সারাদেশে ‘শাটডাউন’, সংঘর্ষ চলছে , শুক্রবার ৬ জন নিহত

Spread the love

ঢাকায় শুক্রবার দুইজন নিহত: ডিএমপি

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ফারুক আহমেদ বিবিসিকে বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিক্ষোভকারীদের পুলিশের সংঘর্ষে শুক্রবার ঢাকায় দুইজন নিহত হয়েছেন। এদের একজন যাত্রাবাড়ীতে এবং অপরজন ঢাকার রামপুরায়। এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নিজেদের কার্যালয়ে সমাবেশ করতে পারবে। এর বাইরে ঢাকার অন্য কোন স্থানে সমাবেশ ও মিছিল করা নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি।

পল্টন, বিজয় নগর ও আশপাশের এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ

ঢাকার পল্টন, বিজয় নগর ও আশপাশের এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। শুক্রবার সকাল থেকেই এসব এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। দুপুরে নাইটিঙ্গেল মোড় এলাকায় গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখতে পান বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা। ভেতরে এগিয়ে গিয়ে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন দেখা গেছে। এসময় বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কি এলাকা থেকে মুহুর্মুহু ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। বায়তুল মোকাররম মসজিদ সংলগ্ন এলাকা ঘিরে বিভিন্ন স্থানে ও গলিতে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান দেখা গেছে। সমগ্র এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাস্তাঘাটে ভাঙা ইট, গাছের ডাল, বিজ্ঞাপনী বোর্ড পড়ে আছে। পুলিশ দফায় দফায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। এখানে বেশ কিছু আন্দোলনকারী ও পুলিশ আহত হয়েছেন। অনেকেই আশেপাশে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানতে পেরেছে বিবিসি বাংলা। তবে আহতের সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনার জন্য সরকার অপেক্ষা করছে : আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনার জন্য সরকার অপেক্ষা করছে। “আমি নিশ্চিত তারাও বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছেন যে তারা আলোচনায় আসবেন কী না। তারা যখন যে সময় আলোচনায় আসতে চান আমরা তখনই আলোচনায় বসতে রাজি আছি। ” আন্দোলকারীদের সাথে সরকারের তরফ থেকে সরাসরি কোন যোগাযোগ করা হয়েছে কী না? বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “সরাসরি যোগাযোগ করার তো প্রশ্ন আসে না। মিডিয়ার মাধ্যমে সে বার্তা দেয়া হয়েছে। এটা তো আমরা পাবলিকলি বলে দিয়েছি।” আন্দোলনকারীরা সরকারের আলোচনার আহবান ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে সংঘাতও অব্যাহত আছে। এখন পর্যন্ত ৩২ জন নিহত হবার খবর নিশ্চিত করেছে বিবিসি বাংলা। এরমধ্যে মঙ্গলবার ৬ জন, বৃহস্পতিবার ২৫ জন এবং শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত একজন নিহত হয়েছে। সংঘাতের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “ এটা দুঃখের, নো ডাউট অ্যাবাউট ইট (এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই)। এটা অত্যন্ত দুঃখের। আমি এখনো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই সহিংসতা কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা করে নাই। এটা আমার বিশ্বাস হয়না।” আন্দোলনকারীরা বলছেন, পুলিশ অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে তাদের হঠিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। “পুলিশ গতকাল কোন শক্তি প্রয়োগ করে নাই। যখন নাশকতা হয় তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তব্যই হচ্ছে নাশকতা বন্ধ করা,” বলেন আইনমন্ত্রী। পুলিশ শক্তি প্রয়োগ না করলে বৃহস্পতিবার এতো মানুষ নিহত হলো কেন? এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “ আমি এই ফিগারের (সংখ্যা) সাথে ঐকমত্য পোষণ করতে পারছি না। পুলিশ কালকে কোন গুলি চালায় নাই, পুলিশের গুলিতে কেউ নিহত হয় নাই।”

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুলিশের ওয়েবসাইট হ্যাকড

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং পুলিশের ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে। ‘দ্য রেজিসটেন্স’ নামে একটি গোষ্ঠি দুটি ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

ওয়েবসাইট দুটিতে কালো ব্যানারে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে বার্তা লেখা রয়েছে ‘শিক্ষার্থী হত্যা বন্ধ করুন’।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট

বাড্ডা-রামপুরার সংঘর্ষে অন্তত একজন নিহত

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে রামপুরা-বাড্ডা এলাকায় চলমান সংঘাত-সংঘর্ষে শুক্রবার অন্তত একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিকটস্থ ফরায়েজী হাসপাতালের ব্যবস্থাপক রুবেল হোসেন বিবিসি বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেলা দেড়টার দিকে আন্দোলনকারীরা ওই এলাকায় জড়ো হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট এবং টিয়ারশেল ছোঁড়ে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে। মি. হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত তাদের হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শতাধিক ব্যক্তি চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের জায়গা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে হাসপাতাল চত্বরে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।

রুহুল কবির রিজভী আটকের দাবি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে প্রেস ক্লাবের ভেতর থেকে পুলিশ আটক করেছে বলে দাবি করেছে দলটি।

দলটির চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দীন দিদার বিবিসিকে একথা জানিয়েছেন।

তবে বিবিসি ঢাকা মহানগর পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি।

শুক্রবার বিকেল তিনটায় প্রেসক্লাবে বিএনপির জাতীয় ঐক্য সমাবেশ এবং মিছিল করার কর্মসূচি ছিল। ওই কর্মসূচি এখন হবে কী না তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি বিএনপি নেতৃবৃন্দ।

ঢাকায় সব ধরণের সভাসমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি

ঢাকা মহানগর এলাকায় সব ধরনের মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ডিএমপি। ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বিষয়টি বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে কিছু সংখ্যক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢুকে পড়ছে এবং জনগণের জান-মালের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করছে। তাই জনগণের জান-মাল রক্ষার্থে ঢাকায় সব ধরনের মিছিল সমাবেশ নিষিদ্ধ করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

গুলশান-বাড্ডা-নতুনবাজারে সংঘর্ষের যে চিত্র দেখলেন বিবিসি বাংলার সংবাদদাতারা

শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা লিঙ্ক রোডে থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিকেল সাড়ে চারটায়ও বিবিসি সংবাদদাতারা সেখানে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হতে দেখেছে। আন্দোলনকারীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাড্ডার বিভিন্ন গলি থেকে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ থেমে থেমে তাদের দিকে টিয়ারশেল, রাবারবুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকে। আন্দোলনকারীদের মধ্যে নানা বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষ দেখা গেছে। তাদের অনেকে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় ছিলেন। কেউ ছবি তুলতে চাইলে বাধা দিতে দেখা যায় তাদের। পুলিশ প্লাজার দিক থেকে গুলশান-১ এর সড়কের দিকে আন্দোলনকারীকে জড়ো হতে গেছে। তাদের ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করতে দেখা যায়। এসময় তাদের সঙ্গে কিছু সংখ্যক স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীদের যোগ দিতে দেখা গেছে। বেলা পাঁচটার দিকে আমেরিকান অ্যাম্বেসির সামনে যায় বিবিসি বাংলার একটি টিম। সেখানে তিনদিক থেকে আন্দোলনকারী ও পুলিশ সদস্যদের সাংঘর্ষিক অবস্থানে দেখা গেছে। অ্যাম্বেসির উল্টো পাশে ভাটারা থানা অতিক্রম করে কিছু দূরেই পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ চলতে দেখা যায়। এসময় সেখানে কিছু সংখ্যক নারী পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। নতুনবাজারের দিকে রাস্তাও আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি ছিল। সেখানে ক্রমাগত টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়তে দেখা যায় পুলিশকে। বিপরীত পাশে বাড্ডার দিকে সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে বিপরীতমুখী অবস্থানে দেখা যায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের। সেখানে বিজিবির দুটি আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) নিয়ে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় ছিল পুলিশ। গোটা প্রগতি সরণিতে ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে। পুড়ে যাওয়া অন্তত ৩টি গাড়ি ও ৪টি মোটরসাইকেল দেখতে পেয়েছে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতারা। সমগ্র প্রগতি সরণিজুড়ে সড়কে স্থানে স্থানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। পড়ে ছিল গাছপালা ও ধাতব সড়ক বিভাজক। এ সময় জরুরি কাজে বের হওয়া পথচারীদের বিপাকে পড়তে দেখা যায়। এক বৃদ্ধ চা বিক্রেতার সাথে কথা হয় বিবিসি বাংলার সংবাদদাতার। তিনি হাঁটতে পারেন না বলে অ্যাম্বেসির সামনে রাস্তার ওভারব্রিজের নিচে বসে ছিলেন। পুলিশ সদস্যরা তাকে বারবার সেখান থেকে চলে যেতে বলছিলেন। মোহাম্মদ সোবহান নামের এই বৃদ্ধ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমি হাঁটতে পারলে এহানে বসে থাকতাম বাবা? এই অশান্তি হইবো তো আমি জানতাম না। তোমাগো কাকিরে পাঠিয়ে দিছি। আমি রিকশা না পেলে ক্যামনে যাই?” এই এলাকায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে ক্লান্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই পুলিশ সদস্যরা সংঘর্ষে তাদের বেশ কয়েকজন সহকর্মী আহত হওয়ার কথা জানান।

পল্টন শান্তিনগর রণক্ষেত্র

ঢাকার পল্টনে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে। একই সাথে শান্তিনগর মোড়ে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এদিকে গত কয়েকদিন রেল চলাচল বন্ধ থাকায় রেলস্টেশনে অপেক্ষমাণ মানুষদের দেখা যায়।

রামপুরা বনশ্রীতে নিহত তিনজন

সকাল থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে বিকেলে ঢাকার বনশ্রীতে অন্তত তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ৩০০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বনশ্রীর ফরাজি হাসপাতালের ম্যানেজার রুবেল হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিকেল পর্যন্ত তিনজন মারা গেছে। অন্তত ২০০ গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির চিকিৎসা দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ”। তিনি জানান, আরো অন্তত একশোরও বেশি গুলিবিদ্ধ আন্দোলনকারী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন, কিন্তু চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ না থাকায় তাদের পাশের অ্যাডভান্স হাসপাতাল ও আল রাজী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মি. রুবেল বলেন, রাস্তায় আন্দোলনকারীর বাইরে বনশ্রীর একটি বাসায়ও একজন নারী গুলিতে আহত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সকাল থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বনশ্রী ও রামপুরার রাস্তায় দেখা যাচ্ছিলো।


Spread the love

Leave a Reply