শাবি’তে রাষ্ট্রপতি: বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল

Spread the love

খালেদ আহমদ, শাবি (সিলেট)

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বলেছেন, ‘পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রই এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নিজেদের শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর নতুন এই বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত যেকোন অসামর্থ্যই দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
বাংলাদেশকেও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। এরজন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নিরন্তর গবেষণা। নিত্যনতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও তার প্রসারের ওপরই নির্ভর করে দেশের সমৃদ্ধি।’

বুধবার (৮ জানুয়ারি) বিকালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
 তিনি বলেন, ‘বিশ্বায়নের এ যুগে রাষ্ট্র ও জনগণের চাহিদা মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত জ্ঞান ব্যতিত গত্যন্তর নেই। তথ্যপ্রযুক্তিতে সক্ষমতার ফলেই উন্নয়নকে আজ দেশের আপাময় জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে গ্রাজুয়েটরা আরও দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’

এদিকে, দুপুর আড়াইটায় সমাবর্তনে আমন্ত্রিত অতিথিরা আসন গ্রহণ করেন। এরপর সমাবর্তন শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৩টা ০১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য মো. আবদুল হামিদ সমাবর্তন উদ্বোধন করেন।
বিকেল সাড়ে ৩টায় সমাবর্তনের বক্তা সৈয়দ মনজুর”ল ইসলাম গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। বিকেল পৌঁনে ৪টায় রাষ্ট্রপতি গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর বুকে বুকে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নশীল একটি দেশ। দারিদ্র নিরসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে বহির্বিশ্বে দেশটি এখন রোল মডেল। বিশ্বে দ্র”ত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের ওপরে। অর্থনীতিবিদদের ধারণা ২০২৪ সাল নাগাদ এই হার হবে ১০ শতাংশের উপরে। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সময় এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাওয়ার। সময় এখন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার, পথ চলবার। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও অগ্রযাত্রায় নারী-পুর”ষ নির্বিশেষে দেশের সর্বস্তরের মানুষের অবদান খুবই প্রশংসনীয়। এ দেশের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, পরিশ্রমী, উদ্যমী, লড়াকু ও সংবেদনশীল জনগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে সফল হবে ইনশাল্লাহ।’

গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘যেকোনো দেশের উন্নয়ন ও ইতিবাচক পরিবর্তনে তর”ণ সমাজ-ই মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে থাকে। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। সুতরাং আজ তোমরা যারা গ্র্যাজুয়েট হলে, আমার সামনে এই যে তর”ণ, তোমরা এক-একটি আলোর প্রদীপ, তোমাদের সকলকে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় এগিয়ে আসতে হবে। নিতে হবে দেশ ও জাতির দায়ভার। আমি মনে করি তোমাদের মেধা ও শ্রমেই গড়ে উঠবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা।
 বিশ্ববিদ্যালয়ে কঠোর জ্ঞানতপস্যা ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে তোমরা ডিগ্রি অর্জন করেছো। তোমরা ভাল করেই জানো তোমাদের বিদ্যালাভ ও সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে যারা শক্তি, সাহস ও অর্থ জুগিয়েছেন তাঁরা হচ্ছেন এ দেশের জনগণ। তাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি জীবনব্যাপী তোমাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা জাতি প্রত্যাশা করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিচর্চা ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে প্রথম। শুধু প্রতিষ্ঠাক্রমের দিক থেকেই নয়, শিক্ষা ও গবেষণাতেও বিশ্ববিদ্যালয়টি তার শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। গবেষণা ও আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি সুনাম অর্জন করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জয় লাভ করে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের সুনাম সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয়, দেশ ও বিদেশে কর্মক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মাধ্যমেও দেশের সুনাম বয়ে আনছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত, জঙ্গি ও মৌলবাদমুক্ত, বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম-গড়ার নেপথ্যে ভূমিকা রেখে ভবিষ্যতেও তার সুনাম অক্ষুণ্ন রাখবে বলে আশা রাখেন তিনি।’ 

তিনি গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সনদসর্বস্ব জ্ঞান দিয়ে কেউ নিজের ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে না। এজন্য প্রয়োজন অন্তর্গত প্রেরণা ও সুগভীর দেশপ্রেম; দেশের জন্য অগাধ আবেগ ও অকৃত্রিম ভালোবাসা। নিজেকে, নিজের শিক্ষাকে দেশ ও দলের কল্যাণের জন্য উৎসর্গ করার মানসিকরা অর্জন করতে হবে। অর্জন করতে হবে মানবিক মূল্যবোধ। প্রথমে স্থান দিতে হবে দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থকে, যাদের শ্রমের জোরে দেশ প্রাণবান হয়, জীবনের চাকা ঘোরে; তবে অর্জিত শিক্ষা সফল হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। রাষ্ট্রপতি শিক্ষার্থীদের মেধাশক্তি ও মানবিকতা দিয়ে আগামীদিনের সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সমাবর্তন উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছিল। গুর”ত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আরও অর্ধশতাধিক অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, এসএসএফ (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স), পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। পুরা নগরীতে ছিল সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। কড়াকড়ির কারনে জনসাধারণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

এবারের সমাবর্তনে ৬ হাজার ৭৫০ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেন। এদের মধ্যে স্নাতকে ৪ হাজার ৬১৭ জন, স্নাতকোত্তরে ১ হাজার ১২৭, পিএইচডি ২ জন, এমবিবিএস ৮৭৮, এমএস ও এমডি ডিগ্রিধারী ৬ জন এবং নার্সিংয়ের ১২০ জন শিক্ষার্থী ।
২০০১-২০০২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে সর্বোচ্চ ফলাফলধারী ১২ শিক্ষার্থী ও স্নাতকোত্তরে ৮ শিক্ষার্থীসহ মোট ২০ জনকে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, অনুষদে প্রথম হওয়া ৮৯ জন শিক্ষার্থীকে ‘ভাইস চ্যান্সেলর’ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয় এই সমাবর্তনে।


Spread the love

Leave a Reply