লেবার পার্টির বিশাল জয়, ঋষি সুনাকের পরাজয় স্বীকার

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ বিবিসির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি ভূমিধস জয় পেয়েছে এবং এর অর্থ হলো স্যার কিয়ের স্টারমার দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।

নির্বাচনের ফল ঘোষণা শেষ হলে ঋষি সুনাক রাজার কাছে গিয়ে পদত্যাগ পত্র জমা দিবেন। রাজা মি. স্টারমারকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন। এসব সাক্ষাত সাধারণত বাকিংহাম প্যালেসে হয়ে থাকে।

নির্বাচনের ফল আনুষ্ঠানিকভাবে পুরোপুরি ঘোষণা শেষ হলে ঋষি সুনাক রাজার কাছে গিয়ে পদত্যাগ পত্র জমা দিবেন। রাজা মি. স্টারমারকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন। এসব সাক্ষাৎ সাধারণত বাকিংহাম প্যালেসে হয়ে থাকে।

নিজের আসনে জয়ের পর মি.স্টারমার বলেছেন ‘পরিবর্তনের সূচনা হলো এখান থেকেই..এটা আমাদের জন্য দেয়ার সময়’।

প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ইতোমধ্যেই পরাজয় মেনে নিয়ে মি. স্টারমারকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

রিফর্ম ইউকে দলের নেতা নাইজেল ফারাজ এবার প্রথম বারের মতো এমপি নির্বাচিত হলেন। এছাড়া লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিনও নিজের আসনে জয় পেয়েছেন। জর্জ গ্যালাওয়ে নিজের আসনে হেরে গেছেন।

স্কটল্যান্ডে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ডগলাস রস তার আসনে পরাজিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে জিতেছেন লিবারেল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী সিমাস লগান।

বিবিসির পূর্বাভাস মতে লেবার পার্টি ৪১০টি আসনে জয় পেতে যাচ্ছে, আর কনজারভেটিভ পার্টি পাবে ১৪৪টি আসন।

এর আগে বুথ ফেরত জরিপেও লেবার পার্টির নিরঙ্কুশ জয়ের কথা বলা হয়েছিল।

এছাড়া লিবারেল ডেমোক্র্যাটসরা ৬১টি আসন পেয়ে তৃতীয় স্থানে থাকতে পারে। এর বাইরে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির আসন কমে দশে আর রিফর্ম ইউকে পেতে পারে তেরটি আসন।

স্যার জন কারটিস এবং একদল পরিসংখ্যানবিদের তত্ত্বাবধানে করা এই বুথ ফেরত জরিপের জন্য ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের ১৩০টি ভোট কেন্দ্রের ভোটারদের কাছ থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে। উত্তর আয়ারল্যান্ড এই জরিপের আওতায় আসেনি।

গত পাঁচটি সাধারণ নির্বাচনে বুথ ফেরত জরিপের সত্যতা ছিলো ১ দশমিক ৫ থেকে সাড় সাত শতাংশ আসনের মধ্যে।

এই জরিপ সত্যি হলে এটা হবে লেবার পার্টির জন্য দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানো। দলটি যুদ্ধ-উত্তর সময়ে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বাজে ফল করেছিলো। তখন আশি আসন বেশি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলো বরিস জনসনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি।

তবে কিছু জনমত জরিপে কনজারভেটিভ পার্টির ভেসে যাওয়ার যে সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিলো সেটি সম্ভবত দলটি এড়াতে পারবে।

কিন্তু তারপরেও এটিই হবে দলের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে নির্বাচনী ফল। চৌদ্দ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২৪১ আসন হারিয়ে তারা এখন বড় ধরণের বিপর্যয়ের মুখে।

এর ফলে ২০১০ সালের পর আবারো ডাউনিং স্ট্রীটে একজন লেবার প্রধানমন্ত্রী আসছেন। অন্যদিকে কনজারভেটিভদের মধ্যে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে লড়াই হবে কারণ মনে হচ্ছে ঋষি সুনাক নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন।

কনজারভেটিভ অর্থাৎ টোরিরা লিবারেল ডেমোক্র্যাট ও নাইজেল ফারাজের রিফর্ম ইউকে পার্টির দিক থেকেও চ্যালেঞ্জের মুখে আছে কারণ এই দল দুটি আগের চেয়ে বেশী আসন পাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

টোরি থেকে রিফর্ম ইউকে পার্টিতে যাওয়া লি অ্যান্ডারসন তার নতুন দলের হয়ে প্রথমবারের মতো অ্যাশফিল্ড আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ওই আসনে দ্বিতীয় আসনে আছে লেবার পার্টির প্রার্থী।

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল স্যার রবার্ট বাকল্যান্ড হলে এবার প্রথম টোরি এমপি যিনি তার নিজের আসনে পরাজিত হয়েছেন। বিবিসিকে তিনি বলেছেন যে তার দল নির্বাচনী বিপর্যয়ের মুখে এবং লেবারদের সম্ভাব্য জয় হলো ‘পরিবর্তনের জন্য বড় ভোট’।

তিনি নির্বাচনী প্রচারণা অপেশাদারিত্ব ও বিশৃঙ্খল আচরণের অভিযোগ তুলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানসহ তার দলের কয়েকজন সহকর্মীর তীব্র সমালোচনা করেছেন।

“ব্যক্তিগত এজেন্ডা ও পদের জন্য তামাশা করা নিয়ে আমি খুব বিরক্ত,” তিনি বলছিলেন এবং টোরি নেতৃত্ব নিয়ে সামনের প্রতিযোগিতার বিষয়েও সতর্ক করেন।

লেবার পার্টির এবার ভূমিধ্বস বিজয়ের যেই সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে তাতে ১৯৯৭ সালের টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে পাওয়া আসনের চেয়ে অল্প কিছু কম হতে পারে।

দলটির রেচেল রিভস, যাকে প্রথম কোন নারী চ্যান্সেলর মনে করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন যে ‘এটা পরিষ্কার ব্রিটেনের মানুষ পরিবর্তনের জন্য এবং স্যার কিয়ের স্টারমারের নেতৃত্বে ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যতের’ জন্য ভোট দিয়েছে।

জয়ের পর দেয়া ভাষণে তিনি বলেছেন , “আমরা আপনাকে হারতে দিবো না এবং শুরু করার জন্য আমার আর তর সইছে না”।

অন্যদিকে রিফর্ম ইউকের নাইজেল ফারাজ অনুমান করে বলেছেন যে তারা ‘অনেক, অনেক আসনে’ জয়লাভ করতে যাচ্ছেন।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটসরা ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে টোরিদের ভোট কমিয়েছে , যেখানে চ্যান্সেলর জেরেমি হান্ট ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপসসহ কয়েকজন মন্ত্রী ঝুঁকিতে পড়েছেন।

দলটির নেতা স্যার এড ড্যাভি বলেছেন : “মনে হচ্ছে এক প্রজন্মের জন্য এটাই আমাদের সেরা ফল”।

দলটি কনজারভেটিভ পার্টি থেকে হ্যারোগেট ও কেনেয়ারসবরো আসন বড় ব্যবধানে ছিনিয়ে নিয়েছে।

লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা মন্ত্রী স্যার জ্যাকব রিস-মগ বলেছেন কনজারভেটিভদের জন্য এটি পরিষ্কার ভাবে একটি হতাশার রাত। তিনি বলেন দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রীট নিয়ে বরিস জনসন, লিজ ট্রাস ও মি. সুনাকের টানাটানিকে ভোটাররা সরিয়ে দিয়েছেন।

স্কটিশ ডেপুটি ফার্স্ট মিনিস্টার কেইট ফোর্বস বলেছেন তার দল একটি কঠিন রাতের মুখে কারণ বুথ ফেরত জরিপ অনুযায়ী তারা ৩৮টি আসনে হারতে যাচ্ছে।

তবে বুথ ফেরত জরিপের এমন ফল সত্ত্বেও ঋষি সুনাক বলেছেন শেষ পর্যন্ত তিনি এখনো জিততে পারেন।

স্যার কিয়ের স্টারমার
স্যার কিয়ের স্টারমার

লেবারের জন্য দারুণ রাত… কিন্তু মুসলিম ভোট

নির্বাচনে লেবার পার্টি দারুণ সাফল্য পেলেও মুসলিম ভোটের ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি।

বিবিসির চীফ পলিটিক্যাল করেসপন্ডেন্ট হেনরি জেফম্যান লিখেছেন যে লেবার পার্টির জন্য রাতটি (নির্বাচনের ফল ঘোষণার) দারুণ ছিলো। কিয়ের স্টারমারের নেতৃত্বে তারা এতো আসন পেয়েছে যা তারা ২০১৯ এর নির্বাচনে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর চিন্তাই করেনি।

কিন্তু এ সাফল্যের মধ্যেও খুঁত আছে। কারণ বড় সংখ্যায় মুসলিম ভোট আছে এমন আসনে দলটি ভালো করেনি। দশ শতাংশের বেশি মুসলিম ভোট আছে এমন আসনে দলটির ভোট কমেছে গড়ে দশ শতাংশ।

লেস্টার পূর্ব আসনে কনজারভেটিভ প্রার্থীর কাছে হারার কারণ এটাই। আবার লেস্টার দক্ষিণে শ্যাডো মন্ত্রী জনাথন অ্যাশওয়ার্থ স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছেন তার কারণও এটি।

আরও যেসব খবর আসছে তার মধ্যে আছে ফিলিস্তিন পন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী বেটলি ও ডিউজবুরি আসনে জিততে পারেন। ব্লাকবার্নেও স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতে যেতে পারেন।

ক্ষমতাসীন দলের বড় যারা হারলেন

কনজারভেটিভ দলের এক ডজনের বেশি মন্ত্রী ও সিনিয়র সদস্য নির্বাচনে হেরে গেছেন।

হাউজ অব কমন্সের নেতা পেনি মরডন্ট নির্বাচনে হেরে বলেছেন ‘গণতন্ত্র কখনোই ভুল নয়’। প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপস পার্লামেন্টে ছিলেন প্রায় বিশ বছর। তিনিও বিদায়ের পথে।

তিনি বলেছেন ‘জনগণ বিভক্ত পার্টিকে ভোট দেয় না’। ব্রেক্সিটের পক্ষে থাকা বড় নেতা জ্যাকব রিস-মগ আর এমপি নন।

সাবেক বিচার মন্ত্রী স্যার রবার্ট বাকল্যান্ড তার পার্টির অন্য নেতাদের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

স্কটিল্যান্ডে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ডগলাস রস তার আসনে পরাজিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে জিতেছেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী সিমাস লগান।

নির্বাচনী  রাতের একটি চিত্র
নির্বাচনী রাতের একটি চিত্র

ওয়েলসে কোন আসন নেই কনজারভেটিভদের

ওয়েলসে লেবার পার্টি আগের চেয়ে নয়টি আসন বেশী পেয়েছে। এখন তাদের মোট আসন ২৭।

অন্যদিকে কোন আসনই পায়নি কনজারভেটিভ পার্টি।

প্লাইড কামরির এখন পার্লামেন্টে চারটি আসন।

আর লিবারেল ডেমোক্র্যাটিকরা পেয়েছে একটি আসন।

বরিস জনসনের আসনেও পরাজয় দলীয় প্রার্থীর

বরিস জনসনের আসনে এবার জয় পেয়েছে লেবার পার্টির প্রার্থী। গত বছর তিনি এমপি পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। পরে উপনির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে আসনটি ধরে রেখেছিলো টোরি প্রার্থী স্টিভ টাকওয়েল।

এবার লেবার পার্টির ডেনি বিলস কনজারভেটিভ প্রার্থীকে হারিয়ে আসনটি জিতে নিলেন। অন্যদিকে সাবেক কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস ছয়শ ভোটে হেরে গেছেন।

দু বছরের কম সময় আগে তিনি অল্প কিছুদিনের জন্য ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

এদিকে ঋষি সুনাক ইয়র্কশায়ারে নিজের আসনে জিতেছেন। যেহেতু কনজারভেটিভ পার্টির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে জিতেছে সে কারণে মি.সুনাক পার্লামেন্টে বিরোধী দলীয় নেতা হবে।

তবে এটি নির্ভর করবে তিনি দলের প্রধান হিসেবে থাকতে চান কি-না তার ওপর।


Spread the love

Leave a Reply