সিলেটে জীবন বাঁচার লড়াই, কে কোথায় আছেন জানেন না স্বজনরা, পর্যাপ্ত নয় সেনা সহায়তা
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ চরম দুর্দিন। বিপর্যস্ত অবস্থা। থমকে গেছে সিলেট। বৃষ্টি আর উজানের তীব্র বেগে আসা ঢল থামছেই না। মহা বিপদে সিলেট। সারাদেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নেই। খাবার সঙ্কট। অভুক্ত মানুষ। জীবন বাঁচানোর জন্য লড়াই। সরকারের আন্তরিকতার অভাব। সেনা সহায়তা খুবই কম। পর্যাপ্ত সেনা সহায়তা বাড়ানো এক্ষনি দরকার।
এ লড়াই থামবে কবে- এ প্রশ্ন সবার। তিন দিন ধরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। রাস্তায় পানি। দোকানপাট বন্ধ। স্কুল, কলেজ সব বন্ধ। জরুরি সেবাও হুমকির মুখে। সবাই বন্যায় আক্রান্ত। কে কারে করবে সহায়তা। এমন কঠিন বিপর্যয়ের মুখে এর আগে কখনো পতিত হয়নি সিলেট।
শনিবার পানি বেড়েছে এক থেকে দেড় ফুট। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ঢল ও টানা বর্ষণের কারণে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ। এই অবস্থায় আর কী বা করা আছে। হাল ছেড়ে দিয়েছেন অনেকেই। নেটওয়ার্ক নেই। মোবাইল বন্ধ। বিদ্যুৎ নেই। একে অন্যের খবর পাচ্ছেন না। কে কোথায় আছেন জানেন না স্বজনরা। মহা দুশ্চিন্তা স্বজনদের নিয়ে। পেঠে খাবার নেই। এতে চিন্তাও নেই। জীবন বাঁচাতে এখন চলছে লড়াই। প্রাণান্তর লড়াই। আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ। নিরাপদ আশ্রয়ের স্থানও পাওয়া যাচ্ছে না।
১৫ই জুন রাত থেকে সিলেটে নামতে শুরু করে উজানের ঢল। এর আগে থেকে সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছে। সিলেটের প্রধান আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরীর তথ্যও আরো শঙ্কা জাগায়। তার মতে- একুশ জুন পর্যন্ত সিলেটে বর্ষণ হবে। সেই সঙ্গে বর্ষণ হবে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্বরপুর, তাহিরপুরের উজানে মেঘালয়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভারী বৃষ্টি হওয়ার আভাস মিলছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যও সত্য। ভারী বর্ষণ হচ্ছে। প্রবল বেগে সীমান্ত এলাকা দিয়ে ঢল নামছে। নদী তীরবর্তী এলাকায় ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রলয়ঙ্কারী বন্যা। সেই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায়ও হচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে- সিলেটের চারটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে বিয়ানীবাজারের শ্যাওলা। ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হলেও সিলেটে ও কানাইঘাটে সুরমা এবং সারি নদীর পানি বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও বন্যার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন। এতে করে আরো শঙ্কা বাড়ছে। আর পানি বাড়লে সিলেট নগরের মধ্যঞ্চল পর্যন্ত পানি ঢুকে যাবে। এতে করে এক তৃতীয়াংশ এলাকা হয়ে পড়বে জলমগ্ন।
রাত নামলেই দুশ্চিন্তা বাড়ে বন্যার্তদের। শনিবার রাতেও ভারী বর্ষণ হচ্ছিলো সিলেট নগর সহ সীমান্তবর্তী ৬-৭টি উপজেলায়। ফলে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তাভাজ দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের কপালেও। কোথায় গিয়ে থামবে পানি- সেটি এখন আন্দাজেরও বাইরে। এখনো বহু মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে পারেনি। নানা গুজবের ডালপালা মেলছে বন্যার্ত এলাকায়। ঢলের তোড়ে বাড়িঘরের পাশাপাশি মানুষও ভেসে যাওয়ার খবর আসছে। কিন্তু কোনো সঠিক তথ্য নেই কোথাও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে পড়ায় সব খবরই অজানা থেকেই যাচ্ছে।
তবে- সিলেটের প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সহ সবারই এখন একটাই উদ্দেশ্যে উদ্ধার কাজ চালানো। এবং সেটিই করা হচ্ছে। উদ্ধার কাজে সবচেয়ে বেশি মনযোগী হয়ে উঠেছেন। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার বিষয়টিও মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে। বন্যার পানিতে সব একাকার। এ কারণে মানুষজনকে উদ্ধার করতে ৫০ জনের ডুবুরীও আনা হয়েছে সিলেটে। উদ্ধার কাজ শেষ হলেই জোরেশোরে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তবে- এখন দুর্গম এলাকার পানিবন্দি মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার পৌছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।