী স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দীর্ঘ চার বছর ধরে লিবিয়ায় আছেন সেলিম মিয়া ও শাহ আলম। আয়-রোজগার ভালোই করছিলেন। দরিদ্র পরিবারের ছেলে সেলিমের দিকে তাকিয়ে পুরো পরিবার। এরমধ্যেই ঘটে ঘটনাটি। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি বিকাল। প্রতিদিনের মতো কসমেটিকসের দোকানের কাজ শেষে বাসায় ফিরেন সেলিম ও শাহ আলম। বাসায় পৌঁছার কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজায় নক করে কেউ। বের হতেই তাদের জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর একটি ছোট্ট কক্ষে আটক রাখা হয়। শুরুতেই তাদের ফোন কেড়ে নেয়া হয়। বেদম মারধর করা হয় সেলিম ও শাহ আলমকে। তাদের দুজনের কাছে দাবি করা হয় এক কোটি টাকা। টাকা ছাড়া আর কোনো কথা নেই তাদের। ৮ই ফেব্রুয়ারি রাতে অপহরণের বিষয়টি জানতে পারেন সেলিম, শাহ আলমের স্বজনরা। ওই দিন রাতে সেলিম ফোনে কথা বলেন তার ভাই আরিফুলের সঙ্গে। বাঁচার আকুতি জানিয়ে সেলিম বলেন, ‘ভাইরে ওরা আমাকে ধরেছে। ৫০ লাখ টাকা না দিলে আমারে ছাড়বে না। তুই আমারে বাঁচারে ভাই। টাকা না দিলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ কি হয়েছে, কেন ধরেছে, ওরা কারা? এসব প্রশ্নের কোনো জবাব মেলেনি। তারপর লাইন কেটে যায়। এই সংবাদ জানার পর সংজ্ঞা হারান সেলিমের বাবা রফিকুল ইসলাম পাজরী ও মা সেলিনা বেগম। পুত্রকে যেভাবেই হোক বাঁচাতে হবে। কিন্তু পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার সাধ্য নেই যাদের তারা ৫০ লাখ টাকা কি করে দেবে।
পরদিন দুপুরে আবার ইমোতে ভিডিও কলে কথা বলে সেলিম। তার মুখে রক্তের দাগ। রক্ত ঝরছে মুখ থেকে। সেলিমের অভিন্ন একই আকুতি ‘ভাইরে তুই আমারে বাঁচা। জহির ভাই যেভাবে বলে সেভাবে টাকা দিবি।’ তারপরই ফোনে কথা বলে জহির। তার কণ্ঠে ভয়ঙ্কর কথা ‘৫০ লাখ টাকা দিলে তোর ভাইকে ছাড়বো। নতুবা জবাই করে ফেলবো।’
আরিফুলের কণ্ঠে শঙ্কা ‘এতো টাকা কি করে দেবো ভাই। আমরা অনেক গরিব মানুষ। ভিটেবাড়ি ছাড়া কিচ্ছু নাই।’ কিন্তু এসব কথা শুনতে রাজি না অপহরণকারী চক্রের অন্যতম হোতা জহির। এক পর্যায়ে পরিবারের আর্থিক বর্ণনা শুনে ৫০ লাখ টাকা থেকে ১৬ লাখ টাকা দাবি করে। তাতেও অপারগতা প্রকাশ করেন সেলিমের ভাই আরিফুল। বলেন, ‘বিশ্বাস করেন ভাই, আমাদের তৌফিক নাই। বাবা বর্গা চাষি। নিজের জমিও নাই। সেলিম ভাইয়ের আয়ে আমাদের পুরো পরিবার চলে। আপনারা আমার ভাইকে ছেড়ে দেন।’ জহির ক্ষেপে যায়। ভিডিও কলের মধ্যেই লোহার রড দিয়ে বেদম পেটাতে থাকে। সেলিমের কান্না তখন লিবিয়া থেকে তার পৈতৃক নিবাসে পদ্মার ওপারে ছড়িয়ে যায়। বুক ফেটে যায় স্বজনদের। চোখের সামনে তারা দেখতে পান তাদের সেলিমকে অপহরণকারীরা পেটাচ্ছে। ইলেকট্রিকের শক দেয়া হয়। আরিফুল মিনতি করেন ‘জহির ভাই। আপনার পায়ে ধরি। আমার ভাইকে মারবেন না। আমাদের সব সম্পদ বিক্রি করে সব টাকা আপনাকে দিয়ে দেব। আপনি আমার ভাইকে ছেড়ে দেন।’ জহির জানতে চায় কত টাকা দিতে পারবে। আরিফুল জানায়, বাড়ি বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা দিতে পারবে। এছাড়া তাদের কোনো সম্পদ নেই। শেষ পর্যন্ত জহিরের দাবি পাঁচ লাখ টাকা। এই টাকা দিলেই সেলিমকে ছাড়বে। অতঃপর বসতবাড়ি বন্ধক রেখে এক লাখ, স্থানীয় একটি সমিতি থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নেন। সেইসঙ্গে নিজেদের ও আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার করে টাকা সংগ্রহ করে মোট পাঁচ লাখ টাকা দেন জহিরকে। টাকা দেয়া প্রসঙ্গে আরিফুল জানান, জহিরের দেয়া বিকাশ নম্বরে ১ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া জহিরের কথামতো, ১২ই ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার এক নারীর সোনালী ব্যাংকের হিসাব নম্বরে দুই লাখ এবং চুয়াডাঙ্গার ব্র্যাক ব্যাংকের এক যুবকের হিসাব নম্বরে দুই লাখ টাকা পাঠান সেলিমের স্বজনরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গার ওই নারীর নাম সাজেদা বেগম। তিনি আলফাডাঙ্গাতেই বাস করেন। অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গার ওই যুবকের নাম লাবলু শাহ। সদরে ‘ভাই ভাই স্টোর’ নামে তার একটি দোকান রয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, এই লাবলু শাহ অপহরণকারী চক্রের হোতা জহিরের ভাই।
টাকা দেয়ার পর সেলিমকে ছেড়ে দেয়া হবে- এমনটিই ভাবছিলেন তার স্বজনরা। ফোন দিয়ে আরিফুল বলেছিলেন, টাকা তো পেয়েছেন এবার আমার ভাইকে ছেড়ে দেন। ছেড়ে দেবে বলে তখন জানায় জহির। কিন্তু না ছাড়েনি। পরদিন আবার ফোনে কথা হয় সেলিমের সঙ্গে। সেলিম কাঁদতে কাঁদতে জানায়, ‘ওরা আরো টাকা চায়। আমাকে অনেক মারধর করছে। না খেয়ে আছি। পানি চাইলে প্রস্রাব করে দেয়। জোর করে তা পান করানো হয়। টাকা না দিলে মেরে ফেলবে আমাকে।’ তারপর জহির বলে ‘আরো ১১ লাখ টাকা দিতে হবে।’ আরিফুল কাঁদতে কাঁদতে জানায়, ‘ভাই, আমাদের দেয়ার মতো কিছু নেই। কোনোভাবেই আর টাকা দেয়া সম্ভব না।’ লাইন কেটে দেয়। চোখ বাঁধা, নির্যাতনের ছবি সেন্ট করে হুমকি দেয়। কথা একটাই ‘টাকা দে, নইলে মেরে ফেলবো।’ শরিয়তপুরের সখিপুরের চরচান্দা আলীকান্দি গ্রামের সেলিম মিয়ার মতোই চক্রের বন্দিশালায় আছেন মাদারীপুর জেলা সদরের দুরাইল গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে শাহ আলম। সেলিম ও শাহ আলমকে একইসঙ্গে অপহরণ করা হয়েছে। একই অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। যখন তাদের অপহরণ করা হয় আশেপাশের লোকজন তা দেখেছে। কিন্তু কেউ জানাতে পারেননি কারা কেন তাদের অপহরণ করেছে। অপহৃত হওয়ার পর রাত ৩টায় ফোনে শাহ আলমের সঙ্গে কথা হয় তার ভাই নূর আলমের। একইভাবে নূর আলম জানান, ৫০ লাখ টাকা না হলে তাকে মেরে ফেলবে। শাহ আলমদের কোনো জমি তো দূরে থাক নিজের ভিটেবাড়িও নেই। ভাড়া বাসায় থাকেন পরিবারের সদস্যরা। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা তাদের। কিন্তু বিদেশে বিভূঁইয়ে ছেলে বন্দি। যে কোনো সময় অপহরণকারীরা মেরে ফেলতে পারে। কান্নাকাটি করে স্বজনদের কাছ থেকে এক লাখ ও ধারদেনা করে আরো এক লাখ টাকাসহ দুই লাখ টাকা জহিরের কথামতো পাঠিয়ে দেন নূর আলম। চুয়াডাঙ্গার অগ্রণী ব্যাংকের একটি হিসাব নম্বরে পাঠানো হয় এই টাকা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই হিসাব নম্বরটি চুয়াডাঙ্গার ‘ভাই ভাই স্টোরের’। দোকানটি জহিরের ভাই লাবলু শাহ’র। দুই লাখ টাকা দেয়ার পর গত ২০শে ফেব্রুয়ারি কথা হয় জহিরের সঙ্গে। জহির আরো টাকা চায়। অন্তত আরো তিন লাখ টাকা দিতে হবে। নতুবা শাহ আলমকে ছাড়বে না।
শাহ আলমের ছোট ভাই নূর আলম বলেন, ‘গরিব মানুষ। টাকা পাবো কোথায়। তাদের বুঝাতেই পারি না। শেষ পর্যন্ত বলেছি- মাইরা ফালাইলে ফালান। আর টাকা পয়সা দিতে পারবো না।’ কথা শেষ না হতেই চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন নূর আলম। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি আমার ভাইকে বাঁচাতে পারবো না? ওরা আমার ভাইকে মেরে ফেলবে।’ নূর আলম জানান, ইমোতে যখন কল দিয়েছিলো তখন তার ভাইয়ের মতো আরো অন্তত ১০-১১ জনকে দেখেছেন সেখানে বন্দি অবস্থায়। টাকা দিয়ে সেলিম ও শাহ আলমকে ফেরত না পেয়ে শরিয়তপুরের সখিপুরে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সেলিমের ভাই আরিফুল ইসলাম। এ বিষয়ে শরিয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অপরাধী যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দীর্ঘ চার বছর ধরে লিবিয়ায় আছেন সেলিম মিয়া ও শাহ আলম। আয়-রোজগার ভালোই করছিলেন। দরিদ্র পরিবারের ছেলে সেলিমের দিকে তাকিয়ে পুরো পরিবার। এরমধ্যেই ঘটে ঘটনাটি। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি বিকাল। প্রতিদিনের মতো কসমেটিকসের দোকানের কাজ শেষে বাসায় ফিরেন সেলিম ও শাহ আলম। বাসায় পৌঁছার কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজায় নক করে কেউ। বের হতেই তাদের জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর একটি ছোট্ট কক্ষে আটক রাখা হয়। শুরুতেই তাদের ফোন কেড়ে নেয়া হয়। বেদম মারধর করা হয় সেলিম ও শাহ আলমকে। তাদের দুজনের কাছে দাবি করা হয় এক কোটি টাকা। টাকা ছাড়া আর কোনো কথা নেই তাদের। ৮ই ফেব্রুয়ারি রাতে অপহরণের বিষয়টি জানতে পারেন সেলিম, শাহ আলমের স্বজনরা। ওই দিন রাতে সেলিম ফোনে কথা বলেন তার ভাই আরিফুলের সঙ্গে। বাঁচার আকুতি জানিয়ে সেলিম বলেন, ‘ভাইরে ওরা আমাকে ধরেছে। ৫০ লাখ টাকা না দিলে আমারে ছাড়বে না। তুই আমারে বাঁচারে ভাই। টাকা না দিলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ কি হয়েছে, কেন ধরেছে, ওরা কারা? এসব প্রশ্নের কোনো জবাব মেলেনি। তারপর লাইন কেটে যায়। এই সংবাদ জানার পর সংজ্ঞা হারান সেলিমের বাবা রফিকুল ইসলাম পাজরী ও মা সেলিনা বেগম। পুত্রকে যেভাবেই হোক বাঁচাতে হবে। কিন্তু পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার সাধ্য নেই যাদের তারা ৫০ লাখ টাকা কি করে দেবে।
পরদিন দুপুরে আবার ইমোতে ভিডিও কলে কথা বলে সেলিম। তার মুখে রক্তের দাগ। রক্ত ঝরছে মুখ থেকে। সেলিমের অভিন্ন একই আকুতি ‘ভাইরে তুই আমারে বাঁচা। জহির ভাই যেভাবে বলে সেভাবে টাকা দিবি।’ তারপরই ফোনে কথা বলে জহির। তার কণ্ঠে ভয়ঙ্কর কথা ‘৫০ লাখ টাকা দিলে তোর ভাইকে ছাড়বো। নতুবা জবাই করে ফেলবো।’
আরিফুলের কণ্ঠে শঙ্কা ‘এতো টাকা কি করে দেবো ভাই। আমরা অনেক গরিব মানুষ। ভিটেবাড়ি ছাড়া কিচ্ছু নাই।’ কিন্তু এসব কথা শুনতে রাজি না অপহরণকারী চক্রের অন্যতম হোতা জহির। এক পর্যায়ে পরিবারের আর্থিক বর্ণনা শুনে ৫০ লাখ টাকা থেকে ১৬ লাখ টাকা দাবি করে। তাতেও অপারগতা প্রকাশ করেন সেলিমের ভাই আরিফুল। বলেন, ‘বিশ্বাস করেন ভাই, আমাদের তৌফিক নাই। বাবা বর্গা চাষি। নিজের জমিও নাই। সেলিম ভাইয়ের আয়ে আমাদের পুরো পরিবার চলে। আপনারা আমার ভাইকে ছেড়ে দেন।’ জহির ক্ষেপে যায়। ভিডিও কলের মধ্যেই লোহার রড দিয়ে বেদম পেটাতে থাকে। সেলিমের কান্না তখন লিবিয়া থেকে তার পৈতৃক নিবাসে পদ্মার ওপারে ছড়িয়ে যায়। বুক ফেটে যায় স্বজনদের। চোখের সামনে তারা দেখতে পান তাদের সেলিমকে অপহরণকারীরা পেটাচ্ছে। ইলেকট্রিকের শক দেয়া হয়। আরিফুল মিনতি করেন ‘জহির ভাই। আপনার পায়ে ধরি। আমার ভাইকে মারবেন না। আমাদের সব সম্পদ বিক্রি করে সব টাকা আপনাকে দিয়ে দেব। আপনি আমার ভাইকে ছেড়ে দেন।’ জহির জানতে চায় কত টাকা দিতে পারবে। আরিফুল জানায়, বাড়ি বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা দিতে পারবে। এছাড়া তাদের কোনো সম্পদ নেই। শেষ পর্যন্ত জহিরের দাবি পাঁচ লাখ টাকা। এই টাকা দিলেই সেলিমকে ছাড়বে। অতঃপর বসতবাড়ি বন্ধক রেখে এক লাখ, স্থানীয় একটি সমিতি থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নেন। সেইসঙ্গে নিজেদের ও আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার করে টাকা সংগ্রহ করে মোট পাঁচ লাখ টাকা দেন জহিরকে। টাকা দেয়া প্রসঙ্গে আরিফুল জানান, জহিরের দেয়া বিকাশ নম্বরে ১ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া জহিরের কথামতো, ১২ই ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার এক নারীর সোনালী ব্যাংকের হিসাব নম্বরে দুই লাখ এবং চুয়াডাঙ্গার ব্র্যাক ব্যাংকের এক যুবকের হিসাব নম্বরে দুই লাখ টাকা পাঠান সেলিমের স্বজনরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গার ওই নারীর নাম সাজেদা বেগম। তিনি আলফাডাঙ্গাতেই বাস করেন। অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গার ওই যুবকের নাম লাবলু শাহ। সদরে ‘ভাই ভাই স্টোর’ নামে তার একটি দোকান রয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, এই লাবলু শাহ অপহরণকারী চক্রের হোতা জহিরের ভাই।
টাকা দেয়ার পর সেলিমকে ছেড়ে দেয়া হবে- এমনটিই ভাবছিলেন তার স্বজনরা। ফোন দিয়ে আরিফুল বলেছিলেন, টাকা তো পেয়েছেন এবার আমার ভাইকে ছেড়ে দেন। ছেড়ে দেবে বলে তখন জানায় জহির। কিন্তু না ছাড়েনি। পরদিন আবার ফোনে কথা হয় সেলিমের সঙ্গে। সেলিম কাঁদতে কাঁদতে জানায়, ‘ওরা আরো টাকা চায়। আমাকে অনেক মারধর করছে। না খেয়ে আছি। পানি চাইলে প্রস্রাব করে দেয়। জোর করে তা পান করানো হয়। টাকা না দিলে মেরে ফেলবে আমাকে।’ তারপর জহির বলে ‘আরো ১১ লাখ টাকা দিতে হবে।’ আরিফুল কাঁদতে কাঁদতে জানায়, ‘ভাই, আমাদের দেয়ার মতো কিছু নেই। কোনোভাবেই আর টাকা দেয়া সম্ভব না।’ লাইন কেটে দেয়। চোখ বাঁধা, নির্যাতনের ছবি সেন্ট করে হুমকি দেয়। কথা একটাই ‘টাকা দে, নইলে মেরে ফেলবো।’ শরিয়তপুরের সখিপুরের চরচান্দা আলীকান্দি গ্রামের সেলিম মিয়ার মতোই চক্রের বন্দিশালায় আছেন মাদারীপুর জেলা সদরের দুরাইল গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে শাহ আলম। সেলিম ও শাহ আলমকে একইসঙ্গে অপহরণ করা হয়েছে। একই অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। যখন তাদের অপহরণ করা হয় আশেপাশের লোকজন তা দেখেছে। কিন্তু কেউ জানাতে পারেননি কারা কেন তাদের অপহরণ করেছে। অপহৃত হওয়ার পর রাত ৩টায় ফোনে শাহ আলমের সঙ্গে কথা হয় তার ভাই নূর আলমের। একইভাবে নূর আলম জানান, ৫০ লাখ টাকা না হলে তাকে মেরে ফেলবে। শাহ আলমদের কোনো জমি তো দূরে থাক নিজের ভিটেবাড়িও নেই। ভাড়া বাসায় থাকেন পরিবারের সদস্যরা। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা তাদের। কিন্তু বিদেশে বিভূঁইয়ে ছেলে বন্দি। যে কোনো সময় অপহরণকারীরা মেরে ফেলতে পারে। কান্নাকাটি করে স্বজনদের কাছ থেকে এক লাখ ও ধারদেনা করে আরো এক লাখ টাকাসহ দুই লাখ টাকা জহিরের কথামতো পাঠিয়ে দেন নূর আলম। চুয়াডাঙ্গার অগ্রণী ব্যাংকের একটি হিসাব নম্বরে পাঠানো হয় এই টাকা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই হিসাব নম্বরটি চুয়াডাঙ্গার ‘ভাই ভাই স্টোরের’। দোকানটি জহিরের ভাই লাবলু শাহ’র। দুই লাখ টাকা দেয়ার পর গত ২০শে ফেব্রুয়ারি কথা হয় জহিরের সঙ্গে। জহির আরো টাকা চায়। অন্তত আরো তিন লাখ টাকা দিতে হবে। নতুবা শাহ আলমকে ছাড়বে না।
শাহ আলমের ছোট ভাই নূর আলম বলেন, ‘গরিব মানুষ। টাকা পাবো কোথায়। তাদের বুঝাতেই পারি না। শেষ পর্যন্ত বলেছি- মাইরা ফালাইলে ফালান। আর টাকা পয়সা দিতে পারবো না।’ কথা শেষ না হতেই চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন নূর আলম। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি আমার ভাইকে বাঁচাতে পারবো না? ওরা আমার ভাইকে মেরে ফেলবে।’ নূর আলম জানান, ইমোতে যখন কল দিয়েছিলো তখন তার ভাইয়ের মতো আরো অন্তত ১০-১১ জনকে দেখেছেন সেখানে বন্দি অবস্থায়। টাকা দিয়ে সেলিম ও শাহ আলমকে ফেরত না পেয়ে শরিয়তপুরের সখিপুরে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সেলিমের ভাই আরিফুল ইসলাম। এ বিষয়ে শরিয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অপরাধী যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।