স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার উদ্যোগ শুরু করেছেন নিকোলা

Spread the love

30087_Stergeonsবাংলা সংলাপ ডেস্কঃব্রেক্সিট ‘ভূমিকম্পের’ পর নতুন করে স্কটল্যান্ডকে স্বাধীন করার নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জেন। স্বাধীনতায় বিশ্বাসী কিনা এমন হাজার হাজার মানুষের কাছে ‘স্বাধীনতার ক্ষুধা’ আছে কিনা তা জানতে চাইবে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি)। ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে এ কাজটি করা হবে। ।  এ ঘোষণা দিয়েছেন এ দলের নেতা নিকোলা স্টার্জেন। তবে সরকারের এমন উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা দ্য স্কটসম্যান পত্রিকায় এ নিয়ে একটি চিঠি লিখেছেন। তাতে নিকোলা স্টার্জেনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, গণভোট নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে। তাদের আশঙ্কা, আবার গণভোট দিলে তাতে অর্থনৈতিক বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে। এ ইস্যুতে কথা বলেছেন, রাজনৈতিক নেতারাও। স্কটিশ কনজার্ভেটিভ পার্টির নেতা রুথ ডেভিডসন বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংক্রান্ত গণভোটকে ব্যবহার করে আরও বেশি বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন নিকোলা। ইইউ সংক্রান্ত গণভোটকে ব্যবহার করে আরও বেশি বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তিনি। ডেভিডসন আরও বলেছেন, গণভোটের উত্তেজনা বা বিতর্ককে আবারও উস্কে দিয়ে স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যতকেই মেঘাচ্ছন্না করা হচ্ছে। এটা করা হচ্ছে এমন এক সময়ে যখন আমাদের সরকারের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার দিকে আরও বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বৃটেন যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজছে তখন নিকোলার ঘোষণা রাজনৈতিক আরও জটিল সমস্যা সৃষ্টি করবে। নিকোলা বলেছেন, মাত্র দু’বছর আগে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রশ্নে ভোট হয়। তাতে শতকরা ১০ ভাগ ভোটের ব্যবধানে দেশটির স্বাধীনতা অর্জন হয় নি। তার মাত্র দু’বছরের মাথায় জুনে ব্রেক্সিট ভোট নিয়ে বিতর্ক এক নাটকীয়তায় উপনীত হয়েছে। শুক্রবার স্টার্লিংয়ে এক বৈঠকে বক্তব্য রাখেন নিকোলা। স্টার্লিং হলো সেই জায়গা যেখানে ১২৯৭ সালে ইংলিশদের বিরুদ্ধে স্কটিশরা ঐতিহাসিক যুদ্ধ করেছিল। সেখানে এসএনপি দলের এমপিদের উদ্দেশে নিকোলা স্টার্জেন বলেন, একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আমরা কি আমাদের গন্তব্য নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করবো নাকি অন্যদের করুণাময় সিদ্ধান্তের ওপর সবসময় ভর করে চলবো? এর মধ্য দিয়ে তিনি বৃটেনের দিকে খোঁচা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। উল্লেখ্য, স্কটল্যান্ডে এখন জনসংখ্যা ৫৩ লাখ। তার মধ্যে কমপক্ষে ২০ লাখ স্কটিশের মতামত সংগ্রহের জন্য এসএনপি সময় নিয়েছে আগামী ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত। এ সময় তারা নতুন করে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রশ্নে এসব মানুষের মতামত সংগ্রহ করবে। জরিপ, সরাসরি বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব মতামত সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্য দিয়ে নির্ধারণ করা হবে কখন কিভাবে আরেকটি গণভোট আহ্বান করা হতে পারে। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে যখন ‘কন্টকাকীর্ণ’ ব্রেক্সিটের ফল ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন তখন স্কটল্যান্ডের এ পরিস্থিতি তাকে গোলমেলে অবস্থায় ফেলে দেবে। গত ২৩শে জুন ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোট হয়। স্কটিশরা কিন্তু এ ভোটে ব্রেক্সিটের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। তারা চেয়েছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেই থাকার জন্য। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার জন্য শতকরা ৬২ ভাগ মানুষ ভোট দিয়েছিলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন মাত্র শতকরা ৩৮ ভাগ মানুষ। এসএনপি বলেছে, স্কটিশ ভোটারদের কাছে মূল ফ্যাক্টর হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ। তবে স্কটল্যান্ডের ব্যবসায়ী নেতারা এ বিষয়ে দ্বিতীয়বার চিন্তা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন নিকোলা স্টার্জেনের প্রতি। তারা দ্য স্কটসম্যান পত্রিকায় একটি চিঠি লিখেছেন এ উপলক্ষে। তাতে তারা বলেছেন, নতুন করে স্বাধীনতার প্রচারণা শুরু করায় স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যত অল্প সময়ের জন্য অনিশ্চয়তায় পড়ে যেতে পারে। কারণ, এখন ক্ষুদ্র ও বড় ব্যবসায়ীরা সরকারের সব পর্যায় থেকে স্থিতিশীলতা খুঁজছে।
এসব সমালোচনায় কান দিতে চান না নিকোলা। তিনি বলেছেন, সিঙ্গেল মার্কেট হলো স্কটল্যান্ডের জন্য একটি রেড লাইন। এই গ্রীষ্মে আমরা একটি ‘ভূমিকম্প’ পরিবর্তন দেখেছি। এর গভীর একটি প্রভাব পড়বে আমাদের দেশের প্রত্যাশার ওপর। ২৩শে জুনের আগের বৃটেন মৌলিক অর্থেই পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাই তিনি স্কটল্যান্ডের সবচেয়ে ভাল হয় এমনটা নিয়েই লন্ডনের সঙ্গে সমঝোতা চালিয়ে যাবেন। তিনি আরও বলেন, যখন দেখবো আমাকে কিছুই নিশ্চিত করে দেয়া হচ্ছে না। তখন স্বাধীনতাকে সমর্থন করাই হবে উত্তম। সেটা করা হবে যদি দেখা যায় এটাই উত্তম এবং আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এটাই একমাত্র পন্থা। তবে ব্রেক্সিট নিয়ে এরই মধ্যে বৃটেন ও স্কটল্যান্ডের অর্থনীতিতে এক ধরণের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় স্কটল্যান্ড স্বাধীনতার পথে হাঁটবে এমনটা নিয়ে সন্দিহান অনেকে। তবে কোন সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে নিকোলা স্টার্জেন বলেছেন, এসএনপির একটি স্পেশাল কমিশন স্বাধীনতা বিষয়ক কর্মসূচিতে কাজ করবে। তাদের উদ্দেশ্য থাকবে অর্থনীতিকে বিস্তৃত করা। আর্থিক ঘাতটি কমিয়ে আনা ও অর্থনৈতিক কৌশল নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। উল্লেখ, মার্চে স্কটল্যান্ডের আর্থিক ঘাতটি ছিল ৯.৫ ভাগ। পুরো বৃটেনের তুলনায় তা দ্বিগুণেরও বেশি। এর কারণ, তেলের দর পতন। ওদিকে এ সপ্তাহে ইউগভের পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে এখনও স্কটল্যান্ডের বেশি মানুষ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার পক্ষে। তারা হলেন শতকরা ৫৩ ভাগ। আর ব্রেক্সিটের পক্ষে রয়েছেন ৪৭ ভাগ। ওদিকে শুক্রবার দ্য টাইমস পত্রিকায় ইউগভের আরেকটি জরিপ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার পক্ষে শতকরা ৫৪ ভাগ স্কটিশ। এর বিপক্ষে রয়েছেন শতকরা ৪৬ ভাগ।


Spread the love

Leave a Reply