শুধু বয়স্ক নয়, তরুণরাও করোনাভাইরাসে মারাত্মক আক্রান্ত হতে পারে
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে যে তরুণরা করোনাভাইরাসের ঝুঁকির বাইরে নয় এবং সামাজিক মেলামেশা বা যোগাযোগের মাধ্যমে এই ভাইরাস বয়স্কদের মধ্যে ছড়ানোর বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত তাদের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব টেড্রোস ঘেব্রেয়েসাস বলেছেন তরুণদের পদক্ষেপ ‘আরেক ব্যক্তির জীবন ও মৃত্যুর পার্থক্য’ গড়ে দিতে পারে।
ভাইরাসের প্রকোপে বয়স্ক ব্যক্তিদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি হওয়ার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গাতেই তরুণদের মধ্যে এই ভাইরাস সম্পর্কে কম সতর্ক থাকার প্রবণতা দেখা দেয়ার প্রেক্ষিতে এই কথা বলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান।
সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি মানুষ এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মারা গেছে। প্রায় ৩ লাখ মানুষের মধ্যে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
শুরুতে যেরকম ধারণা করা হচ্ছিল যে করোনাভাইরাসের কারণে বয়স্ক ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন, নতুন কয়েকটি পরিসংখ্যান প্রকাশিত হওয়ার পর সেই ধারণা পাল্টানোর সময় এসেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
নতুন পরিসংখ্যান
যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস আক্রান্তদের প্রাথমিক তথ্য উপাত্ত নিয়ে করা পরিসংখ্যানে উঠে আসে যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তরুণদের ঝুঁকিও কম নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ঐ পরিমাণ পরীক্ষা করা হচ্ছে না যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে এই ভাইরাসে আসলে কে সংক্রমিত হচ্ছে এবং কীভাবে এটি তাদের ক্ষতি করছে।
আগের পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা হচ্ছিল তরুণদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তরুণদের মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যতটুকু মনে করা হচ্ছিল তা তারচেয়ে বেশি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ২ হাজার ৫০০ জন করোনাভাইরাস আক্রান্তের তথ্য পর্যালোচনা করা হয় প্রতিবেদনটি তৈরিতে। সেখানে দেখা যায় ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে যাদের হাসপাতালে নিতে হয়েছে তাদের ২০% এর বয়স ২০ থেকে ৪৪ এর মধ্যে – আর ৩৮% এর বয়স ২০ থেকে ৫৪ বছরের মধ্যে।
এটি সত্যি যে যারা কোভিড-১৯ এর কারণে মারা গেছেন তাদের সিংহভাগই বয়স্ক।
বৈশ্বিক হিসেবে ৮৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সী যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের প্রায় ১৫% মারা গেছেন। ৪০ বছরের কম বয়সী আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই হার ০.২%।
তবে এর মানে এই নয় যে তরুণরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হচ্ছেন না।
সিডিসি’র রিপোর্টে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে বিশ এবং ত্রিশের কোঠায় বয়স যাদের, তারা যে হারে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন তা ৫০ বা ৬০ এর কোঠায় থাকা মানুষের হাসপাতালে যাওয়ার হারের চেয়ে খুব একটা কম না।
নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন হচ্ছে কাদের?
সিডিসি’র প্রতিবেদনে উঠে আসে যে তরুণদের মধ্যে বড় একটা অংশকে হাসপাতালে নিতে হলেও তাদের খুব কম সংখ্যককেই নিবিড় পরিচর্যায় বা আইসিইউতে নিতে হয়েছে।
কিন্তু ঐ সংখ্যাটা অল্প হলেও তা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ ফেলে।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত ইতালির সরকারি তথ্য থেকে দেখা যায় যে আইসিইউ’তে ভর্তি হওয়া ১২% রোগীর বয়স ১৯ থেকে ৫০ এর মধ্যে। ফ্রান্সের পরিসংখ্যানেও তরুণদের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়ানোর হার বেশি হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
কিন্তু এই ধরণের তথ্য সম্পর্কে সন্দিহান হওয়ার অবকাশও রয়েছে।
অন্য অনেক দেশের মতই যুক্তরাষ্ট্রেও করোনাভাইরাসের পরীক্ষা তিনটি বিশেষ ধরণের ক্ষেত্রে করা হয়েছে – যারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত একা থেকে এসেছেন এবং অসুস্থতার লক্ষ্মণ প্রকাশ করেছেন, করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া কারো সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির এবং যাদের মধ্যে উপসর্গগুলো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
এই তথ্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে সংগ্রহ করা হয়েছে, কাজেই এই তথ্য বিভ্রান্তিকর চিত্র প্রকাশ করতে পারে এবং আসলে কোন বয়সের মানুষের ওপর কতটুকু প্রভাব ফেলছে সেসম্পর্কে সঠিক চিত্র নাও প্রকাশ করতে পারে।
হার্ভার্ডের টিএইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক মার্ক লিপসিচ আশঙ্কা প্রকাশ করেন এখন পর্যন্ত তরুণদের মধ্যে ভাইরাসের উপসর্গ সীমিত আকারে দেখা গেলেও এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
তবে এখন পর্যন্ত সব দেশ থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করেই দেখা যায় যে ১৯ বছরের কম বয়সী মানুষ ভাইরাসের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিতভাবে জানে না এরকম হওয়ার কারণ কী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে?
জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর সপ্তর থেকে এক অনলাইন নিউজ কনফারেন্সে সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস ঘেব্রেয়েসাস বলেন: “বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তরুণরা যে নিরাপদ, তা নয়।”
“তরুণদের প্রতি আমার একটি বার্তা রয়েছে। আপনারা সম্পূর্ণ নিরাপদ নন। ভাইরাস আপনাদের কয়েক সপ্তাহের জন্য হাসপাতালে থাকতে বাধ্য করতে পারে, এমনকি এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে।”
“আপনারা যদি অসুস্থ নাও হন, আপনারা কোথায় যাচ্ছেন সেই সিদ্ধান্ত আরেকজনের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।”
ইতালিতে কোভিড-১৯ রোগে মারা যাওয়া মানুষের গড় বয়স সাড়ে ৭৮ বছর।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী চীনে করোনাভাইরাসের কারণে মারা যাওয়া ৫০ বছরের কম বয়সী মানুষের হার ১% এর চেয়েও কম।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এখন সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতার বদলে ‘ফিজিক্যাল ডিসট্যান্সিং’ বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহামারি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মারিয়া কেরখোভ রয়টার্সকে বলেন, “আমরা চাই মানুষ যেন যোগাযোগ রক্ষা করে।
“আমরা চাই ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষ যেন যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। কারণ এই মহামারি পরিস্থিতিতে আপনার শারীরিক অবস্থা ঠিক রাখার মত সমান গুরুত্বপূর্ণ আপনার মানসিক অবস্থা ঠিক রাখা।”