শরণার্থী ও অভিবাসীদের ইউরোপের দিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে তুরস্ক
বাংলা সংলাপ ডেস্ক: শরণার্থী ও অভিবাসীদের ইউরোপে যাওয়া ঠেকাতে ইইউর সাথে তুরস্কের যে সমঝোতা হয়েছিল -আংকারা আর তা মেনে চলবে না, এ ঘোষণার পর দলে দলে লোক গ্রিস সীমান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
তুর্কী প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলছেন, ‘ইউরোপে যাওয়ার দরজা খুলে দেওয়ার পর ১৮,০০০ অভিবাসী সীমান্ত পার হয়ে ইউরোপে চলে গেছে।
তিনি বলেন, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে যারা শরণার্থী হয়েছেন তুরস্ক তাদেরকে আর জায়গা দিতে পারছে না।
তুরস্কের যোগাযোগ বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা বলেছেন, লাখ লাখ সিরিয় শরণার্থীকে তাদের দেশে আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে দেশটি যথেষ্ট সহযোগিতা পায় নি।
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুর্কী সৈন্যদের ওপর সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর রক্তক্ষয়ী এক হামলার পর তুরস্ক তাদের এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে। ইদলিব প্রদেশে চালানো ওই হামলায় তুরস্কের কমপক্ষে ৩৩ জন সৈন্য নিহত হয়।
হামলার পর সিরিয়ার মিত্র দেশ রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে এই সংঘাত আরো ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তুরস্কের এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সীমান্তবর্তী দুটো দেশ গ্রিস ও বুলগেরিয়া সীমান্তে লোকবল মোতায়েন করেছে – যাতে শরণার্থী ও অভিবাসীরা এই দুটো দেশে ঢুকতে না পারে।
কোন কোন খবরে বলা হচ্ছে, তাদেরকে ঠেকাতে গ্রিসের পুলিশ কাঁদানে গ্যাসও ব্যবহার করছে।
কেন তুরস্কের এই সিদ্ধান্ত
তুরস্কে এখনও পর্যন্ত ৩৭ লাখ শরণার্থী ও অভিবাসীকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই সিরিয়ার। এছাড়াও আফগানিস্তান থেকে আসা অনেককেও তুরস্কে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
এই শরণার্থী ও অভিবাসীরা যাতে ইউরোপে যেতে না পারে সেজন্য ই.ইউর সাথে করা এক সমঝোতার আওতায় তুরস্ক কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিল। এজন্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তুরস্ককে কিছু অর্থ সাহায্যও দিয়েছিল।
তুরস্কের টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে শরণার্থীরা পায়ে হেঁটে গ্রিস সীমান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
গ্রিসের লেসবস দ্বীপে পৌঁছাতে অনেককে তুরস্কের আরো দক্ষিণ থেকে নৌকায় উঠতেও দেখা গেছে।
গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকস মিটসোটাকিস বলেছেন, সীমান্ত এলাকায় “উল্লেখযোগ্য সংখ্যক” অভিবাসী জড়ো হয়েছে তবে কোন “অবৈধ অভিবাসীকে গ্রিসে কোনভাবেই ঢুকতে দেওয়া হবে না।”
তিনি বলেছেন, তাদের রুখতে স্থল ও জল সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হচ্ছে।
তুরস্কে যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক ফাহরেতিন আলতুন বলেছেন, অভিবাসীরা এখন শুধু তুরস্কের জন্যে নয়, ইউরোপ ও বিশ্বেরও সমস্যা।
তিনি বলেন, সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা ছাড়া তুরস্কের হাতে “আর কোন উপায় নেই।”
এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন যে সিরিয়ার শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে তুরস্ক ইউরোপের দেশগুলোর কাছ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পায় নি।
এর আগে তিনি বলেছেন, ইদলিবের যুদ্ধে নতুন করে যে দশ লাখ শরণার্থী তৈরি হয়েছে তুরস্কের ক্ষমতা নেই তাদেরকে আশ্রয় দেওয়ার।
তাদেরকে রক্ষা করার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “সেখানে উড়ান নিষিদ্ধ করে গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।”
ডিসেম্বর মাসের পর থেকে ইদলিবে অন্তত ৪৬৫ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪৫ জন শিশু। জাতিসংঘ বলছে, এদের বেশিরভাগই সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও তাদের মিত্রদের হামলায় নিহত হয়েছে।
ইদলিবে হামলা
ইদলিব সিরিয়ার একমাত্র প্রদেশ যেখানে প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরোধী বিদ্রোহীরা এখনও কিছু অংশ দখল করে আছে।
রাশিয়ার সমর্থন নিয়ে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সৈন্যরা বিভিন্ন জিহাদি গ্রুপ ও তুরস্ক সমর্থিত বিদ্রোহী গ্রুপের কাছ থেকে এই এলাকা পুনর্দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে কী করা যায় সেটা খুঁজে বের করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠকে বসতে যাচ্ছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সামরিক সংঘাত শুরু হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।”
এবিষয়ে শুক্রবার তুর্কী প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টেলিফোনে কথা বলেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বাড়তি কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে তারা দুজনেই একমত হয়েছেন।
মস্কো আরো বলেছে যে এবিষয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তারা আলোচনা করেছেন।
নেটোর মহাসচিব জেনারেল ইয়েন্স জলটেনবার্গ বলেছেন, তুরস্ককে আরো বেশি রাজনৈতিক ও বাস্তবসম্মত সাহায্য সহযোগিতা দেওয়া হবে।