সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় দেশে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসীরা
মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম :প্রায় ৬ বছর ধরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ থাকায় যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাংলাদেশীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এ অবস্থায় অনেক প্রবাসী পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমানও হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। কুয়াশার অজুহাত দেখিয়ে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় বিমান। এরপর প্রবাসীরা এ নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন। প্রবাসীদের দাবির মুখে প্রায় বছর তিনেক পর লন্ডন-সিলেট সরাসরি ফ্লাইট চালু হলেও সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট এখনও বন্ধ রয়েছে।
যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সিটিতে প্রায় ৫ লাখ নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশী (এনআরবি) রয়েছেন। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎসহ বিভিন্ন ছুটিতে তারা দেশে আসতে চান। কিন্তু সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেশে আসতে পারেন না।
যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম এলাকায় বসবাসকারী আমিনুর রশিদ জানান, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে আগস্টের শেষদিকে তিনি দেশে আসেন। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও চার সন্তান। আসার সময় তারা লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেটে আসেন। কিন্তু ফেরার সময় তাদের পোহাতে হয় যত দুর্ভোগ। সিলেট থেকে ট্রানজিট বিমানে তাদের আগের দিন বিকালে ঢাকায় নেয়া হয়। রাতে তাদের অবস্থান করতে হয় হোটেলে। পরদিন তাদের ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাই করতে হয়। দুই-তিনবার বিমানে ওঠানামা করতে গিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে তাদের পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালু থাকলে তাদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হতো না বলে মন্তব্য করেন এ প্রবাসী।
যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডের ইনভারনেস এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোবারক আলী জানান, সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় তিনি সম্প্রতি এমিরেটসের ফ্লাইটযোগে দেশে আসেন। এমিরেটসে ঢাকায় নেমে তাকে সিলেটে আসতে হয়। ফেরার সময় ঢাকা হয়ে তাকে গন্তব্যে যেতে হবে বলে জানান তিনি। যুক্তরাজ্যের কেন্ট এলাকার বাসিন্দা ও প্রবাসী কমিউনিটি নেতা আলহাজ এম এ আহাদ জানান, সিলেট-লন্ডন বিমানের একটি জনপ্রিয় রুট। এ রুটে ভ্রমণ করতে সিলেটের প্রবাসীদের আগ্রহ ব্যাপক। কিন্তু সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় বয়োবৃদ্ধ প্রবাসী এবং শিশুদের দুর্ভোগের সীমা থাকছে না। গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল ইন ইউকে’র সাউথইস্ট রিজিওনের ট্রেজারার সুফি সুহেল আহমদ অবিলম্বে সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় এ নিয়ে প্রবাসীরা আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সফরে আসা লন্ডনের বেথনাল গ্রিন ও বো আসন থেকে নির্বাচিত এমপি ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য দূত রুশনারা আলিও সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সরাসরি ফ্লাইট চালুর পাশাপাশি বিমানবন্দরের আনুষঙ্গিক সুযোগা-সুবিধা বৃদ্ধি করা গেলে বাংলাদেশে প্রবাসী বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে জানান তিনি।
সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে সিলেট বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন-সিলেট, জেদ্দা-সিলেট এবং দুবাই-সিলেট ফ্লাইট অপারেট হচ্ছে। এছাড়া সিলেট থেকে ‘ফ্লাই দুবাই’র ফ্লাইট যাতায়াত করে। সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালু না থাকার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরকে দেশের তৃতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নীত করা হয়। কিন্তু রিফুয়েলিং ব্যবস্থা না থাকায় বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর কোনো উড়োজাহাজের ফ্লাইট ওসমানীতে অবতরণ করেনি। প্রবাসীদের দাবির মুখে ২০১৫ সালে প্রায় ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত হয় রিফুয়েলিং স্টেশন। গেল বছর থেকে এ রিফুয়েলিং স্টেশন চালুও হয়। এছাড়া প্রথম দিকে এখান থেকে যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চললেও ২০১১ সালে কুয়াশার অজুহাত দেখিয়ে তা বন্ধ করে দেয়া হয়।