শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ – ছাত্রলীগ যেভাবে হামলা করে …
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা আশ্বাস দেওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছাড়েনি। সহসা তারা ঘরে ফিরছে না, এটা ধরে নিয়ে সরকার কঠোর হতে যাচ্ছে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রতি সরকারের অনুরোধ ছিল, তারা সব দাবি মেনে নিয়েছে, এখন শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরাতে হবে।
বৃহস্পতিবার পঞ্চম দিন ছাত্রদের আন্দোলন নতুন রূপ ধারণ করে। কোনো কোনো এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকেরাও যোগ দেন। ঢাকার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষার্থীরা প্রতিটি যানবাহনে মেয়াদসহ লাইসেন্স আছে কি না, তা তল্লাশি করেছে। গত দুই দিন ঢাকার রাজপথ কার্যত শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, আন্দোলনের যৌক্তিকতা থাকায় এবং কৌশলগত কারণে চুপ থাকলেও চলমান পরিস্থিতিতে সরকার শক্ত অবস্থান নেওয়ার কথা ভাবছে। উল্টো পথে চলায় বা লাইসেন্স না থাকায় সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সচিব রাস্তায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া গাড়ি চালানোর দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। ছাত্রদের এই কর্মসূচি জনসমর্থন পেলেও সরকারের জন্য তা অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দিতে পুলিশকে নিষেধ করা হয়েছে। সরকার আশা করেছিল, অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তান ও শিক্ষকেরা তাঁদের ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে ঘরে ফেরাবেন। কিন্তু সারাদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেও বৃহস্পতিবার আন্দোলনের ব্যাপকতা বরং বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভাবমূর্তির সংকট তীব্র হওয়ার আশঙ্কায় সরকার আন্দোলন থামাতে কঠোর হতে যাচ্ছে। তবে সেক্ষেত্রে ঝুঁকির বিষয়গুলো মাথায় রেখে এগোতে হচ্ছে।
ছাত্র বিক্ষোভ কীভাবে বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৈঠক সূত্র জানায়, সেখানে সবাই কঠোর অবস্থানে যাওয়ার বিষয়ে একমত হন। এ সময় পুলিশকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়। শনিবার থেকে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে নামতে পারে, এমন আভাস পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিস্থিতি যেদিকে গড়িয়েছে, তাতে কঠোর অবস্থানে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। আজই শেষবারের মতো সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা হলো। এতে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প থাকবে না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের সঙ্গে স্বার্থান্বেষী মহল ও ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ ঢুকে পড়েছে। তাই সরকারের পক্ষে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই।
২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম নিহত হয়। তাদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঢাকায় চলমান ছাত্র বিক্ষোভ ঠেকাতে সরকার নানা আশ্বাস দিলেও আন্দোলনকারীরা আস্থা পায়নি। তারা লাইসেন্স পরীক্ষা করায় নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
গতকাল স্বরাষ্ট্র, নৌপরিবহন এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে জানা যায়, এই তিনটি মন্ত্রণালয়ের বেশির ভাগ কর্মকর্তার গাড়ির কাগজপত্রের মেয়াদ পার হয়ে গেছে। সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত এগুলো নবায়ন করার জন্য।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা ও পুলিশের গাড়িতে লাইসেন্সসহ সব কাগজপত্র রাখার নির্দেশ দিয়েছি। কেননা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, পুলিশের অনেক গাড়িতে প্রয়োজনীয় কাগজ নেই।’
সরকারের একাধিক মন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, এ আন্দোলন চলতে দিলে সরকার অস্তিত্বসংকটে পড়তে পারে। আবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে বলপ্রয়োগ করতে গেলে নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। সেক্ষেত্রে আন্দোলন আরও ছড়িয়ে পড়লে এবং পরিবহন শ্রমিকেরা ছাত্রদের মুখোমুখি হলে নৈরাজ্য বেড়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা।