শেখ হাসিনার মিথ্যাচারঃ সেন্টমার্টিন দ্বীপ নেয়ার বিষয়ে কখনোই কোন আলোচনা হয়নি- মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর
ডেস্ক রিপোর্টঃ সেন্টমার্টিন দ্বীপ নেয়ার বিষয়ে কখনোই বাংলাদেশের সাথে কোন ধরনের আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
সোমবার পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি এই তথ্য জানান।
সেখানে ম্যাথিউ মিলারের কাছে একজন প্রশ্নকর্তা জানতে চান, “সম্প্রতি একটি সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন যে, দেশটির ক্ষুদ্র একটি দ্বীপ সেন্টমার্টিন নিতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং বিএনপি এই দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিল। সেটা না দেয়ায় তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে”।
ম্যাথিউ মিলারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্র কি আসলেই এই ক্ষুদ্র দ্বীপটি নিতে চায় নাকি এটি ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে? সেন্টমার্টিন দ্বীপটাই বা কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে?
এর উত্তরে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘’আমি শুধু বলবো, এই তথ্য সঠিক নয়। আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব সম্মান করি এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপ নেয়ার বিষয়ে আমরা কখনোই কোন ধরনের আলোচনা করিনি। বাংলাদেশের সাথে আমাদের অংশীদারিত্বকে আমরা গুরুত্ব দেই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থন জানানোসহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে আমাদের এই সম্পর্কে আমরা আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি।‘’
কাতার ও সুইৎজারল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে গত ২১শে মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘’আমি এতটুকু বলতে পারি, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা, আমার হাত থেকে এই দেশের কোনও সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চাই না। ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। আর এখনো যদি আমি বলি, ওই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেব, তাহলে আমাদের ক্ষমতায় থাকতে কোনও অসুবিধা নেই। আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটি হবে না।‘’
কিন্তু কাকে লিজ দিলে ক্ষমতায় থাকতে অসুবিধা হবে না, সেই প্রসঙ্গে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা তখন বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল কীভাবে? তখন তো গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। তাহলে এখন তারা দেশ বিক্রি করবে? নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে আসতে চায়?’
সম্প্রতি বাংলাদেশে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এই মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে আমেরিকা বাংলাদেশের কাছে ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চায়’ এবং সেজন্যই তারা আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের উপর নানাভাবে চাপ তৈরি করছে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরীক দল জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা সংসদে কথা বলেছেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ নিয়ে মন্তব্য করেন।
আরেকটি প্রশ্নে ম্যাথিউ মিলারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির সদস্যদের কাছে যে ছয়জন কংগ্রেস সদস্য চিঠি পাঠিয়েছেন, তাদের বাংলাদেশের শত্রু বলে বর্ণনা করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী”।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ‘ওই বক্তব্যের’ বিষয়ে সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়।
জবাবে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘’আমি ওই চিঠিটি দেখিনি। এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করার আগে আমাকে পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।‘’
মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের ঐ চিঠিতে আহ্বান জানানো হয়েছিল যে, সাধারণ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে যেন শান্তিরক্ষী মিশনে সদস্য নেয়া না হয়।
এরপর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয় যাচাই-বাছাই করার জন্য ১২ই জুন একটি বিবৃতিতে আহ্বান জানিয়েছিল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
গত ২৩শে জুন বাংলাদেশ সফরে আসেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রধান) জাঁ পিয়ের লাক্রোয়া।
ঢাকায় কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ডিক্যাবের একটি অনুষ্ঠানে রোববার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কাছে জানতে চাওয়া হয়, মি. লাক্রোয়ার সফরে তার সঙ্গে এসব প্রসঙ্গে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা?
বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলোয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, তখন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ১০ বছর ধরে কাজ করছে। যেখানে ১৬৯ জন জীবন দিয়েছেন। এই অর্জনকে যারা খাটো করে দেখছেন, ব্যর্থ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, তারা বাংলাদেশের বন্ধু নন, শত্রু। তারা কংগ্রেসম্যান, নাগরিক, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী যে-ই হোন, তারা শত্রু। তাদের যারা টাকা দিয়ে প্রভাবিত করেছেন, তারাও যে বাংলাদেশের শত্রু, এটা চেনার সময় এসেছে। এটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার কোনও কারণ নেই। এগুলো অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের বিষয়।‘’