সোনার হরিণ ধরতে এসে প্রবাসীরা করোনায় কুপোকাত !
গরিবী হটানোর জন্য মার্তৃভূমি ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রবাসীরা এসেছিল সাত সাগরের ওপারে । বিদেশ বৈভূবে পেয়েছে সোনার হরিণ । তাই প্রবাসীরা সোনার হরিণের পিছনে দিয়েছে দাওয়া । বরফগলা টান্ডায় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে দেশে গড়েছেন সম্পদ । স্বাধীনতা যুদ্ধে দিয়েছেন রক্ত । দেশ গড়ার জন্য দিয়েছেন অজশ্র টাকা । দেশের চাকা সচল রাখতে পাঠিয়েছেন রেমিটেন্টস । প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হয়েছেন শরিক । অনেকের ছিল কত স্বপ্ন, কত পরিকল্পনা । কিন্তু নিয়তি করে দিয়েছে সব ওলটপালট । আচমকা অদৃশ্য ঘাতক করোনাভাইরাস দিয়েছে হানা । লাখ লাখ সবের মিছিলে প্রবাসীরা হতভম্ব । করোনার যাতাকলে বিলাতে জনজীবন আতংকীত । করোনা সংক্রমনের আশংকায় সবাই সন্ত্রস্ত । ব্যাবসা বানিজ্য বন্ধ রেখে কর্মহীন অবস্হায় মরণের ভয়ে সবাই ঘরবন্দি । তারপরেও গরজ বড় বালাই বলে একটা কথা আছে না । বেঁচে থাকার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় এবং নানাবিদ জরুরী কাজে আমাদেরকে বেরুতেই হয় । যদিও মরণ থেকে বাঁচার জন্য মুখে মাস্ক ( উফা )পরে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হয় । পথ চলাচলে যাদের সাথে দেখা হয় তাদের সকলের চেহারায় থাকে আতঙ্কের চাপ । কে কাকে সম্ভাশন করবে । তাদের মনের ভাব দেখে মনে হয় কে যেন তাদেরকে পিছুধাওয়া করছে । সবার মাঝে একটা দূঃশ্চিন্তা, অস্হিরতা ভাব । আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী বা প্রতিবেশী ও পরিচিতজনের অকাল মৃত্যুতে সবাই বাকরুদ্ধ । ঘরে বন্দি থেকে আপনজন হারানোর শোকে সবাই কাতর । সবার মুখে ইয়ানাফসি ইয়ানাফসি । আমাদের আহাজারী কেউ শুনেনা । একমাত্র মহান সৃষ্টি কর্তাই অবগত এবং তাহার উপরই ভরসা । আপনজন হারানোর ব্যাথার কোন উপশম নেই । ফলে পরস্পরকে সমবেদনা জানানো ও দোয়া করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমিত রোগীর চাপে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসভূক্ত হাসপাতালে সমূহ বিপর্য্যস্ত হয়ে পড়েছে । অন্যান্য ব্যাধীতে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই । হার্ট এ্যাটাকের মুমূর্ষ রোগীর বাসা থেকে ৯৯৯ বা ১১২ কল পেলে এ্যাম্বুলেন্স গিয়ে প্যারামেডিকরা বাসাতেই চেকআপ করে প্রয়োজনীয় জরুরী চিকিৎসা সেবাদান করে । এতেও যদি কাজ না হয় তখন সুজা হাসপাতালে । যাদের হায়াত আছে বা ভাগ্য ভাল তারা ইনপেসেন্ট হিসাবে চিকিৎসা সেবা পেতে পারে । রোগীর চাপে হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের ত্রাহি-ত্রাহি অবস্হা । হাসপাতাল ছাড়া নিয়মিত ডাক্তার GP বা সাধারণ প্র্যাক্টিশনারদের সাথে সাক্ষাতে দেখা করারও কোন সুযোগ নেই ।ডাক্তারদেরকে অনলাইনে ব্যাধির কথা বলতে হয় ।প্রেসক্রিপন দেয়া হয় অনলাইনে । সার্বিকভাবে চিকিৎসা ব্যাবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে । এমনি দূঃসহ পরিস্হিতিতে সবার স্বপ্ন, ভূতভবিষ্যত পরিকল্পনা মূখ থুবরে পড়েছে । অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে সবাই হতাশ । একা একা শুধূ মুখে বিরবির করে আপন মনে নিজের সাথে কথা বলে সময় পার করছেন । হিসাব মিলছে না কারো । তাই প্রবাসীরা মানষিক ও অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্য্যস্ত । সবাই ভোগছেন অবসাদ ও উদ্যমহীনতায় ।এই বিপর্য্যস্ত পরিস্হিতিতে আমরা যারা বিভিন্ন ভাবে কমিউনিটিকে সাহায্য, সহযোগীতা ও মানবিক কাজে নিজের খেয়ে বনের মূষ তাড়ানোর কাজে নিয়োজিত ছিলাম তারাও পরিস্হিতির ভয়াবহতায় কিংকর্ত্যবিমূঢ় । তারপরও অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফোনে সংক্রমিত রোগীর পরিবারের কাছে খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে । প্রয়োজনে রোগীর পরিবারের পক্ষে রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ডাক্তার ও হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা তদবীর করা হয় । এমনকি যে সকল করোনা ভিকটিম পরিবারে কোন পূরুষ নেই বা বার্ধক্ষ্যতার কারনে পরিবারে জরুরী ভিত্তিতে খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ঘরে ঘরে পৌছে দেবার চেষ্টাও সমাজকর্মীরা অব্যাহত রেখেছে । দূর্ভাগ্যজনক ভাবে যারা অকালে শাহাদাতবরন করেন তাদের অনেকের ডেথ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে ফিউনারেল সার্ভিসের সাথে যোগাযোগ করে দাফনকাকার্য্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে সমাজকর্মীরা সদা প্রস্তুত । এছাড়া ভার্চ্যুয়াল মিটিং এর মাধ্যমে সমাজসেবকগণ বাংলাদেশী সমাজ সহ কমিউনিটিকে স্বাস্হ্যবিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি ও মানষিক মনোবল বৃদ্ধি করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন ।
লকডাউনে বেকারত্বের অভিশপ্ত বন্দী জীবনে আতংকগ্রস্ত অবস্হায় সময় কাটানো দূরহ ব্যাপার । দূঃসহ যন্ত্রনায় ঘূম নেই । তাই রাত জেগে সোনার হরিণের পিছনে যারা দাওয়া করেছিল এবং যে রেমিটেন্টস উপার্জনকারীগণ স্বদেশ বির্নিমানে রেখে যাচ্ছেন অবদান তাদেরসহ মানবজীবনের ভয়ানক ট্রেজেডির কিছু বাস্তব অঁভিজ্ঞতা ফেইসবুক বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলাম।