শিক্ষায় ইংল্যান্ডের প্রতি তিন শিশুর মধ্যে একজন পিছিয়ে পড়ছে
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃবৃটেনে প্রায় প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজনের পিছিয়ে পড়ার এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এসব শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করলেও তাদের জ্ঞানের বিকাশ লাভ বা উন্নতিতে পিছিয়ে পড়ছেÑ ২০১৬ সালের সরকারী হিসাব মোতাবেক এটা জানা গেছে।
বৃটেনের শিক্ষা পরিসংখ্যান বিভাগ জানিয়েছে যে, অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ঘরের সন্তানদের মধ্যে শিক্ষা গ্রহণ, স্বাক্ষরতা ও গণিত বিষয় জ্ঞান স্তরেও পিছিয়ে পড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। ‘দি চ্যারিটি সেভ দি চিলড্রেন’ সংস্থা প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন পিছিয়ে পড়ার এ সংখ্যাকে ‘মর্মাহত’ আখ্যায়িত করেছে। কিন্তু সরকার দাবী করছেন যে, এ পরিসংখ্যান ‘কাক্সিক্ষত মান অর্জনের দিকে ক্রমবর্ধমান শিশুর সংখ্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। শিক্ষা বিভাগীয় মন্ত্রী যুক্তি প্রদর্শন করে বলেছেন যে, সুবিধাবঞ্চিত শিশু এবং তাদের সহপাঠীর মধ্যে পার্থক্য বা সম্পর্কহীনতা হ্রাস পাচ্ছে।
শিক্ষা বিভাগীয় পরিসংখ্যান জানায় যে, বৃহস্পতিবার যে সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে যে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৩১% (শতাংশ) জন শিশু ভাষা, যোগাযোগ, গণিত ও সামাজিক দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছেÑ যার সংখ্যা ২,০০,০০০ (বয়সে পাঁচ এরও কম)।
‘ যোগ্যতা অর্জন শূন্যতা বা প্রভেদ’
পরিসংখ্যান প্রদর্শন করছে যে, ৫২% শিশু যারা কি-না বিনামূল্যে খাবার প্রদানকারী বিদ্যালয় পড়–য়া তারা বাকী ৭০% ভাগ শিশুদের তুলনায় এবং বৃটেনের সার্বজনীন ৬৭% জন শিশুর মধ্যে কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে আকর্ষণীয় হল ছেলেরা মেয়েদের থেকে পিছিয়ে, এর মধ্যে ছেলেদের কাক্সিক্ষত ভাল মান অর্জনকারী হার ৬২% এবং মেয়েদের হার ৭৭%। এ সংখ্যার বিস্তারিত দিক জানাচ্ছে যে, সর্বনি¤œ ২০% শিশুর এবং মোটামুটি উন্নতি লাভকারী শিশুদের মধ্যে পার্থক্য বিগত চার বছরে যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু ‘সেভ দি চিলড্রেন’ সংস্থা বলছে যে, বহুসংখ্যক শিশুকে ‘জীবনের ভাল সূচনা’ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়ে থাকে এবং শিক্ষা পরিসংখ্যান বিভাগ এ ঘাটতি মেটানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের নিকট আহ্বান জানিয়েছে। শিক্ষা পরিসংখ্যান বিভাগ নার্সারী স্তর শিক্ষক/শিক্ষিকাকে প্রশিক্ষণ প্রদানেরও আহ্বান জানিয়েছে।
এ বছরে মাত্র ৬৫৪ জন শিক্ষক/শিক্ষিকা প্রাথমিক (পাঁচ এরও কম বয়সী) শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষাদানের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করেছেনÑ যা ১১,০০০ শিক্ষক/শিক্ষিকার পদ পূরণের জন্য অত্যধিক কম। জানিয়েছেন প্রধান নির্বাহী (চীফ এক্সিকিউটিভ) কেভিন ওয়াটকিন্স ‘এটা দুঃখজনক যে বর্তমান সময়ে ও যুগে ইংল্যান্ডে বিশেষ করে দরিদ্রতম পর্যায়ের অনেক শিশু রয়েছে যারা সময়ের আবর্তে পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ আমাদের নার্সারী স্তরের শিক্ষক স্বল্পতা দীর্ঘদিনের এবং এ স্বল্পতা সমাধানের পথ অত্যন্ত ক্ষীণ। প্রতিবছর হাজার হাজার শিশু এ ধরনের নার্সারী শিক্ষায় প্রশিক্ষিত শিক্ষক ছাড়াই বিদ্যালয়ে প্রবেশ করছে এবং পূর্ণ বাক্য বলা, মৌলিক শিক্ষা অর্জন এবং গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষা রপ্ত করতে নিরন্তন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে’।
মি. ওয়াটকিন্স সতর্ক করে বলেছেন, ‘যে সব শিশু পিছিয়ে পড়া অবস্থায় বিদ্যালয় জীবন শুরু করেছে তারা সমগ্র জীবনে পিছিয়ে থাকতে পারে কারণ তাদের বাকী স্কুল জীবন, তাঁদের কর্মসংস্থান প্রাপ্তির ক্ষেত্র এমনকি তাদের ভবিষ্যৎ বা বৈবাহিক জীবনের সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রগুলোতে সমূহ বাঁধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে পারে।’
‘ভুল অগ্রাধিকারসমূহ’
লিবারেল ডেমক্র্যাট নেতা টি ক্যারন অভিযোগ করেছেন যে, “সরকার এ বিষয়ে পরিসংখ্যানের ‘কমবেশ বা অতিরঞ্জন’ ঘটিয়েছে। সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে যেসব অগ্রাধিকার দিচ্ছে এগুলোর সমুদয় ‘ভুল’ এবং আমরা ন্যূনতম ফল লাভে ব্যর্থ হচ্ছি।” বলেছেন মি. ক্যারন, ‘যেখানে সরকার ২৪০ মিলিয়ন পাউন্ড ঢেলে দিচ্ছে শ্রেণী বিভাজনকারী গ্রামার স্কুলগুলোতে সেখানে শত শত হাজার হাজার দরিদ্র স্তরের শিক্ষার্থীকে পিছিয়ে রাখছে’। দি ডিএফই মুখপাত্র বলেছেন, ‘এটা আমাদের নিকট পরিষ্কার যে উচ্চ গুণ ও মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং সকল শিশুকে তাঁদের প্রতিভা প্রকাশের সর্বোত্তম সুযোগ প্রদান করতে হবে। আমরা বদ্ধপরিকর যে আমাদের গুণগত উন্নয়ন সাধন করতে হবে। এটা এজন্য যে আমরা শিশু শিক্ষার প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে যোগ্যতম ও উত্তম শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োজিত রাখতে আরও অনেক কিছু করছি। আমরা রেকর্ড পরিমাণে ছয় বিলিয়ন পাউন্ড প্রতিবছর শিশু শিক্ষা পরিচর্যা-২০২০’ অর্জনে ব্যয় করছি।