ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ফারুক আহমেদ বিবিসিকে বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিক্ষোভকারীদের পুলিশের সংঘর্ষে শুক্রবার ঢাকায় দুইজন নিহত হয়েছেন। এদের একজন যাত্রাবাড়ীতে এবং অপরজন ঢাকার রামপুরায়। এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নিজেদের কার্যালয়ে সমাবেশ করতে পারবে। এর বাইরে ঢাকার অন্য কোন স্থানে সমাবেশ ও মিছিল করা নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি।
পল্টন, বিজয় নগর ও আশপাশের এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ
ঢাকার পল্টন, বিজয় নগর ও আশপাশের এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। শুক্রবার সকাল থেকেই এসব এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। দুপুরে নাইটিঙ্গেল মোড় এলাকায় গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখতে পান বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা। ভেতরে এগিয়ে গিয়ে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন দেখা গেছে। এসময় বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কি এলাকা থেকে মুহুর্মুহু ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। বায়তুল মোকাররম মসজিদ সংলগ্ন এলাকা ঘিরে বিভিন্ন স্থানে ও গলিতে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান দেখা গেছে। সমগ্র এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাস্তাঘাটে ভাঙা ইট, গাছের ডাল, বিজ্ঞাপনী বোর্ড পড়ে আছে। পুলিশ দফায় দফায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। এখানে বেশ কিছু আন্দোলনকারী ও পুলিশ আহত হয়েছেন। অনেকেই আশেপাশে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানতে পেরেছে বিবিসি বাংলা। তবে আহতের সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনার জন্য সরকার অপেক্ষা করছে : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনার জন্য সরকার অপেক্ষা করছে। “আমি নিশ্চিত তারাও বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছেন যে তারা আলোচনায় আসবেন কী না। তারা যখন যে সময় আলোচনায় আসতে চান আমরা তখনই আলোচনায় বসতে রাজি আছি। ” আন্দোলকারীদের সাথে সরকারের তরফ থেকে সরাসরি কোন যোগাযোগ করা হয়েছে কী না? বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “সরাসরি যোগাযোগ করার তো প্রশ্ন আসে না। মিডিয়ার মাধ্যমে সে বার্তা দেয়া হয়েছে। এটা তো আমরা পাবলিকলি বলে দিয়েছি।” আন্দোলনকারীরা সরকারের আলোচনার আহবান ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে সংঘাতও অব্যাহত আছে। এখন পর্যন্ত ৩২ জন নিহত হবার খবর নিশ্চিত করেছে বিবিসি বাংলা। এরমধ্যে মঙ্গলবার ৬ জন, বৃহস্পতিবার ২৫ জন এবং শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত একজন নিহত হয়েছে। সংঘাতের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “ এটা দুঃখের, নো ডাউট অ্যাবাউট ইট (এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই)। এটা অত্যন্ত দুঃখের। আমি এখনো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই সহিংসতা কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা করে নাই। এটা আমার বিশ্বাস হয়না।” আন্দোলনকারীরা বলছেন, পুলিশ অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে তাদের হঠিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। “পুলিশ গতকাল কোন শক্তি প্রয়োগ করে নাই। যখন নাশকতা হয় তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তব্যই হচ্ছে নাশকতা বন্ধ করা,” বলেন আইনমন্ত্রী। পুলিশ শক্তি প্রয়োগ না করলে বৃহস্পতিবার এতো মানুষ নিহত হলো কেন? এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “ আমি এই ফিগারের (সংখ্যা) সাথে ঐকমত্য পোষণ করতে পারছি না। পুলিশ কালকে কোন গুলি চালায় নাই, পুলিশের গুলিতে কেউ নিহত হয় নাই।”
বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুলিশের ওয়েবসাইট হ্যাকড
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং পুলিশের ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে। ‘দ্য রেজিসটেন্স’ নামে একটি গোষ্ঠি দুটি ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
ওয়েবসাইট দুটিতে কালো ব্যানারে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে বার্তা লেখা রয়েছে ‘শিক্ষার্থী হত্যা বন্ধ করুন’।