সময় বৃদ্ধি নাকি চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ?

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃব্রেক্সিটের অচলাবস্থা নিরসনে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের বৈঠকের পর এখন দুটি সম্ভাবনা নিয়ে বেশ জোরেশোরে আলোচনা হচ্ছে—বিচ্ছেদের সময় পিছিয়ে কাঙ্ক্ষিত সমাধান খোঁজার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে; নাকি আগামী ২৯ মার্চ নির্ধারিত দিনে চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদ কার্যকর হয়ে যাবে।

দীর্ঘ আড়াই বছরের চেষ্টার পর গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সেই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করার কারণে ব্রেক্সিট নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দুই দফায় আস্থা ভোটে পার পাওয়া প্রধানমন্ত্রী মে ব্রেক্সিট সংকটের সমাধান খুঁজতে চুক্তি প্রত্যাখ্যানকারীদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করছেন।

বৈঠকে লিবারেল ডেমোক্র্যাটস, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এসএনপি), প্লাইড কামরি এবং গ্রিন পার্টির নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে বিচ্ছেদের সময়সীমা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। এসব দল ব্রেক্সিট নিয়ে পুনরায় গণভোটের পক্ষে। তারা অনেকটা একই সূরে বলেছে, ২৯ মার্চের মধ্যে ব্রেক্সিটের কাঙ্ক্ষিত সমাধান খোঁজা সম্ভব হবে না। তাই আগে বিচ্ছেদের সময়সীমা স্থগিত বা বৃদ্ধি করা উচিত। অন্যথায় চুক্তি ছাড়াই ইইউ থেকে ছিটকে পড়ার পরিণাম দেশের জন্য ধ্বংসাত্মক হবে।

এদিকে বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিন তাঁর শর্তে অটল থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যাননি। তিনি চুক্তিহীন বিচ্ছেদের সম্ভাবনার কথা বাতিল করার শর্ত দিয়েছিলেন। সংসদেও সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতা চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের বিপক্ষে।

কিন্তু গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তিনি ইইউর কাস্টমস ইউনিয়নে থাকা কিংবা পুনরায় গণভোট আয়োজনের বিষয়টিও প্রয়োজনীয় মনে করেছেন না।’

অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিনকে লেখা এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইইউর সঙ্গে নির্ধারিত আলোচনার শর্ত অনুযায়ী চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। কেননা ওই শর্তে বলা হয়েছে, চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থ হলেও ২৯ মার্চ বিচ্ছেদ কার্যকর হবে।

এ ছাড়া বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজ দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এদের মধ্যে ছিলেন প্রভাবশালী রাজনীতিক ওয়েন পিটারসন, ইয়ান ডানকান স্মিথ, ডেভিড ডেভিস, মার্ক ফ্র্যানকোইস ও স্টিভ বেকার। বৈঠক হয় সরকারের শরিক দল ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) নেতা অ্যারলেন ফোস্টারের সঙ্গেও। এঁরা সবাই ব্রেক্সিটপন্থী। কিন্তু সরকারের সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন। আয়ারল্যান্ড সীমান্ত নিয়ে বিতর্কিত ধারা বাদ দিলে তাঁরা চুক্তিতে সমর্থন দেবেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এরা আবার ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়ানোরও বিরোধী।

তবে ক্ষমতাসীন দলের ব্রেক্সিট-বিরোধী এমপি নিক বোলস বলেছেন, বিচ্ছেদের সময় বাড়ানোর জন্য তিনি সংসদে বিল উত্থাপন করেছেন। তিনি দাবি করেন, ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সাংসদদের ক্ষমতা খর্ব করতে চাইলে মন্ত্রিসভা থেকে অন্তত ২০ জনের পদত্যাগের ঘটনা ঘটবে।

আগামী সোমবার সংসদে বিকল্প ব্রেক্সিট চুক্তি উত্থাপন করবেন থেরেসা মে। সাংসদরা এতে সংশোধনী প্রস্তাব আনতে পারবেন। এসব সংশোধনী প্রস্তাব থেকে সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবে। এরপর ২৯ জানুয়ারি চূড়ান্ত বিকল্প প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের প্রস্তুতি বাবদ সরকার যে অর্থ বরাদ্দ রেখেছে, তার ২০ শতাংশ ইতিমধ্যে খরচ করেছে সরকারি দপ্তরগুলো। শুল্ক ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় সরকারি দফাগুলোর কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী গেভিন উইলিয়ামসন বলেছেন, চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় সাড়ে তিন হাজার সেনা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে ইইউ সদস্যভুক্ত বাকি দেশগুলোও চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুতি ত্বরান্বিত করেছে। বৃহস্পতিবার ফ্রান্স সরকার জানিয়েছে, তারা অতিরিক্ত ৬০০ কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে।

নতুন কোনো সমঝোতা না হলে মাত্র ৬৯ দিন পরই ইইউ থেকে ছিটকে পড়বে যুক্তরাজ্য।


Spread the love

Leave a Reply