সিলেটে লন্ডন প্রবাসী নারীর শেষ বিদায়
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ সিলেটে আইসোলেশনে থাকা লন্ডন ফেরত প্রবাসী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি শুক্রবার সিলেটে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে তাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়। রোববার দুপুরের দিকে আইইডিসিআরের তরফ থেকে তার রক্তের নমুনা পরীক্ষা করার জন্য সংগ্রহ করার কথা ছিল। স্থানীয়ভাবে কিট সংকট থাকার কারণে তাকে ভর্তির পরপরই পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। গতকাল ভোররাত ৪টার দিকে মারা যান ওই নারী। সিলেটের শামীমাবাদ আবাসিক এলাকায় ওই মহিলায় বাড়ি। তিনি লন্ডনে থাকেন।
গত ৪ঠা মার্চ সিলেটের বাড়িতে আসেন। বাড়িতে এলেও তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন না। ফলে ১০ দিন আগে তার শরীরে জ্বর দেখা দেয়। এ সময় তিনি সর্দিকাশিতেও ভুগেন। এ কারণে তাকে প্রথমে বেসরকারিভাবে চিকিৎসক দেখানো হয়। এতেও তার শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন না ঘটায় ওসমানী হাসপাতালে নেয়া হলে সেখান থেকে আইসোলেশনের জন্য নির্ধারিত শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে ওই হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার ইউনূসুর রহমান ওই মহিলার মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে সকালে ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন- শুক্রবার দুপুরে ভর্তি হয়েছিলেন লন্ডন প্রবাসী ওই নারী। তার বয়স ৬১ বছর। হাসপাতাল থেকে আইইডিসিআরকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। রোববার তার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ভোরে মারা যান তিনি। পরিচালক জানান, মারা যাওয়া মহিলা করোনা আক্রান্ত ছিলেন কি না- তা জানা যায়নি। তবে সকালেই আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা সিলেটে এসেছেন। তারা নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় ফিরে যাবেন। সেখানে পরীক্ষার পর জানা যাবে ওই মহিলা করোনা আক্রান্ত কি না। তবে লন্ডন ফেরত ওই মহিলা সর্দিজ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীনও তার সর্দিজ্বর ছিল। আইসোলেশনে থাকা রোগীর মৃত্যুর খবর শুনে সকালে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ছুটে যান সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমময় মণ্ডল। তিনি জানিয়েছেন- এই রোগী করোনা আক্রান্ত কিনা- নিশ্চিত না হওয়া গেলেও সংশ্লিষ্টরা সতর্ক রয়েছেন। তিনি বলেন, যেহেতু ওই মহিলা বাসায় ছিলেন। তার বাসায় আরো মানুষজন ছিলেন। তাদের সবাইকে এখন কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তারা যাতে সাধারণের সঙ্গে না মিশেন সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে মহিলার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। দু’দিন পর জানা যাবে তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন না। এদিকে দুপুরে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ওই মহিলার লাশ পরিবার ও সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কফিনে মধ্যে ভালো করে প্যাকেজিং করে লাশ হস্তান্তর করা হয়। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, লাশ পাওয়ার পর সকল নিয়ম মেনে সেটি সিলেটে হযরত মানিকপীর (রহ.) কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার আগে পরিবারের স্বজনরা মিলে জানাজার নামাজ পড়েন। এদিকে সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মারা যাওয়া প্রবাসী মহিলা করোনা আক্রান্ত কিনা- সেটি জানা সম্ভব হয়নি। এর কারণ করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কিট সিলেটে নেই। এখন পর্যন্ত যারা সিলেটে আইসোলেশনে আছেন আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা ঢাকা থেকে রক্তের নমুনা ঢাকায় নিয়ে গেছেন। এরপর সেখান থেকে পরবর্তীতে রেজাল্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা বলেন, রোগীকে হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে আইসোলেশনে ছিলেন মোট ৪ জন। এর মধ্যে ৩ জন নারী ও একজন পুরুষ। গতকাল মারা গেছেন এক নারী। এখন আছেন ৩ জন। ১৬ই মার্চ ভর্তি হওয়া লন্ডন প্রবাসী আরো এক নারী এখনো ভর্তি আছেন। তার রক্তের নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। প্রবাসীর সংস্পর্শে এসেছেন এরকম আরো এক নারীকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে। প্রবাসীর সংস্পর্শে আসা গোয়াইনঘাট উপজেলার এক কিশোর এখনো আইসোলেশনে। তার শারীরিক অবস্থা ভালো বলে জানান তিনি।