শেয়ার লেনদেনে কারসাজির অভিযোগে সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা
মাঠে সময়টা ভালো যাচ্ছে না সাকিব আল হাসানের। চোখের সমস্যার পর আঙ্গুলের চোট পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলছে। মাঠের বাইরেও নানা কারণে নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হচ্ছেন টাইগার অলরাউন্ডার। সরকারের পটপরিবর্তনের পর হত্যা মামলারও আসামি হয়েছেন সাকিব। এবার শেয়ার লেনদেনে কারসাজির অভিযোগে তাকে বড় অঙ্কের জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিসিসিআই)। প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে কারসাজির দায়ে সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গতকাল বিএসইসি’র পরিচালক ও মুখপাত্র ফারহানা ফারুকীর পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানা যায়। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিএসইসি’র চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে কমিশনের ৯২৩তম সভায় সাকিবকে জরিমানার সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে কারসাজির মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করেছেন সাকিব। তাই তাকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর আগে গত ২৮শে আগস্ট কমিশন সভায় শুভেচ্ছাদূতের পদ থেকে তাকে বাদ দেয় (বিএসইসি)। সেবার সংস্থাটি জানিয়েছিল, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ছিলেন বিএসইসি’র ‘দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম’র শুভেচ্ছাদূত। ২০১৭ সালে এ কার্যক্রমে তাকে যুক্ত করে বিএসইসি। একই বছর অক্টোবরে রাজধানী শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয় বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে সাকিবকে পরিচয় করে দেন সে সময়ের চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন। ২০২০ সালে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়ত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে পুনর্গঠন করা হয় বিএসইসি। তবে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে বহাল রাখা হয় সাকিবকে। শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাকিব আল হাসানসহ একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর হয়ে শেয়ারবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আবুল খায়ের হিরু। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা বিও (বেনিফিসিয়ারি ওনার্স) হিসাব ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটান। আবুল খায়ের হিরু ছিলেন বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের সরাসরি ছাত্র। এ কারণে শিবলী রুবাইয়াত বিএসইসি’র চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি বিশেষ আনুকূল্য পেতেন। এমনকি অনেক শেয়ারের কারসাজির সঙ্গে হিরুর জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও এসব কারসাজির ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে তদন্তের উদ্যোগ নেননি। কখনো কখনো তদন্তের পর ব্যবস্থা গ্রহণে ধীরগতির কৌশল অবলম্বন করেন। শেয়ারবাজারে সাকিব আল হাসানের বিনিয়োগ ও কারসাজির বিষয়টি কয়েক বছর ধরে বেশ আলোচনায় ছিল। তবে এতদিন তাকে কোনো জরিমানা বা শাস্তি দেয়নি বিএসইসি। সাকিব আল হাসান ছিলেন বিএসইসি’র বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের দূত। গত ৫ই আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএসইসি’র পক্ষ থেকে সাকিব আল হাসানকে বিশেষ দূত থেকে বাদ দেয়া হয়। এরপর কারসাজির দায়ে তাকে আজ জরিমানা করা হলো। গত কয়েক বছরের মধ্যে শেয়ার কারসাজির দায়ে সাকিব আল হাসানকে এটিই প্রথম জরিমানার ঘটনা। বিএসইসি জানিয়েছে, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে সর্বোচ্চ জরিমানা করা হয়েছে ইশাল কমিউনিকেশনকে। প্রতিষ্ঠানটিকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই দায়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে ক্রিকেটার ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানকে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে আবুল খায়ের হিরুকে। এ ছাড়া আবুল খায়ের হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতলুবকে ১০ লাখ টাকা, হিরুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্টকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর বাইরে লাভা ইলেকট্রোডস ও জাহিদ কামালকে ১ লাখ করে মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।